ক্যাটাগরি

সহায়তা চেয়ে উল্টো নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ: ৩ পুলিশ বরখাস্ত

শনিবার ওই
ঘটনার আট দিন পর যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের তিন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে;
তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারি বিভাগ।

তদন্ত কমিটির
দায়িত্বে থাকা পুলিশের ওয়ারি বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুল ইসলাম বলেন,
“পুলিশের তিন সদস্যকে অপেশাদার আচরণের কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে।

“আর রাস্তার
জমি নিয়ে ওই দুই প্রতিবেশীর বিবাদ দীর্ঘদিনের। তাদের মধ্যে এর আগেও এ নিয়ে
মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে। এখন দুই পক্ষের সবার সঙ্গে কথা বলার পর বোঝা যাবে আসলে
সেদিন সেখানে কী হয়েছে।”

গত ৮ এপ্রিল
ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধারণা হওয়া ‘পুলিশের নির্যাতনের’ একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায়
ছড়িয়ে পড়লে সম্প্রতি এ ঘটনা সামনে আসে। এরপর পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়া হয়।

এরা হলেন- যাত্রাবাড়ী থানার এসআই বিশ্বজিৎ সরকার, কনস্টেবল শওকত
আলী ও নবনীতা বনসেন।

স্থানীয়দের
সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী বিবির বাগিচা এলাকার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের ও
তার প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের মধ্যে গত ১৮ বছর ধরেই রাস্তার জমি নিয়ে বিবাদ।

গত ৮ এপ্রিল
এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। সেদিন মারামারির আগে আবুল খায়েরের পরিবার
৯৯৯ এ কল করে সহায়তা চায় বলে দাবি করে। পুলিশ একবার তাদের বাসায় এসে ঘুরেও যায়।

আবার মারামারির
পর পুলিশ এসে আবুল খায়ের, তার মেয়ে শিল্পী আক্তার ও চিকিৎসক ছেলে ইউসুফ হোসেইনকে
মারধর করতে করতে থানায় নিয়ে যায়। প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের করা মামলায় এখনও
কারাগারে আছেন ইউসুফ।

এ ঘটনার
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ কনস্টেবল নবনীতা আবুল খায়েরের মেয়ে শিল্পী
আক্তারকে চড়-থাপ্পড় মারছেন। চুলের মুঠি ধরে সিঁড়ির দিকে ঠেলছেন। লাঠি হাতেও মারতে
দেখা যায় তাকে।

আর এসআই
বিশ্বজিৎ এবং কনস্টেবল শওকত বাড়িওয়ালা আবুল খায়ের ও তার ছেলে ইউসুফকে টেনে-হিঁচড়ে
নিচে নামাচ্ছেন, নির্যাতন করছেন। এসময় আরও কিছু লোকজনকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখা যায়।

ওইদিনের ঘটনার
বর্ণনা দিয়ে শিল্পী আক্তার অভিযোগ করেন, পুলিশের সঙ্গে তাদেরই আরও ‘কিছু প্রতিবেশী’
এবং স্থানীয় ‘রাজনৈতিক মাস্তানরাও’ বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে।

তার ভাষ্য, “ঘরের
বাইরে নিয়ে যে মারধর করছে সেটুকু শুধু সিসি ক্যামেরায় উঠছে। কিন্তু ঘরের ভেতরে
পুলিশসহ ওরা আমাদের সবাইকে বেধড়ক মারধর করেছে।

“অথচ দেখেন
আমরাই ৯৯৯ এ কল করে পুলিশ ডাকছিলাম, সাহায্য পাওয়ার আশায়। কিন্তু পুলিশ উল্টো আমাদের
মারধর করে থানায় নিয়ে গেছে।”

পুলিশের ভাষ্য
তুলে ধরে শিল্পী বলেন, “তারা আমাদের বলছে, আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নুরুল
ইসলাম। সেই মামলায় তারা আমাদের গ্রেপ্তার করতে এসেছেন। আমরা পরোয়ানা দেখতে চেয়েছি
বলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়েছে।”

ওইদিন তাদের
গ্রেপ্তার করার পর প্রতিবেশী বাড়িওয়ালা নুরুল ইসলাম তাদের বাড়ির পানির সংযোগ কেটে
দেন এবং তাদের চলাচলের রাস্তায় দেয়াল তুলে দেন বলে অভিযোগ শিল্পীর।

পরে শনিবার
পুলিশের হস্তক্ষেপে পানির সংযোগ পুনস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া দেয়ালের কিছুটা ভেঙে
ওই পরিবারসহ বাড়ির ভাড়াটিয়াদের চলাচলের রাস্তা করে দিয়েছে পুলিশ।

১৮ বছরের
বিরোধ

২০০৪ সালে
বিবির বাগিচা এলাকায় বাড়ি তৈরি করেন স্টিল পাইপের ব্যবসায়ী আবুল খায়ের। তার আগে
থেকেই চলাচলের রাস্তা নিয়ে প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল।

নুরুলের দাবি
ওই রাস্তার জমি তার, এজন্য টাকা দিতে হবে। আর খায়েরের দাবি রাস্তার মালিক সিটি করপোরেশন।

এই বিরোধ
থেকে নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছিলেন খায়ের। প্রতিবেশীর করা ওই
মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন কারাগারেও ছিলেন নুরুল।

কী বলছেন
নুরুল

পানির সংযোগ
বিচ্ছিন্ন করার কথা অস্বীকার করে নুরুল ইসলাম বলেন, “আমি হাজী মানুষ, রমজান মাসে কাউকে
পানির কষ্ট আমি দিইনি। খায়ের সাবই এটা কইরা আমার নাম দিছেন।”

এছাড়া ওই
জায়গায় আগে থেকেই দেয়াল ছিল দাবি করে তিনি বলেন, “আট-নয় বছর আগে ওই দেয়াল ভেঙে
তাদের জমির ওপর দিয়ে চলাচলের রাস্তা করেন আবুল খায়ের।”

তিনি অভিযোগ
করেন ৮ এপ্রিল আবারও দেয়াল তৈরি করতে গেলে খায়েরের লোকজন তার ওপর হামলা করেন। এরপর
তিনি থানায় মামলা করলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে ওই
এলাকার সাবেক একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, এ নিয়ে বিস্তর দেন-দরবার, বিচার-সালিশ হয়েছে।
দুটো পরিবারই ‘অনমনীয় স্বভাবের’।  

তিনি বলেন,
“আমরা বারবার বলছি আপনারা দুজনই প্রতিবেশী বাড়িওয়ালা, আপনাদের ছেলে-মেয়েরা এখানে
পরবর্তী জীবন থাকবে। নিজেদের শান্তিপূর্ণ বসবাসের স্বার্থে হলেও আপোষ করেন। কিন্তু
তারা সেটি করছেন না।”