মস্কভা ছিল রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটের ফ্লাগশিপ। সেই জাহাজ ডুবে যাওয়া নিঃসন্দেহে রাশিয়ার জন্য বিশাল ধাক্কা।
মিসাইল ক্রুজার মস্কভা ছিল রাশিয়ার সমর শক্তির প্রতীক। কৃষ্ণ সাগর থেকে ইউক্রেইনে হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছিল জাহাজটি।
গত বুধবার বিস্ফোরণে জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সেটির ৫১০ জন ক্রুকে সরিয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার জাহাজটি টেনে বন্দরে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল।
সে সময় বিক্ষুব্ধ সাগরে জাহাজটি ডুবে যায় বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য। মস্কভায় বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এসেছে।
ইউক্রেইন দাবি করেছে, তাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধজাহাজটিতে আঘাত হেনেছে। তবে রাশিয়া কোনো হামলার কথা স্বীকার করেনি। তারা বলছে, জাহাজটিতে রাখা গোলাবারুদে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে গিয়েছিল।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সোভিয়েত আমলের মিসাইল ক্রুজারটির আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলো উত্তাল সাগরে মস্কভার ডুবে যাওয়ার খবর দেয়।
জাহাজের ক্রুদের আগেই ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপোল বন্দরে সরিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৪ সালে ইউক্রেইনের কাছ থেকে ক্রিমেয়া দখল করে রাশিয়া।
কৃষ্ণ সাগরে ডুবে গেছে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ মস্কভা
বিবিসি জানায়, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে দেখা যায়, এডিএম ইয়েভমেনোভ এবং আরো দুইজন কর্মকর্তা একটি প্যারেড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদের সামনে প্রায় ১০০ নৌসেনা। ভিডিওটি কোথায় করা হয়েছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভিডিওর শেষে এডিএম ইয়েভমেনোভ বলেন, নৌ কর্মকর্তা এবং ক্রুরা বর্তমানে তাদের সেভাস্তোপোল ঘাঁটিতে রয়েছে এবং নৌবাহিনীতে তাদের দায়িত্বপালন অব্যাহত রাখবেন।
মস্কভাতে বিস্ফোরণ বা সেটি ডুবে যাওয়ায় হতাহতের কোনও ঘটনা এখনো জানায়নি রাশিয়া। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, ওয়াশিংটনের বিশ্বাস মস্কভাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ইউক্রেইনের দাবি, মস্কভার ক্যাপ্টেন অ্যানটন কুপরিন নিহত হয়েছেন। তবে বিবিসি স্বাধীনভাবে এই দাবি যাচাই করতে পারেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মস্কভাই রাশিয়ার সব থেকে বড় যুদ্ধজাহাজ যেটি ডুবে গেছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আগ্রাসনের প্রথম দিন কৃষ্ণ সাগরে দেশটির ছোট্ট দ্বীপ ‘স্নেক আইল্যান্ডে’ ১৩ ইউক্রেইনীয় সেনার হার না মানার যে ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়েছিল সেটির সঙ্গেও মস্কভার নাম জড়িত।
মস্কভাই স্নেক আইল্যান্ডে হামলা চালিয়ে ওই ইউক্রেইনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণ করতে বলেছিল। কিন্তু সেনারা আত্মসমর্পণ না করে বীরের মত লড়ে যায়। প্রথমে তাদের সবার নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ পেলেও পরে জানা যায় তারা সবাই বেঁচে আছেন।
মস্কভা ১৯৮৩ সালে সোভিয়েত নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়। ১৬টি জাহাজ বিধ্বংসী ‘ভালকান’ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারত মস্কভা, সেসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা অন্তত ৭০০ কিলোমিটার।
২০২১ এর এপ্রিলে রাশিয়ার একজন অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডমিরাল মস্কভাকে ‘কৃষ্ণসাগরীয় নৌবহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।