গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. আব্দুল বারেক রানা (৫৫), মো. হিরু মোল্লা
(৪০), মো. নিজাম উদ্দিন (৪৫), মো. জাকির হোসেন (৪৮) এবং মো. নজরুল ইসলাম (৪২)।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থান এবং নরসিংদীর শিবপুর থানা এলাকায় অভিযান
চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম
বিভাগ।
এসময় তাদের কাছ থেকে দুটি খেলনা পিস্তল, দুটি ছুরি, একটি চাপাতি,
একটি লোহার পাইপ, তাদের ব্যবহার করা পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং এক ভুক্তভোগীর একটি
মোবাইল ফোন ও একটি প্লায়ার্স উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার ডিএমপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম
কমিশনার হারুন অর রশিদ।
সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়,
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ঢাকা মহানগরীসহ আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে সকালে অফিসের
উদ্দেশ্যে বের হওয়া যাত্রীদের গতিবিধি নজরে রাখতেন।
“যেসব যাত্রী গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন
পরিবহনে উঠতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে ডেকে গন্তব্যস্থলে যাবে বলে গাড়িতে উঠায়। তারপর
তাদেরকে সুবিধাজনক নির্জন জায়গায় নিয়ে খুন-জখমের ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ ও চাঁদা আদায়
করে।
“এছাড়া তারা বিভিন্ন মহাসড়ক কিংবা রাস্তা থেকে
নগদ টাকা বহনকারীদের লক্ষ্য করে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে
সবকিছু লুট করে নিত।”
গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার বাউশিয়া এলাকায়
কর্মস্থলের উদ্দেশে বেরিয়ে তাদের ‘খপ্পরে পড়েন’ মো. রুস্তম খান
(৬৮) নামে এক ব্যক্তি। পরে যাত্রাবাড়ী থানায় তার করা মামলার তদন্তে পাঁচজনকে
গ্রেপ্তার করা হয়।
সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে যুগ্ম কমিশনার জানান, সকাল সাড়ে ৮টায়
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার বাদশা মিয়া রোডের মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুখে
হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার রুস্তমের সামনে এসে দাঁড়ায়।
হারুন অর রশিদ বলেন, “সেখান থেকে দুইজন লোক
নেমে রুস্তমকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে প্রাইভেটকারে উঠিয়ে হাত-পা বেঁধে চোখে কালো চশমা
পরিয়ে দেয়।
“গ্রেপ্তাররা রুস্তমকে বেধড়ক পিটিয়ে গলায় দড়ি
পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করার চেষ্টা করা অবস্থাতেই রুস্তমের মেয়েকে ফোন করতে বলে।
রুস্তমের স্ত্রী গ্রেপ্তারদের বিকাশ নম্বরে দুই দফায় এক লাখ টাকা পাঠান।
“সেই টাকাসহ রুস্তমের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন
এবং পকেটে থাকা দেড় হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি
নির্জন জায়গায় ফেলে যায়।”
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে জানিয়ে তিনি
বলেন, “তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সিডিএমএস পর্যালোচনা এবং তদন্তে
জানা যায়, তারা গত কয়েক বছর যাবত এ ধরণের অপরাধ করে আসছিল।”
যুগ্ম কমিশনার জানান, গ্রেপ্তার রানা, হিরু মোল্লা , নিজাম উদ্দিন
এবং জাকির ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং নজরুল ইসলাম এই ঘটনায় লুণ্ঠিত মালামাল
নিজের কাছে রেখে বিক্রি করেন।
তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা,
অস্ত্র, বিষ্ফোরক, মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলেও
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।