বুয়েটের দুর্ঘটনা ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক
হাদিউজ্জামান বলছেন, দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় দিনে ১৬ লাখ যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা
রয়েছে। বাকি ১৪ লাখ মানুষকে ঈদযাত্রা করতে হবে ‘বিকল্প উপায়ে’।
আর সেই বিকল্প উপায় হল- বাস, ট্রেন বা লঞ্চের ছাদ
বা ট্রাকে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে; অর্থাৎ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
রোববার যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে
জরিপের এ তথ্য তুলে ধরে হাদিউজ্জামান বলেন, প্রতিদিন ১৬ লাখ যাত্রী স্বাভাবিকভাবেই
গণপরিবহনে ঈদযাত্রা করতে পারবেন।
এর মধ্যে বাসে ৮ লাখ, ট্রেনে এক লাখ, লঞ্চে ১ লাখ
২৫ হাজার, মোটরসাইকেল ৩ লাখ এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে ৩ লাখ মানুষ যেতে পারবে। কিন্তু
১৪ লাখ যাত্রী কোনো যানবাহন পাবেন না। ফলে তারা ‘বিকল্প উপায়ে’ যাবেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঈদযাত্রায় অসহনীয়
যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা’
বন্ধের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির কারণে এবারের ঈদে
প্রায় দ্বিগুণ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। ঢাকা থেকে ১ কোটির বেশি মানুষ দেশের
বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এ ছাড়া এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আরও প্রায় পাঁচ
কোটি মানুষ যাতায়াত করতে পারে।”
ঈদ যাত্রায় বাড়তি নিরাপত্তা, সতর্কতার তাগিদ
দিয়ে তিনি বলেন, “যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার
নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে।”
ঢাকার ফুটপাত থেকে হকার ও অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদের
দাবি জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের
প্রবেশদ্বারগুলো, যেমন- যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, বাবুবাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা,
টঙ্গী রেলস্টেশন, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু, মীরের বাজার, উলুখোলা,
কাঞ্চন ব্রিজ, গাবতলী মাজার রোড, মীরের যৌর, আশুলিয়া, ইপিজেড, চন্দ্রা, সেতু,
রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, জিঞ্জিরা, কেরানীগঞ্জ, হাতিরঝিল, মহাখালী,
রামপুরা, আমুলিয়া, ডেমরা, সুলতানা কামাল ব্রিজ, চিটাগাং রোড, কাচঁপুর, মদনপুর,
মেঘনা টোপ, ভুলতা, গাউছিয়া এলাকায় যানজট ভোগান্তির কারণ হতে পারে।
“অন্যদিকে বিআরটি নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে
উত্তরা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যাতায়াতে মানুষজনকে অসহনীয় যানজটে পড়তে হবে। এসব
যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা, ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা ও ইজিবাইক
প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
সড়কে চাঁদাবাজির কারণেও যানজট হয় মন্তব্য করে
তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য এবং পরিবহন নেতাদের
চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট
হয়।”
অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকট,
করোনাভাইরাসে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে কিছু
পরিবহন মালিক-চালকরা ‘মরিয়া হয়ে উঠেছে’ বলেও অভিযোগ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির
মহাসচিব।
“ভাড়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ‘কাগুজে
বাঘের মতো’; হুঁশিয়ারি দিলেও দৃষ্টান্তমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার
কারণে এবারের সকল পথে দ্বিগুণ-তিনগুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হবে।”
লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী, বেশি
ভাড়া আদায়ের লোভ, ফিটনেসবিহীন যান, পণ্যবাহী যানে যাত্রীবহন, নৌপথে পর্যাপ্ত জীবন
রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকা, চালককে বিশ্রাম না দিয়ে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিরামহীন যান
চালাতে বাধ্য করা, অদক্ষ চালক দিয়ে আনফিট গাড়ি চালনার কারণে সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনায়
প্রতি বছর ঈদে কয়েকশ যাত্রীর প্রাণহানি হয়।
গত বছরের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ২০২১ সালে ঈদুল ফিতরে ৩১৮টি সড়ক
দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ৬২২ জন আহত হয়েছেন। এবার যাত্রীর চাপ ‘দ্বিগুণ’ হলে সড়ক
ও নৌ দুর্ঘটনা বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
সংগঠনের মহাসচিব বলেন, অনলাইনে রেলের টিকেট বিক্রির
বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় কাউন্টার থেকে টিকেট কালোবাজারীদের হাতে চলে যাওয়ার
শঙ্কা রয়েছে। কালোবাজারীদের কাছ থেকে এসব টিকিট যাত্রীদের চড়া দামে কিনতে হবে।
“বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ঈদের আগে এবং পরের
১০ দিনের বিমান টিকিট বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো দখল করে নেওয়ায় ঈদে ফ্লাইটের
টিকিট যাত্রীদের কয়েকগুণ বাড়তি দামে কিনতে হবে।”
সারা দেশে নৌ ও ফেরিঘাটে নিয়োজিত ইজারাদারেরা
ঈদে যাত্রী পারাপারে বাড়তি টোল আদায়ের নৈরাজ্য চালায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ
বিভিন্ন ফেরিঘাটে যানবাহন চলাচল ৫০ শতাংশ বাড়লেও ফেরির সংখ্যা কমেছে। ফলে এই ঈদে
এখানে শত শত যানবাহন উভয় পাড়ে আটকা পড়তে পারে।
এসব ফেরিঘাটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো, বিদ্যমান
ফেরিগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
‘কালবৈশাখীর শঙ্কা থাকায়’ নৌপথ ঝুঁকিপূর্ণ হতে
পারে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, “আনফিট নৌযান চলাচল বন্ধ করাসহ ফিটনেসধারী নৌযানে
যাতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঈদযাত্রায় ছিনতাই, ডাকাতিসহ প্রতারক চক্রের হাত
থেকে যাত্রীদের রক্ষায় প্রতিটি বাস, লঞ্চ ও রেল স্টেশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা
বাড়ানোর দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।