হুট করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মোশাররফকে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনারের বয়স হয়েছিল ৪০ বছর।
বাংলাদেশের হয়ে ৫টি ওয়ানডে খেলা মোশাররফ ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন দারুণ সফল। সবশেষ মাঠে নামেন তিনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। বিপিএল চলাকালে তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। টুর্নামেন্ট শেষে অল্প সময়ের মধ্যে কয়েক দফা জ্ঞান হারালে পরীক্ষা করানো হয় নানারকম। তাতেই ধরা পড়ে, তার মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে টিউমার। দ্রুতই তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারও সফল হয়।
প্রায় এক বছর ধরে চিকিৎসার পর মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। টুকটাক মাঠে আসাও শুরু করেন সেসময়। আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরার আশাও করেন। কিন্তু কোভিডের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের খেলাধুলা। ওই বছরের নভেম্বরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, টিউমার ফিরে এসেছে আবার।
এরপর দেশে ও বিদেশে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। কেমোথেরাপি দেওয়া হয় দফায় দফায়। গত কয়েক মাস ধরে একদমই ছিলেন শয্যাশায়ী। গত মাসে অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে বেশ কিছুদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। এরপর অবস্থার একটু উন্নতি হয়।
গত ১০ এপ্রিল ফেইসবুকে একটি পোস্টে নিজের জন্য দোয়া চান মোশাররফ রুবেল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটিই তার শেষ উপস্থিতি। দিন তিনেক আগে তার স্ত্রী চৈতি ফারহানা ফেইসবুকে জানান, বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে মোশাররফকে। কিন্তু আচমকা শরীর খারাপ করার পর এবার পাড়ি দিলেন ওপারে।
২০০৮ সালে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক মোশাররফের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ওয়ানডেতে এক উইকেট নেওয়ার পর বাদ পড়েন। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৬ সালে ফিরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে খেলে ৩ উইকেট নিয়ে অবদান রাখেন দলের জয়ে। কদিন পর আরেকটি ওয়ানডে খেলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেটিতে উইকেটশূন্য থাকার পর জায়গা হারান দলে। আর ফেরা হয়নি।
ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে তার ক্যারিয়ার প্রায় দুই দশকের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১২ ম্যাচ খেলে ৩৯২ উইকেট তার। সেরা বোলিং ১০৫ রানে ৯ উইকেট। ব্যাট হাতেও তিনি ছিলেন যথেষ্ট কার্যকর। ২টি সেঞ্চুরি ও ১৬ ফিফটিতে রান করেছেন ৩ হাজার ৩০৫।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১০৪ ম্যাচে তার উইকেট ১২০টি, ৮ ফিফটিতে রান দেড় হাজারের বেশি। টি-টোয়েন্টিতে ৫৬ ম্যাচে উইকেট ৬০টি।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর তার লড়াইয়ে নানাভাবে পাশে থেকেছে ক্রিকেট বোর্ড, বর্তমান-সাবেক ক্রিকেটাররা এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেক মানুষ ও সংগঠন। কঠিন এই লড়াইয়ে নিরন্তর সঙ্গী ছিলেন তার স্ত্রী। কিন্তু সবার প্রচেষ্টা আর ভালোবাসাকে ছিন্ন করে চরম নিয়তি মেনে নিতে হলো তাকে।