পারিবারিক এই বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে রোববার হাই কোর্টে দেওয়া
রায়ে ১৯ বছরের ওই তরুণীর কানাডা যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে। জন্মসূত্রে কানাডীয় ওই তরুণীকে
আইনি প্রক্রিয়া শেষে সে দেশের প্রতিনিধির হাতে হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক রুল নিষ্পত্তির পর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি
এস এম মনিরুজ্জামানের বেঞ্চ থেকে এ রায় আসে।
আদালত হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানীকে রোববারই
কানাডিয়ান হাই কমিশনে তরুণীকে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তরুণীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে
কানাডিয়ান হাইকমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
রায়ের সময় আদালতে ওই তরুণী, তার বাবা-মার সঙ্গে কানাডিয়ান হাই কমিশনের
প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সারা হোসেন। তরুণীর
বাবা-মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ।
রায়ের পর সারা হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত
ওই নারী এবং তার বাবার বক্তব্য শুনেছেন। কানাডিয়ান হাই কমিশন যেহেতু তার নিরাপত্তা
নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়েছে, তার ইচ্ছেও সেই দেশে ফিরে যাওয়ার, সে কারণে সে দেশে
ফিরে যেতে তার বাবার কোনো আপত্তি নেই বলে আদালতকে জানিয়েছেন।
“এছাড়া ওই নারী যেহেতু একজন প্রাপ্ত বয়স্ক, সাবালিকা, সেদেশে তার পড়াশোনার বিষয় রয়েছে, সবকিছু বিবেচনা করে আদালত এ আদেশ
দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আদালত হাই কোর্টের
রেজিস্ট্রারকে ওই নারীর পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তার বাবা-মার কাছ থেকে
সংগ্রহ করে হাইকমিশনে পৌঁছে দিতে বলেছে। ওই নারী ও তার পরিবারের পরিচয় গণমাধ্যমসহ
কোথাও যাতে প্রকাশ না হয়, সেই কথাও বলেছে আদালত।”
১০ মাস আগে কানাডা থেকে দেশে ফেরার পর থেকে বাবা-মার সঙ্গে ঢাকার উত্তর
মুগদার একটি বাসায় থাকছিলেন ওই তরুণী। সেখান থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ঢাকার
কানাডা হাই কমিশনে ফোন করে জানান, তাকে ‘বন্দি’ করে
রাখা হয়েছে।
এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি মুগদা থানায় কানাডিয়ান হাই কমিশন থেকে এ বিষয়ে
একটি সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করে। পরে হাই কমিশনের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ
লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র-আসক হাই
কোর্টে রিট আবেদন করে।
আবেদনে পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, মুগদা থানার ওসি
এবং ওই তরুণীর বাবা-মাকে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯ বছরের ওই তরুণীর জন্ম কানাডায়। তিনি
জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তার
বাবা-মাও কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তারা বেড়ানোর কথা বলে মেয়েকে নিয়ে দেশে আসেন।
এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি।
আবেদনে অভিযোগ করা হয়, তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে
তার নানি ও মা সবসময় বাসায় বন্দি করে রাখছেন। এক পর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ডফোনে
তাকে জোরপূর্বক ‘ঘরবন্দি’ করে
রাখা হয়েছে বলে কানাডিয়ান হাই কমিশনকে জানান।
রিট আবেদন পেয়ে গত ৫ এপ্রিল কানাডিয়ান ওই তরুণীকে আদালতে হাজির করতে
নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। তরুণীর অসম্মতিতে তাকে ১০ মাস ধরে আটক রাখা কেন অবৈধ হবে
না, তা জানতে চেয়ে জারি করা হয় রুল।
রুলের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার কানাডা হাই কমিশনের পক্ষ থেকে
আদালতকে জানানো হয়, ওই তরুণীর কানাডায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখাসহ যাবতীয় খরচ
বহন এবং সব ধরনের নিরাপত্তা দেবে কানাডা সরকার।
এরপর সেদিন দুই বিচাররক
এজলাস কক্ষে একান্তে তরুণীর বক্তব্য শোনেন। পরে তাকে কানাডিয়ান সরকারের
প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেদেশে যাওয়ায় সুযোগ দিয়ে রোববার এ বিষয়ে রায় দেয় হাই কোর্ট।