ঘটনার এক সপ্তাহ পর রোববার দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে পুলিশ জানায়।
নিহত কাউসার আলম চৌধুরী তৈমুর (৪৫) ফেনী পৌরসভার নাজির রোড এলাকার ‘স্বপ্ন কুঠির’ বাড়ির আবু তৈয়ব চৌধুরীর ছেলে। তিনি ফেনীর ঐতিহ্যবাহী ‘ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাব’র সাবেক খেলোয়াড় ছিলেন। মানুষ তাকে ‘ফেনীর ইনজামাম’ বলে ডাকত।
বিকালে ফেনী মডেল থানার ওসি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, নিহতের ছোট ভাই তানজুর চৌধুরী শনিবার দুপুরে তৈমুরের স্ত্রী খাদিজা বিনতে শামস ওরফে রূপা চৌধুরীকে আসামি করে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। রাতেই শহরের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“প্রথমে হত্যাচেষ্টা মামলা হলেও ভিকটিমের মৃত্যু হওয়ায় এখন সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে। পুলিশ তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
মামলার বাদী তানজুর চৌধুরী বলেন, “ভাই-ভাবির সংসারে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে কলহ চলছে। তাদের দুটি মেয়ে রয়েছে। সোমবার ভোর ৬টার দিকে তাদের ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে ভাইয়ার চিৎকার শুনে পাশের ফ্ল্যাট থেকে দৌড়ে যাই। গিয়ে দেখি, গরম পানি ঢেলে ভাইয়ার শরীর ঝলসে দেওয়া হয়েছে। তখন ফ্ল্যাটে ভাই, ভাবি ও তাদের দুই মেয়ে ছাড়া আর কেউ ছিল না।”
তৈমুরকে প্রথমে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার শরীরের ৬০ শতাংশ ঝলসে যায় বলে চিকিৎসকরা জানান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
তানজুর চৌধুরী আরও দাবি করেন, মৃত্যুশয্যায় তৈমুর একটি ‘জবানবন্দি’ দিয়ে গেছেন। সেখানে তার মৃত্যুর জন্য স্ত্রীকে দায়ী করেছেন। ঢাকার বার্ন ইন্সটিটিউটের একজন চিকিৎসক সেটি লিপিবদ্ধ করেছেন। আইসিইউতে মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইস নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই চিকিৎসক নিজের হাতে তৈমুরের কথা লিখেছেন। লেখার পর সেখানে তৈমুরের আঙ্গুলের ছাপ ও স্বাক্ষর নেওয়া হয়। সেটি এখনও পরিবারের কাছে আছে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশকে তা দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি নিজাম উদ্দিন বলেন, একটি চিরকুটের কথা পরিবারের কাছ থেকে শুনেছি। স্থানীয় পত্র-পত্রিকায়ও দেখেছি। কিন্তু এটি এখনও পুলিশের হাতে আসেনি। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে তা পুলিশ সংগ্রহ করবে।
শনিবার রাতে রূপা চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের সময় স্থানীয় সাংবাদিকরা সেখানে ছিলেন। এ সময় রূপা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ”আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে ফাঁসানোর জন্য কেউ এ চক্রান্ত করেছে। ওইদিন সেহেরি খাওয়ার পর আমি ঘুমিয়ে যাই। তার গায়ে গরম পানি কিভাবে পড়েছে তা আমি জানি না।”
তৈমুরের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ফেনীর ক্রীড়াঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু-বান্ধব বাসায় ছুটে আসেন।