ক্যাটাগরি

কিশোরগঞ্জে পানি বাড়ছে, ৮০ শতাংশ পাকলেই ধান কাটার নির্দেশ

বছরের একমাত্র ফসল গোলায় তোলার আশঙ্কার মধ্যেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ধান ৮০ শতাংশ পাকলেই তা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম সোমবার বলেন, “এখনও পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে সপ্তাহখানেক বাকি আছে। তবে পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকায় ৮০ শতাংশ পাকলেই ধান কেটে ফেলার জন্য কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

“ধান কাটার জন্য কৃষকদেরকে এ পর্যন্ত ২৪৪টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হাওরের ৩০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। সপ্তাহখানেক সময় পেলে সব ধান কেটে ফেলা যাবে।”

এ বছর জেলায় এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কিশোরগঞ্জের চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নীচু এলাকার প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির আধা-পাকা বোরো ধান তলিয়ে যায়। পরে পানি ধীরে ধীরে কমে যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, “আমাদের ফসল রক্ষা বাঁধগুলো এখনও অক্ষুন্ন থাকায় মূল হাওরে পানি ঢোকেনি। পানির বাড়লেও এখনও বিপৎসীমার নীচে আছে। সীমানার ওপারে বৃষ্টি না হওয়ায় আজ (সোমবার) থেকে পানি কমার সম্ভাবনা আছে।“

তবে এখনও বেশিরভাগ ফসল ক্ষেতে থাকায় দুঃশ্চিন্তা কাটছে না কৃষকের। কারণ কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত চারটি উপজেলার কৃষকের সারা বছরের একমাত্র ফসল এই বোরো ধান। এ ধান বিক্রির অর্থ দিয়ে পরিবারের সারা বছরের ব্যয় নির্বাহ করে কৃষক।

ইটনা উপজেলার দীনেশপুর গ্রামের কৃষক হরিলাল দাস বলেন, হাওরে শঙ্কা নিয়েই ধান কাটা শুরু হয়েছে। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এবার নালুয়া হাওরে পাঁচ একর জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। উজানের ঢলে সব হারিয়ে এখন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। এবার ফসল নষ্ট হলে ঋণের বোঝা বাড়বে, আর না খেয়ে উপোস থাকতে হবে।

জয়সিদ্ধী গ্রামের কৃষক কাহার মিয়া বলেন, “আমার বসত ভিটা ও কয়েকটি গরু ছাড়া নিজের জমি নাই। বর্গা নিয়ে চাষ করেছি। এখন যদি ফসল তলিয়ে যায় বসত ভিটা বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”

এলংজুড়ি গ্রামের আব্দুল কাদির জানান, হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান কাটার লোক পাচ্ছেন না। ধান কিছুটা পাকলে হয়তো এসব ধান কাজে লাগত। পানি আরও বাড়তে থাকলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। কারণ, অনেকেই বর্গা নিয়ে এবং ঋণ করে ধান চাষ করেছেন।

ইটনা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহাগ মিয়া বলেন, “অন্য বছর এ সময় হাওরের কৃষক খলা ও গোলা তৈরিসহ ধান কাটার প্রস্তুতি নেওয়াতে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এবার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসলহানির ঘটায় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।”