বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে সোমবার ৫৫ রানে জিতেছে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। ৩২৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নাবিল সামাদের স্পিনে ২৭০ রানে থেমেছে রূপগঞ্জ টাইগার্স।
সুপার লিগের প্রথম রাউন্ডের এই জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বের উঠে এসেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ২০ পয়েন্ট নিয়ে চূড়ায় শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব।
প্রাথমিক পর্বে বিবর্ণ সাব্বির তিনে নেমে ১১১ বলে আটটি করে ছক্কা ও চারে খেলেন ১২৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটাই তার সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ২০১০ সালের অক্টোবরে জাতীয় লিগে রাজশাহী বিভাগের হয়ে বগুড়ায় খুলনা বিভাগের বিপক্ষে ১১২।
৬৬ বলে ৭ ছক্কা ও চারটি চারে ৯৫ রানের খুনে ইনিংস খেলেন চিরাগ।
রূপগঞ্জ টাইগার্সের হয়ে একা লড়াই করা সাদ নাসিম ১০৭ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১১৬ রানে। লিস্ট
‘এ’ ক্রিকেটে পাকিস্তানি এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডারের সেরা
ছিল ১১৩। সাব্বিরের মতো নাসিমও পেলেন এই সংস্করণে চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের। দুই ওপেনার সাব্বির হোসেন ও রকিবুল হাসান ফেরেন দ্রুত।
পঞ্চম ওভারে ক্রিজে যাওয়া সাব্বির রহমান শুরুতে একটু সময় নেন। এক পর্যায়ে তার রান ছিল ১৫ বলে ৩। দশম ওভারে নাসুম আহমেদকে দারুণ এক ফ্লিকে ছক্কা মেরে গা ঝাড়া দেন তিনি।
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দেন নাঈম ইসলাম। শতরানের জুটিতে দৃঢ় ভিত পেয়ে যায় লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। নিজেকে বেশ গুটিয়ে রেখেছিলেন নাঈম, সাবলীল ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন সাব্বির।
১ চারে ৬৭ বলে ৩৩ রান করে নাঈমের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন চিরাগ জানি। শুরুতে তিনিও একটু সময় নেন।
নাসিমের এক ওভারে স্লগ সুইপে ছক্কা ও দুটি পুল শটে চার মেরে সাব্বির ফিফটিতে পা রাখেন ৫৪ বলে। কিছুক্ষণ পর ফজলে মাহমুদের ওভারে দুই ছক্কার পর রানের গতি বাড়ান তিনি। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার শরিফউল্লাহকে টানা দুই ওভারে ওড়ান দুই ছক্কায়।
ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে লাগে স্রেফ ৩৪ বল। পেসার মুকিদুল ইসলামের ফুল টসে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৮৮ বলে। এগিয়ে যেতে থাকেন একই ভাবে। আসিফ আহমেদকে পুল করে ছক্কায় ওড়ানোর পর এনামুল হক জুনিয়রকে মারেন স্লগ সুইপে।
ছক্কার চেষ্টাতেই শেষ হয় সাব্বিরের চমৎকার ইনিংস। মুকিদুল ইসলামের স্লোয়ারে লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় সীমানায় আউট হন শরিফউল্লাহর ভালো ক্যাচে।
৯৫ রানের জুটি ভেঙে সাব্বিরের বিদায়ের পর রানের গতিমে দম দেন চিরাগ। ভারতীয় অলরাউন্ডার কিছুটা সাহায্য পান মাশরাফির কাছ থেকে।
৫২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে চিরাগ চড়াও হন বোলারদের ওপর। তার ঝড়ের বড় অংশ যায় নাসুমের ওপর দিয়ে। বাঁহাতি এই স্পিনার নিজের শেষ ২ ওভারে দেন ৪২ রান। তার শেষ তিন বল লং অন দিয়ে তিন ছক্কায় ওড়ান চিরাগ।
শেষ ৫ ওভারে ৭০ রান তোলে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।
নাসুম ১০ ওভারে ৭০ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। এর ৫০ রানই আসে বাউন্ডারি থেকে। রূপগঞ্জ টাইগার্সের সব বোলারই ছক্কা হজম করেন, সবচেয়ে বেশি পাঁচটি নাসুম।
রান তাড়ায় নাবিল ও সঞ্জিত সাহার স্পিনে সেভাবে জয়ের সম্ভাবনা কখনও জাগাতে পারেনি রূপগঞ্জ টাইগার্স।
আজমির আহমেদকে বোল্ড করে শুরুর জুটি ভাঙেন নাবিল। ছন্দে থাকা জাকির হাসানকে বিদায় করার পর আসিফ আহমেদকে থামান সঞ্জিত।
শুরুতে অনেক বেশি সময় নেওয়া ফজলে মাহমুদকে (২১ বলে ৩) বোল্ড করে দেন মাশরাফি। পরে মার্শাল আইয়ুবের প্রতিরোধ ভাঙেন নাবিল।
৯৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দল হারের ব্যবধান কমায় নাসিমের দৃঢ়তায়। সেঞ্চুরির পথে শরিফউল্লাহর সঙ্গে ৯২ রানের জুটি গড়েন তিনি। ফরহাদ রেজা, নাসুম, এনামুল জুনিয়রদের দ্রুত বিদায়ের পর তাকে কিছুটা সঙ্গ দেন মুকিদুল। তিন ছক্কা ও ১ চারে ১৩ বরে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
দারুণ বোলিংয়ে ৪৭ রানে ৫ উইকেট নেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার নাবিল। অফ স্পিনার সঞ্জিত ২ উইকেট নেন ৩৫ রানে।
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ৩২৫/৫ (সাব্বির হোসেন ৭, রকিবুল ১৬, সাব্বির রহমান ১২৫, নাঈম ৩৩, চিরাগ ৯৫*; মাশরাফি ১৭, ইরফান ৮*; নাসুম ১০-০-৭০-১, মুকিদুল ১০-১-৫০-২, এনামুল জুনিয়র ৬-০-৩৮-০, ফরহাদ ১০-৫৮-১, শরিফউল্লাহ ৬-০-৩৭-১, নাসিম ১-০-১৫-০, মাহমুদ ২-০-১৭-০, আসিফ ৫-০-২৮-০)
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৭০/৯ (জাকির ১৬, আজমির ১০, আসিফ ১০, মাহমুদ ৩, মার্শাল ২৬, নাসিম ১১৬*, শরিফউল্লাহ ২৯, ফরহাদ ১২, এনামুল জুনিয়র ২, মুকিদুল ২৩*; নাবিল ১০-০-৪৭-৫, মেহেদি রানা ৯-০-৫৯-১, সঞ্জিত ১০-০-৩৫-২, মাশরাফি ৭-০-৩৯-১, চিরাগ ৬-০-৩০-০, তানবীর ২-০-১৯-০, নাঈম ৬-০-৩৫-০ )
ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৫৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাব্বির রহমান