ক্যাটাগরি

দ্বিতীয় দফায় চট্টগ্রামের বারইপাড়া খালের ব্যয় বাড়ল ৮.৪%

এ দফায় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে প্রকল্প ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। চার বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে
কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় প্রকল্প
সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবারের সংশোধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) যে ২৫ শতাংশ ব্যয় নির্বাহের
কথা ছিল, তা আর করতে হচ্ছে না। পুরো প্রকল্প হবে সরকারি তহবিলের অর্থায়নে।

এ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় কোনো বড় প্রকল্প ম্যাচিং ফান্ড
(উন্নয়ন প্রকল্পের মোট ব্যয়ের যে অংশ সিটি করপোরেশনকে দিতে হত) ছাড়াই অনুমোদন পেল।

সভায় উপস্থিতি চট্টগ্রামের সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। তিনি সদয় সম্মতি দিয়েছেন। পুরো প্রকল্পই
সরকারি ফান্ডের টাকায় করা হবে। এর আগেও নগরীর সড়ক উন্নয়ন-সম্প্রসারণ ও নানা অবকাঠামো
নির্মাণে প্রায় ২হাজার ৪৯১ কোটি টাকার প্রকল্পেও তিনি ম্যাচিং ফান্ড মওকুফ করেছিলেন।”

গত নভেম্বরে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পটি
উদ্বোধনের পর কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে মেয়র রেজাউল বলেন, “এখন দুই পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণের
কাজ চলছে। গাইড ওয়াল হয়ে গেলে মাটি কাটা হবে।

চারগুণ ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিতীয়বার উদ্বোধন হচ্ছে বারইপাড়া খাল খননের কাজ
 

চট্টগ্রাম নগরীর সড়ক উন্নয়নে ২৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প
 

“আজ একনেক সভায় অনুমোদনের পর টাকা বা অন্য কোনো বাধা আর রইল না। আমরা চাই
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই খাল খননের কাজ শেষ করতে।”

চট্টগ্রাম নগরীরওয়াইজর পাড়া এলাকায় মঙ্গলবার বিকালে নিজেই স্কেভেটর চালিয়ে মাটি তুলে বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন কাজের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দীন। ছবি: সুমন বাবু

চট্টগ্রাম নগরীরওয়াইজর পাড়া এলাকায় মঙ্গলবার বিকালে নিজেই স্কেভেটর চালিয়ে মাটি তুলে বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন কাজের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দীন। ছবি: সুমন বাবু

এ প্রকল্পে ২৫ শতাংশ অর্থায়ন করতে হলে সিটি করপোরেশনের প্রায় সাড়ে তিনশ
কোটি টাকা প্রয়োজন হত, যা এখন আর লাগবে না।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ১৯৯৫ সালে করা ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত দুই দশমিক নয়
কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি খননের সুপারিশ করা হয়।

তার প্রায় দুই দশক পর ২০১৪ সালের জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী
কমিটির (একনেক) সভায় বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প অনুমোদন পায়।

তখন ঠিক হয়েছিল, ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে
তিন বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে।

কিন্তু সরকারি অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এবং জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় প্রথম
মেয়াদে প্রকল্পের কোনো কাজই করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।

এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বর একনেকে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করে আবারও অনুমোদন
দেয়। সংশোধনে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। ব্যয় বেড়ে হয় ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা।

এবার সবশেষ সংশোধনে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন।

প্রকল্প গড়াল ৫ বছরে, ব্যয় ৩ গুণ বেড়ে
 

চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা: নতুন তিনটি খাল খননের সুপারিশ
 

এই ব্যয়ের মধ্যে ১ হাজার ১০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকাই যাবে প্রায় ২৫ দশমিক ২৩৫
একর জমি অধিগ্রহণে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে তখনকার মেয়র আ জ ম নাছির প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
করলেও তখন জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজ আর এগোয়নি।

২.৯ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি হবে ৬৫ ফুট চওড়া। খালের দুই পাশে ২০ ফুট করে
সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি রাস্তা হবে এবং ছয় ফুট প্রস্থের দুটি করে ওয়াকওয়ে হবে।

বারইপাড়া হাইজ্জারপুল থেকে শুরু হয়ে খালটি নূর নগর হাউজিং, ওয়াইজের পাড়া,
বলিরহাটের বলি মসজিদের উত্তর পাশ দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে মিশবে।

খাল খনন শেষ হলে পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণ শুলকবহর, চান্দগাঁও, নাসিরাবাদ,
মোহরা, পূর্ব ও পশ্চিম ষোলশহর, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া ও চাক্তাই সংলগ্ন এলাকার মোট আটটি
ওয়ার্ডের ১০ লাখ বাসিন্দা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে বলে কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা ।