রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের
একটি বিবৃতির বরাত দিয়ে জানানো হয়, সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ে নতুন মন্ত্রীরা
শপথ নিয়েছেন।
আগের মন্ত্রিসভার মাত্র পাঁচজনকে নতুন মন্ত্রিসভায়
স্থান দিয়েছেন গোটাবায়া। তবে অধিকাংশ মন্ত্রী ক্ষমতাসীন পোডুজানা পেরামুনা দল থেকেই
নিয়োগ পেয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “মন্ত্রিসভার নতুন
১৭ জনকে আজ সকালে প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ে শপথ পড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট
গোতাবায়া রাজাপাকসে।”
তবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের মাহিন্দা রাজাপাকসেই
থাকছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় মাহিন্দা ছাড়া পরিবারের আর কোনো সদস্যকে রাখা হয়নি।
“মন্ত্রিসভায় প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর পোর্টফোলিওতে কোনো পরিবর্তন
হয়নি” বলে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়।
প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার বড়
ভাই। প্রেসিডেন্টের অপর দুই ভাই এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার ছেলে আগের মন্ত্রিসভায়
থাকলেও তাদের এবার জায়গা হয়নি।
ছোট ভাই বাসিল রাজাপাকসে ছিলেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে।
আর পরিবারের সবার বড় ভাই চমল রাজাপাকসে কৃষি মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী
মাহিন্দার ছেলে নামাল রাজাপাকসে ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী।
রয়টার্স লিখেছে, সোমবার একটি ঋণ কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক
মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে রাজাপাকসে সরকারের বৈঠকে বসার কথা। তার আগেই মন্ত্রিসভায় ১৭ জনকে
যুক্ত করলেন প্রেসিডেন্ট।
দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে গত ৩ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার
মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা এবং তার ভাই
প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দায়িত্বে থেকে যান।
রাজাপাকসে মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে সব দলকে ঐক্যমত্যের
সরকার গঠনের আহ্বান জানালেও বিরোধী এবং ক্ষমতাসীন সরকারের জোটে থাকা দলগুলো তা প্রত্যাখ্যান
করে।
বিরোধীদলগুলো প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ
জানিয়ে আসছে। ৩১ মার্চ রাতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনের বাইরে শুরু
হওয়া বিক্ষোভ এখনও চলছে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে
কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার
মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়া এর একটি বড় কারণ।
এ বছর কলম্বোকে প্রায় ৬৯০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ
করতে হবে, অথচ জ্বালানি তেল, খাদ্য, কাগজের মতো নিত্যপণ্য আমদানির মত যথেষ্ট বিদেশি
মুদ্রাও সরকারের হাতে নেই।
এ পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে চরম বিদ্যুৎ সংকট। প্রতিদিন
১০ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে, বন্ধ রাখতে হচ্ছে সড়ক বাতি।
শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, মার্চে মূল্যস্ফীতি
হয়েছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৮.৭ শতাংশ। খাদপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০.২ শতাংশে
পৌঁছেছে।
খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধসহ নানা ঘাটতি মোকাবিলায় বিদেশি
সাহায্য ও ঋণদাতা গোষ্ঠীগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে শ্রীলঙ্কা।
কোভিড মহামারীর কারণে দেশটির অর্থনীতির অন্যতম প্রধান
খাত পর্যটন শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় আইএমএফের কাছে সহায়তা চাইতে বাধ্য হয় সরকার।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দেশটি এখন আমদানির চাহিদাও
মেটাতে পারছে না। ঋণভারে জর্জরিত দেশটি নির্ধারিত
সময়ে ঋণের কিস্তুও শোধ করতে পারছে না।
গত সপ্তাহে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বৈদেশিক
ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্থগিত করা হয়েছে। রিজার্ভে থাকা প্রায় ১৯৩ কোটি
ডলার কেবল অপরিহার্য পণ্য আমদানিতে খরচ করা হবে।
আরও পড়ুন
বিক্ষোভের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় মন্ত্রিসভার পদত্যাগ
ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব বন্ধ শ্রীলঙ্কায়
শ্রীলঙ্কা এমন বেহাল কেমন করে হল?
আর্থিক দুর্দশায় শ্রীলঙ্কা, কাগজ সংকটে স্কুলের
পরীক্ষাও বন্ধ
শ্রীলঙ্কায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার
ঘোষণা