বুধবার এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আদালতের অনুমতি পাওয়ায় এখন বিষয়টি চলে গেল যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের হাতে।
প্রত্যর্পণের বাকি বিষয়গুলো তিনিই চূড়ান্ত করবেন। অ্যাসাঞ্জ আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হলে গোপনীয় সামরিক ও কূটনৈতিক নথি ফাঁসের জন্য তার বিচার করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ আটকাতে অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। কিন্তু গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট অ্যাসাঞ্জের ওই আবেদন বাতিল করে দেয়। তারপরই ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে এই রায় এল।
শুনানিতে বেলমার্শ কারাগার থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে হাজিরা দেন আ্যাসাঞ্জ। একটি জ্যাকেট ও টাই পরে ছিলেন তিনি। এই কারাগারেই গত মাসে অ্যাসাঞ্জ তার দীর্ঘদিনের পার্টনার স্টেলা মরিসকে বিয়ে করেছিলেন। অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী মরিস বুধবার আদালতের পাবলিক গ্যালারিতে উপস্থিত হন।
আদালতের ৭ মিনিটের শুনানির পর প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট পল গোল্ডস্প্রিং অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণের আদেশ দেন। অ্যাসাঞ্জকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘‘খুব সাধারণ ভাবে বললে, আপনার মামলাটি সিদ্ধান্তের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠাতে আমি দায়বদ্ধ।”
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী মার্ক সামার্স আদালতের প্রধান ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছেন, ‘‘মামলাটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো ছাড়া তার হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না। এই মুহূর্তে অ্যাসাঞ্জের দলের পক্ষে নতুন প্রমাণ উপস্থাপনের দ্বার খোলা ছিল না। কিন্তু সেখানে নতুন কিছু অগ্রগতি হয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাজা এবং তাদের শর্তাবলী সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ‘গুরুতর কিছু দাখিল’ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের একটি উচ্চ আদালত অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের পক্ষে রায় দিয়েছিল। অ্যাসাঞ্জের কারাগারের অবস্থা কেমন হবে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়তা দেওয়ার পর উচ্চ আদালত ওই রায় দিয়েছিল। যে রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন অ্যাসাঞ্জ।
বুধবার আদালত শুনানি চলাকালে বাইরে অ্যাসাঞ্জের সমর্থকরাও জড়ো হয়েছিলেন। যাদের মধ্যে লেবার পার্টির সাবেক প্রধান জেরেমি করবিন ছিলেন।
করবিন বলেন, তিনি আশা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাকস্বাধীনতা, সাংবাদিকতা এবং গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানোর যে ‘বড় দায়িত্ব’ তার কাঁধে আছে সেটা তিনি ভুলে যাবেন না এবং অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দেবেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘তিনি সামরিক পরিকল্পনা, সামরিক নীতি এবং আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্বকে জানানো ছাড়া আর কিছুই করেননি। আমি তো মনে করি তিনি (অ্যাসাঞ্জ) ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।”
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অ্যাসাঞ্জ ২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন।
ওই সব নথির মধ্যে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধ সম্পর্কিত ৭৬ হাজার এবং ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত আরো ৪০ হাজার নথি ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও পেন্টাগনকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গুপ্তচর আইন লঙ্ঘন ও সরকারি কম্পিউটারে হ্যাকিংসহ ১৮টি অভিযোগ এনেছে। দোষ প্রমাণিত হলে উইকিলিকস ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জকে কয়েক দশক কারাগারে কাটাতে হতে পারে।