দিল্লির শহরতলী জাহাঙ্গীরপুরিতে
শনিবার দাঙ্গার
ওই ঘটনায়
সাত পুলিশ
কর্মকর্তাসহ প্রায় ৯ জন আহত
হন।
তবে কেউ
নিহত হওয়ার
খবর পাওয়া
যায়নি।
বিবিসি হিন্দির
সংবাদদাতা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে
ক্ষোভ দেখতে
পেয়েছেন।
শনিবার বিকালে হনুমান
জয়ন্তীর মিছিল
একটি মসজিদের
পাশ দিয়ে
যাওয়ার সময়
ছাদ থেকে
পাথর ও
অন্যান্য ধারাল
জিনিস ছুড়ে
মারাকে কেন্দ্র
করে সমস্যা
তৈরি হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে
বলা হচ্ছে,
মুসলিমরা পাথর
ছুড়েছিল মিছিলে। ওদিকে, এলাকার স্থানীয় মুসলিমরা
বলছেন, মিছিলে
থাকা হিন্দুরা
উস্কানিমূলক স্লোগান তুলে সহিংসতার প্ররোচণা
দিয়েছে।
দুইপক্ষ থেকেই
সোশ্যাল মিডিয়ায়
ভিডিও প্রকাশ
করে নানা
দাবি করা
হয়েছে।
সেগুলোর কয়েকটি
ভাইরাল হয়েছে। বহিরাগতদের মদদে এ সহিংসতা
হয়েছে বলেও
অভিযোগ উঠেছে।
দিল্লি পুলিশ দুই
অপ্রাপ্তবয়স্কসহ ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের অপরাধ বিভাগ এখনও
সহিংসতা কীভাবে
শুরু হল
তা তদন্তের
পাশাপাশি বহিরাগতদের
হাত থাকার
অভিযোগ খতিয়ে
দেখছে।
২০২০ সালের দাঙ্গার
পর দিল্লিতে
এটিই সবচেয়ে
বড় সাম্প্রদায়িক
সহিংসতা।
জাহাঙ্গীরপুরির এই ঘটনার পর ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরব থাকা
নিয়ে একটি
যৌথ বিবৃতি
দিয়েছে ১৩
টি বিরোধীদল।
এতে বলা হয়েছে,
প্রধানমন্ত্রীর নীরবতায় তারা মর্মাহত।
প্রধানমন্ত্রী ধর্মান্ধতা প্রচারকারীদের
কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলতে ব্যর্থ
হয়েছেন।
অথচ একটি
দল তাদের
কথা ও
কাজে সমাজকে
উস্কানি দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা এই সত্যরই
সাক্ষ্য দিচ্ছে
যে, এ
ধরনের সশস্ত্র
গুন্ডারা সরকারি
পৃষ্ঠপোষকতায় পার পেয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও
বিদ্বেষ নিয়ে
উদ্বেগ প্রকাশ
করে বিবৃতিতে
বলা হয়েছে,
পোশাক, ধর্মীয়
বিশ্বাস, ধর্মীয়
উৎসব,
ভাষা এই
বিষয়গুলোতে ইচ্ছেকৃতভাবে সমাজে মেরুকরণ তৈরি
করা হচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় শাসকদলের প্রচ্ছন্ন
মদদ আছে
বলেও ইঙ্গিত
দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত
করে অপরাধীদের
কঠোর শাস্তির
দাবি জানানো
হয়েছে বিবৃতিতে।
অন্যদিকে, বিবিসি হিন্দি
জাহাঙ্গীরপুরি পরিদর্শনে যাওয়ার পর দেখতে
পেয়েছে, অধিবাসীরা
মোবাইল ফোন,
নিউজ চ্যানেলে
বুঁদ হয়ে
আছে।
তাদের একেকজন
একেক কথা
বলেছেন।
কেউ কেউ
বলেছেন, এলাকাটিতে
এবারই প্রথম
উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
ওদিকে, স্থানীয় হিন্দুদের
মধ্যে ক্ষোভ
দেখা গেছে। তারা বলেছেন, তাদের মিছিলে
কোনও উস্কানি
ছাড়াই হামলা
হয়েছে।
শনিবারের মিছিলের
আয়োজক সুখেন
সরকার বসেছিলেন
স্থানীয় একটি
হিন্দু হনুমান
মন্দিরের উল্টোপাশে।
মিছিলে হামলা সম্পর্কে
তিনি বলেন,
“আমরা নিরস্ত্র
ছিলাম।
লড়াইয়ের মেজাজে
ছিলাম না। অথচ আমাদের ওপর পাথর
আর কাচ
বৃষ্টি হয়েছে
বলে মনে
হয়েছে।”
পায়ের একটি
জখমও দেখান
তিনি।
সুখেন কথা বলতে
বলতেই ক্ষুব্ধ
হয়ে ওঠেন
তার আশেপাশে
থাকা অন্যান্যরাও। তাদের মধ্যে গুপ্তা নামের
একজন বলেন,
“হামলাটি পরিকল্পিত
ছিল।
আমাদেরকে চারদিক
থেকে ঘিরে
ফেলে পাথর,
কাচ, ছুরি,
তলোয়ার দিয়ে
হামলা করা
হয়।”
হামলাকারীরা পেট্রোল বোমা, পিস্তল ব্যবহার
করেছে এবং
শস্য বহনকারী
একটি যানও
লুট করেছে
বলে অভিযোগ
করেন তিনি।
কয়েকশ মিটার দূরেই
একটি মসজিদের
কাছে মুসলিমদের
মুখ থেকে
শোনা গেছে
ভিন্ন কথা। মসজিদের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহুদ্দিন
বলেছেন, মিছিলকারীরা
পাথর ছুড়ে
মেরে জোর
করে মসজিদের
ভেতর দিয়ে
যাওয়ার চেষ্টা
করার পরই
কেবল মুসলিমরা
পাল্টা প্রতিক্রিয়া
দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের
ছেলেরা যখন
দেখল মসজিদ
হামলার মুখে
তখন তারা
এটি সহ্য
করতে পারেনি।” মসজিদের ছাদ থেকে পাথর
ছোড়া হয়েছে
এমন অভিযোগ
অস্বীকার করেছেন
তিনি।
এছাড়া, স্থানীয় বাসিন্দাদের
অনেকেই দিল্লি
পুলিশ প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেয়নি
বলেও ক্ষোভ
প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, সংঘর্ষ
শুরুর সময়
মাত্র তিনজন
পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিল। শোভা যাত্রার পরিকল্পনার সময়
দিল্লি পুলিশ
দুঘটনা এড়াতে
কেন পর্যাপ্ত
নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিল না তা
নিয়ে প্রশ্ন
তুলেছেন তারা।