একজন রিসিপশনিস্ট সেনাদের নজর এড়িয়ে ডা. কিয়াওকে খবর দিলেও অপারেশনের মাঝপথে রোগী ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
কিন্তু নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা তো করতে হবে। তাই ডা. কিয়াও হলরুম দিয়ে দৌড়ে গিয়ে তার ও তার সহকর্মীদের ছেড়ে যাওয়া জুতা লুকিয়ে ফেললেন।
অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে কক্ষের বাইরে তারা জুতা রেখে গিয়েছিলেন। জুতাগুলো এই আশায় সরিয়েছেন যেন সেনারা বুঝতে না পারে তারা সেখানে আছেন। কিছুক্ষণ পর সেনারা সশব্দে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে পরে ডা. কিয়াও বলেন, ‘‘যদি তারা আমাদের খুঁজে পেত, তারা আমাদের গ্রেপ্তার করত। কিন্তু অস্ত্রোপচার চলাকালে আমি একজন রোগীকে ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারি না। রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া একজন চিকিৎসকের জন্য অপরাধ হতে পারে না।”
গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। কর্মজীবীদের মধ্যে সবার প্রথম চিকিৎসকরাই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
যেসব চিকিৎসকরা ওই সময় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল তাদের এখন খুঁজে খুঁজে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে জানায় নিউ ইয়র্ক টাইমস। জান্তাশাসকরা শুরু থেকেই চিকিৎসাকর্মীরে উপর খড়গহস্ত হয়ে আছে।
যেমন ডা. কিয়াওকে ধরতে গত মাসে হাসপাতালে হানা দিয়েছিল সেনাবাহিনী। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এটা চলছে। সেনাবাহিনী চিকিৎসকদের তাদের বাড়ি বা হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করছে। তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত নানা বিদ্রোহী বাহিনীর আহত যোদ্ধাদের খোঁজে হাসপাতালগুলোতে তল্লাশি চলছে। এছাড়া, যেসব বেসরকারি হাসপাতাল জান্তাসরকারের বিরোধিতা করা চিকিৎসকদের নিয়োগ দিয়েছে সেগুলো বন্ধ করে দেয়ার হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
মিয়ানমারের সেনারা লুটতরাজ করার জন্য কুখ্যাত। তারা চিকিৎসকদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের নগদ অর্থ, সোনা-গহনা এবং দামি গাড়ি জব্দ করছে।
হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে বড় অঙ্কের নগদ অর্থ দাবি করছে। অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত ১৪০ জন চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৮৯ জন এখনো কারাগারে আছেন।
অন্তত ৩০ জন চিকিৎসককে হত্যা করা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক ফিজিশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস মিয়ানমারকে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশ্বের সব থেকে বিপজ্জনক দেশের একটি বলে বর্ণনা করেছে।
জান্তা সরকারের বিরোধিতা করা চিকিৎসকদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করার ফলে মিয়ানমারে চিকিৎসকের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে।
দেশটিতে স্বাস্থ্য খাতে জরুরি অবস্থা অব্যাহত আছে। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যান্য অনেক খাতের সঙ্গে দেশটির স্বাস্থ্য সেবা খাতও বিলুপ্ত হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে জানায় মানবাধিকার সংগঠন ‘নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস ডকুমেনটেশন বার্মা।
মিয়ানমারে বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ শিশু নিয়মিত টিকা থেকে বঞ্চিত। ফলে হাম বা এ ধরনের অন্যান্য রোগে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে।
মিয়ানমার জুড়ে ৪০ শতাংশের কম মানুষ কোভিড-১৯ টিকার দুই ডোজ পেয়েছেন। অনেক রোগী নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না। অনেকে সময়মত অস্ত্রোপচারের সুযোগ পাচ্ছেন না।