
আশীষ রায় চৌধুরী।
তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তারের আদেশ রোববার দেন ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার
ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাকির হোসেন।
গত ৫ এপ্রিল গ্রেপ্তার আশীষকে ১৭ এপ্রিল আদালতে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে
গত ১১ এপ্রিল নির্দেশ দিয়েছিলেন এ বিচারক। সে অনুযায়ী এদিন তাকে আদালতে হাজির করে কারা
কর্তৃপক্ষ।
গত ৫ এপ্রিল রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি বাসা থেকে আশীষকে (৬৩) গ্রেপ্তার
করে র্যাবের একটি দল। ওই বাসা থেকে ২২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪ বোতল সোডা ওয়াটার, একটি
আইপ্যাড, ১৬টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, দুটি আইফোন ও নগদ দুই লাখ টাকা জব্দ
করা হয়।
পরদিন র্যাব-১০ এর ডিএডি জাহাঙ্গীর আলম গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ
আইনে মামলা করেন। পরে ৭ এপ্রিল গুলশান থানা পুলিশ আশীষ রায়কে আদালতে হাজির করে কারাগারে
আটক রাখার আবেদন করে। পরে ১০ এপ্রিল শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নাকচ করে দেন বিচারক।
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের দুই যুগ আগের মামলাটিতে আসামি আশীষ।
সেই মামলায় রোববার আশীষের পক্ষে জামিন আবেদন করেন আইনজীবী নজিবউল্যাহ
হিরু। শুনানিতে তিনি বলেন, ২০০৫ সালের ২৩ মে আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। দীর্ঘদিন
ধরে মামলাটি উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত ছিল।
“এরপরে নিম্ন আদালতে স্থগিতাদেশ ভ্যাকেট হয়ে পড়েছিল। ভ্যাকেট হওয়ার
পরে মামলার কার্যক্রম চালু হয়নি। এরইমধ্যে গত ২৪ মার্চ আসামি বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
জারি করা হয়। সেই বিষয়ে আসামিকে জানানো হয়নি। দীর্ঘদিন যাবৎ হাই কোর্টে স্থগিতাদেশ
থাকায় আইনজীবীর সাথে তেমনভাবে যোগাযোগও করা হয়নি। বিষয়টি আইনজীবীও জানেন না। মিসটেক
হয়েছে। এজন্য আসামির জামিনের প্রার্থনা
করছি।”
তখন বিচারক বলেন, “প্রত্যেকের (আসামির) ঠিকানায়
নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আসামি পক্ষ জামিননামাও দিয়েছে।… আসামির
জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হল।”
এদিকে গত ৬ এপ্রিল সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার জব্দ হওয়া আলামত উপস্থাপনের
নির্দেশ দেন বিচারক। সেই
অনুযায়ী ডিবি
পুলিশ জব্দ হওয়া আলামত রোববার
আদালতে বুঝিয়ে
দিচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর
সাদিয়া আফরিন শিল্পী।
আগামী ২৫ এপ্রিল
মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন
ঠিক করেছেন বিচারক।
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের আসামি আশীষ রায় গ্রেপ্তার
‘উচিৎ শিক্ষা’ দিতে সোহেল চৌধুরীকে খুন করেন আশীষরা: র্যাব
১৯৯৮
সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে
সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান
থানায় হত্যা মামলা করেন।
এই
অভিনেতা খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের
সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। ১৯৯৯
সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম
ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
অন্য
আসামিরা হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আশীষ
চৌধুরী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন, আদনান সিদ্দিকী, তারিক সাঈদ মামুন,
সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ও ফারুক আব্বাসী।
ওই
মামলায় ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে
ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়।
কিন্তু
আসামিদের মধ্যে তারিক সাঈদ মামুনের পক্ষে হাই কোর্টে মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা
হলে আদালত একটি রুল দেয়; সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ
আসে। সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের খবর পাওয়া যায়। এরপর
মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এরপর
দীর্ঘদিন মামলাটির নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে একটি রিট আবেদনের
পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সবার নজরে আসে। তারপর বিচারিক আদালতে পুনরায় বিচার শুরু হয়।
এখন ঢাকার আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।