সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত সড়কে আগের রাত থেকেই যানবাহন
চলাচল বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় মারামরির বিরতিতে গাড়ির চাকা আর ওই পথে গড়ায়নি। রিকশা, অটোরিকশার
মত দুয়েকটি বাহন সাহস করে চলার চেষ্টা করলেও ছাত্ররা তাদের সরিয়ে দেয়।
পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান
জানান, বিকালে দিক থেকে সংঘর্ষের তীব্রতা কমে আসছিল। সন্ধ্যায় ইফতারের সময়টা মোটামুটি
চুপচাপই পার হয়।
“কিন্তু রাত পৌনে ৮টার দিকে ব্যবসায়ীরা আবার রাস্তায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু
করে। ছাত্ররাও ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়। আমরা তখন ব্যবসায়ীদের লাঠিচার্জ
করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি।”
ঢাকা কলেজের হল বন্ধের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা, অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ
এখন থেকেই ঢাকা কলেজে ছুটি: শিক্ষামন্ত্রী
সংঘর্ষ: ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ
সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজের মঙ্গলবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
শিক্ষার্থীদের একটি অংশ লাঠিসোঁটা হাতে কলেজ ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান
নিয়ে আছে, আর তাদের একটি অংশ কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করছে। সেখানে
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে হল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে
তারা।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সময় দেওয়া আগুনে নুরজাহান সুপার মার্কেটের নিচতলার একটি দোকানের সব মালামাল পুড়ে যায়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
ছোট-বড় ইটের টুকরো, ভাঙা জিনিসপত্র আর পুলিশ ব্যারিয়ার মিলে ঢাকা কলেজ
থেকে চন্দ্রিমা সুপার মারকেট পর্যন্ত রাস্তা দেখে আর রাস্তা বলে চেনার উপায় নেই।
নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট আর ঢাকা কলেজ এলাকায় বিপুল সংখ্যক
পুলিশ সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শাহেন শাহ সন্ধ্যায় ইফতারের পর
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপাতত সংঘর্ষ বন্ধ। তবে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
আমাদের আরো দেখতে হবে, পরিস্থিতি কোন দিকে যায়।”
এই সংঘর্ষের কারণে সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত অন্তত ৭৫টি
বিপণি বিতান বন্ধ রয়েছে বলে দোকান মালিকরা জানিয়েছেন। ঈদের এই ভরা মৌসুমে সংঘর্ষ আর
দোকানপাট বন্ধ থাকায় উদ্বেগ রয়েছে তাদের মধ্যে।
নিউ মার্কেটে সংঘর্ষের জেরে রাজধানীতে তীব্র যানজট
নিউ মার্কেটে সংঘর্ষের সূত্রপাত খাবারের দোকান থেকে
নিউ মার্কেটের সেই ফটকের সামনে আবর্জনার স্তূপ
নিউ মার্কেটের সংঘাত ‘কুল ডাউন হবে’, আশা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন, শিক্ষার্থী ও দোকানকর্মী ছাড়াও
পথচারী, হকার, সাংবাদিক রয়েছেন তাদের মধ্যে।
সোমবার নিউ মার্কেটে একটি খাবারের দোকানের কর্মীদের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর
বিতণ্ডার জের ধরে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু
হয়।
রাত ১২টা থেকে শুরু করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায়
ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া চলে। শেষ পর্যন্ত রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট
ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাতের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্ররা মানববন্ধন
করতে আবার রাস্তায় জড়ো হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরাও বেরিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আর ঢিল য়ুদ্ধ চলে বিকাল পর্যন্ত, পুরো নিউ
মার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
নিউ মার্কেটে সংঘর্ষে আহত অর্ধশত
নিউ মার্কেট এলাকা ফের রণক্ষেত্র
নিউ মার্কেটে সংঘর্ষের মধ্যে সাংবাদিকরাও আক্রান্ত, অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর
নিউ মার্কেট দোকানকর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
দুপুরে নূরজাহান মার্কেটের নিচে এবং চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায়
আগুন জ্বলতে দেখা যায়। চন্দ্রিমার আগুন কর্মীরাই নিভিয়ে ফেলেন। নূরজাহান মার্কেটের
আগুন ফায়ার সার্ভিস গিয়ে নেভায়।
নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী দোকান কর্মচারীদের হামলার
শিকার হন। ওই পথে একটি অ্যাম্বুলেন্সও ভাঙচুর করে তারা।
ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ বিকালে হল বন্ধের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস
ছাড়তে বলে। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রদের একটি অংশ রাস্তার মারামারি ফেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের
কার্যালয় ঘেরাও করে।
ওই এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও বিকালে খবর আসে
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। সেখানে অবস্থানরত অনেকেই মোবাইলে ঠিকমত নেট না পাওয়ার কথা বলেছেন,
যদিও কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি।
ঢাকা কলেজের ছাত্ররা বিকালে অডিটোরিয়ামে মিলিত হয়ে প্রশাসনের হল বন্ধের
সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। কলেজ ছাত্রলীগের একজন নেতা বলেন, যাই ঘটুক, তারা হল ছাড়বেন
না।