ইউনিভার্সিটি অফ টরোন্টোর গবেষণা সংস্থা
সিটিজেন ল্যাব বলছে, ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের পেগাসাস স্পাইওয়্যারের সম্পর্কে তারা ২০২০
ও ২০২১ সালেই সতর্ক করে দিয়েছিল এবং ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে সংক্রমণের সঙ্গে সংযুক্ত আরব
আমিরাতের লোকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছিল তারা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থার
কাছে পেগাগাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করার কথা এরইমধ্যে স্বীকার করেছে এই স্পইওয়্যারের
ইসরায়েলী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ। টার্গেট ব্যক্তির ফোন থেকে ব্যক্তিগত ও
গোপন তথ্য চুরির করতে সক্ষম এই স্পাইওয়্যারটি।
তবে, ব্রিটিশ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের
ফোনে স্পাইওয়্যার সংক্রমণে তাদের সফটওয়্যার ব্যবহারের অভিযোগকে অস্বীকার করেছে এনএসও
গ্রুপ।
ছবি: ফরবিডেন স্টোরিস
সাইবার নিরাপত্তা এবং ইলেকট্রনিক নজরদারী
প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখে সিটিজেন ল্যাব। গবেষণা সংস্থাটি বলছে, ১০ ডাউনিং স্ট্রিট এবং
যুক্তরাজ্যের ‘ফরেইন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস’-এর নেটওয়ার্কে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ছড়িয়ে
পড়েছে সন্দেহে ২০২০ এবং ২০২১ সালেই ব্রিটিশ সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছিল তারা।
পেগাসাসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ফোনের
পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডেটা চুরি করার পাশাপাশি ভুক্তভোগীর কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখার
সুযোগ পায় স্পাইওয়্যারটির ব্যবহারকারী।
বরাবরই স্পাইওয়্যারটির পক্ষে কথা বলেছে
এনএসও গ্রুপ। ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানটির দাবি, কেবল ‘নির্বাচিত দেশের’ সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা
বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অপরাধী এবং উগ্রপন্থীদের মোকাবেলার অস্ত্র হিসেবে স্পাইওয়্যারটি
বিক্রি করেছে তারা।
সিটিজেন ল্যাব বলছে, পেগাসাস সংক্রমণের
শিকার অন্তত ৬৫ জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে তারা। এর মধ্যে আছেন ইউরোপিয়ান
পার্লামেন্টের সদস্য, স্পেনে কাতালোনিয়ার একাধিক শাসক, বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতা,
আদালতের জুরি বোর্ডের সদস্য এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী দ্য নিউ ইয়র্কার
এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি ফোনসহ বেশ কিছু ডিভাইস
পেগাসাসের খোঁজে পরীক্ষা করেও দেখা হয়েছিল। কিন্তু, কোনো চিহ্ন না রেখেই নিজের সব ডেটা
মুছে দেওয়ার সক্ষমতা আছে পেগাসাসের। ফলে আদৌ ডিভাইসগুলো স্পাইওয়্যার শিকার হয়েছিল কি
না, হলেও কোনো ডেটা চুরি হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি সাইবার নিরাপত্তা
গবেষকরা।
সিটিজেন ল্যাব বলছে, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র
দপ্তরে পেগাসাস সংক্রমণের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, সাইপ্রাস এবং জর্ডানের অপারেটররা
জড়িত ছিল বলে তারা বিশ্বাস করে।
যুক্তরাজ্য সরকারের যেসব কর্মীরা বিদেশে
দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং বিদেশি সিম কার্ড ব্যবহার করছিলেন তাদের মাধ্যমেই সম্ভবত
স্পাইওয়্যারটি ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা সিটিজেন ল্যাবের। একই প্রক্রিয়ায় উগান্ডায়
দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন কর্মকর্তাদের ডিভাইসে পেগাসাস সংক্রমণ হয়েছিল। অথচ এনএসও গ্রুপ
দাবি করে আসছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফোন নম্বরে হামলা চালানোর ‘সক্ষমতা নেই’ তাদের সফটওয়্যারের।
গেল বছরেই সংবাদকর্মীদের একটি আন্তর্জাতিক
জোটের তদন্তে উঠে এসেছিল, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এনএসও গ্রুপের ভুক্তভোগীর তালিকায়
যুক্তরাজ্যের অন্তত চারশ ফোন নম্বর ছিল। এর মধ্যে সিংহভাগ ফোন নম্বরে নজরদারীর মূল
হোতা ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।
দুবাইয়ের শাসক সাবেক স্ত্রীর ফোন হ্যাক
করতে পেগাসাস ব্যবহার করেছেন, এই খবর প্রকাশের পর ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে
সম্পর্ক চ্ছিন্ন করেছে এনএসও গ্রুপ। পেগাসাস ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন দুবাইয়ের
শাসক।
বিবিসি জানিয়েছে, পেগাসাস স্পাইওয়্যারের
বৈশ্বিক ভুক্তভোগীদের তালিকায় আছেন অধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী এবং রাজনীতিবিদরা। তবে,
এনএসও গ্রুপ দাবি করে আসছে, তথ্য-উপাত্তের উপস্থাপনে ভুল হচ্ছে।
গেল বছরে পেগাসাস কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার
পর এনএসও গ্রুপকে কালো তালিকাভূক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বিবিসির কাছে নিই ইয়র্কারের সাম্প্রতিক
প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য সরকারের
এক মুখপাত্র।
আর এনএসও গ্রুপের এক মুখপাত্র বলেছেন,
“এই অভিযোগগুলো নিয়ে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা আবারও মিথ্যা এবং এনএসও পণ্যের
সঙ্গে কারিগরি বা চুক্তিভিত্তিক কোনো সম্পর্ক নেই।”
“রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এনএসও গ্রুপকে টার্গেট
করে যাচ্ছে কয়েকটি প্রচারণা সংস্থা, যেমন সিটিজেন ল্যাব এবং অ্যামনেস্টি। তারা ঘোলাটে
এমং অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে ভুল এবং অপ্রমাণিত প্রতিবেদন তৈরি করছে।”
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত সংযুক্ত
আরব আমিরাতের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি। তবে, তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া
পায়নি বার্তাসংস্থাটি।