রোববার
দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো.
শহিদুল্লাহ জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর
রহমান পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ, তার ভাই আক্তারুজ্জামান সুমন,
মো. মিজানুর রহমান সাবু গাজী, মো. বিল্লাল ও সাব্বির হোসেন জুম্মান। তারা সবাই পটুয়াখালীর
শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ
সুপার এখনও অভিযানে আছেন। তিনি ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে লিখিত বক্তব্য
উপস্থাপন করেন। সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মাঈনুল
হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ
সুপার (সদর সার্কেল), সদর থানার ওসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার রাত ১০টার দিকে পটুয়াখালীর গলাচিপা
উপজেলা থেকে শহরের নিজ বাসায় ফেরার পথে ব্যবসায়ী শিবুলাল দাস ও তার ব্যক্তিগত
গাড়ির চালক মিরাজকে অপহরণ করা হয়। ওইদিন রাতেই তার ব্যবহৃত গাড়িটি বরগুনা জেলার
আমতলীর আমড়াগাছিয়ার একটি তেলের পাম্প থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহরণকারীরা শিবুলালের স্ত্রীর কাছে
মোবাইলে কল করে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে- এমনটি পরিবারের পক্ষ থেকে
জানানো হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছিল। পরদিন মঙ্গলবার জেলা শহরের কাজীপাড়ার এসপি
কমপ্লেক্স নামের একটি ভবনের ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ থেকে ব্যবসায়ী শিবুলাল দাস ও তার
চালককে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় শিবুলালের ছেলে বুদ্ধদেব দাস বাদী
হয়ে একটি মামলা করেন। তারপরই পুলিশ আসামিদের ধরতে পটুয়াখালী ও ঢাকায় বিশেষ অভিযানে
নামে।
পুলিশ সুপার বলেন, “মো. মামুন ওরফে ল্যাংড়া মামুনসহ তিনজন অপহরণ
ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। শিবুলাল ও তার চালককে অপহরণের পর হাত-পা ও মুখ বেঁধে
গাড়িতে উঠিয়ে মামুনের কথিত গোপন আস্তানায় নিয়ে শারীরিকভাবে অত্যাচার করা হয়। পরদিন
তাকে গুম করার উদ্দেশ্যে গোপন আস্তানা থেকে শহরের এসপি কমপ্লেক্সের নীচতলায়
পার্কিংয়ের মামুনের ভাড়া করা একটি কক্ষ যা গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেখানে নিয়ে
আসা হয়।”
এ ঘটনায় বিভিন্ন স্তরে ১০ থেকে ১৫ জন জড়িত এবং তারা ‘অত্যন্ত
দুর্ধর্ষ’ উল্লেখ করে শহীদুল্লাহ আরও বলেন, তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আছে।
তাদের গ্রেপ্তারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও পটুয়াখালী
পুলিশের একাধিক দল অভিযানে রয়েছে।
মো. মামুন ওরফে ল্যাংড়া মামুনের বাড়ি বরগুনার
আমতলীতে। তিনি পটুয়াখালী শহরেই বসবাস করেন এবং ব্যবসা করেন।
শিবুলাল দাস শহরের পরিচিত সরকারি ঠিকাদার।
এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির পরিবেশক হিসেবে কাজ করেন তিনি। পটুয়াখালী শহরে তার
বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “সোমবার রাতে শহরের নিজ বাসায়
যাওয়ার সময় গলাচিপা উপজেলার হরিদেবপুর-শাখারিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের যে কোনো স্থান
থেকে শিবুলাল দাস ও তার গাড়িচালক অপহরণ হন।
“রাত ১২টা ২ মিনিট ও ১টা ৫৯ মিনিটের সময় ভিকটিমের মোবাইল
থেকে তার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায়,
ভিকটিমকে তাদের নিকট আটক করে রেখেছে। মঙ্গলবার দুপুর ২টার মধ্যে ২০ কোটি টাকা
মুক্তিপণ দিলে ভিকটিমকে তারা জীবিত অবস্থায় তাদের কাছে ফেরত দিবে নতুবা তাদের লাশ
পাবেন।”
“পরে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে শিবুলাল দাসের গাড়িটি
একটি পেট্রোল পাম্প থেকে উদ্ধার করে। ২৪ ঘণ্টা পর শহরের এসপি কমপ্লেক্স শপিংমলের
আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ল্যাংড়া মামুনের গোডাউন থেকে জীবিত অবস্থায় শিবুলাল দাস ও তার
ড্রাইভার মিরাজকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপহরণের কাজে ব্যবহৃত একটি ব্যাটারিচালিত
অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: