ক্যাটাগরি

‘সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে’ নিউ মার্কেটে সংঘাত শুরুর ভিন্ন কারণ

নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শাহীন আহমেদ মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুই দোকানের রেষারেষি থেকে এই সংঘাতের সূত্রপাত বলে তিনি একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখতে পেয়েছেন।

মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে এক দফা সংঘর্ষের পর দিনভর সংঘর্ষ চলে নিউ মার্কেটসহ আশপাশের দোকানকর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের। এতে একজন নিহত এবং অর্ধশত আহত হয়।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং দোকান মালিক উভয় পক্ষই শুরুতে জানিয়েছিল, ক্যাপিটাল হোস্টেল নামে এক খাবার দোকান থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত।

সাখাওয়াত হোসেন নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চতুর্থ বর্ষ আর মাস্টার্সের তিনজন শিক্ষার্থী রাতে খেতে যায়। দাম যা আসছে, তার চেয়ে একটু কম দিতে চেয়েছিল তারা। এসময় ঝগড়ার এক পর্যায়ে দোকানে থাকা ধারালো ছুরি নিয়ে শিক্ষার্থীদের গুরুতর জখম করে দোকানিরা।”

নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শাহীনও দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ওই খাবারের দোকানের লোকজনের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাকবিতণ্ডার পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে এসে হামলা চালায়।”

নিউ মার্কেটের সেই ফটকের সামনে আবর্জনার স্তূপ

ব্যস্ত নিউ মার্কেট এলাকায় দিনভর সংঘাত, কার কী দায়?
 

তবে রাতে বক্তব্য বদলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমে আমাকে বলা হলো- নিউ মার্কেটের ৪ নম্বর গেইটের কাছে একটি খাবারের দোকানের লোকজনের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাকবিতণ্ডার পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে এসে হামলা চালায়।

“কিন্তু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মনে হল,  শিক্ষার্থীদের আমরা (ব্যবসায়ী) আমন্ত্রণ করে এনেছি।”

কী হয়েছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যা থেকেই ইফতারির দোকান বসানো নিয়ে পাশাপাশি দুটি দোকান ‘ক্যাপিটাল হোস্টেল’ ও ‘ওয়েলকাম’ এর কর্মচারীদের মধ্যে ঝামেলা চলছিল।

“এক পর্যায়ে হাতাহাতিও হয়, তখনই ওয়েলকামের এক কর্মচারী ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীর সঙ্গে খাতির আছে বলে ডেকে আনে (শিক্ষার্থীদের), আর তাতে এটা এতদূর পর্যন্ত গড়াল।”

‘ওয়েলকাম’দোকানের কর্মচারীরা ঢাকা কলেজের ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে ডেকে আনার পর তারা ক্যাপিটাল হোস্টেলের কর্মীদের কাছে মার খায় বলে জানান শাহিন।

“তারা (মার খাওয়া ছাত্র) নিশ্চয়ই হোস্টেলে গিয়ে অন্য কথা বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করে নিয়ে আসে। আর এজন্যই রাতের ও আজকে দিনভর সংঘর্ষ।”

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সময় নুরজাহান সুপার মার্কেটের নিচ তলার দোকানে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সময় নুরজাহান সুপার মার্কেটের নিচ তলার দোকানে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

খাবারের দাম কম দেওয়া নিয়ে সংঘাতের সূত্রপাতের আগে যে কথা বলা হচ্ছিল, সে বিষয়ে শাহিন বলেন, “এটা এই ক্ষেত্রে বিশ্বাস হচ্ছে না। কারণ সিসি ক্যামেরা ফুটেজ তা বলছে না।”

নিউ মার্কেটের ৫৫০টি দোকান রয়েছে জানিয়ে সভাপতি বলেন, “অনেক দোকানদারের ভাই বা আত্মীয়-স্বজন ঢাকা কলেজসহ অনেক জায়গায় পড়াশোনা করে থাকে।”

সভাপতি হিসেবে ওই দোকানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শুনেছি, এই দুই দোকানের মালিক পরস্পর আত্মীয়। কিন্তু তাদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, পলাতক।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেনশাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ ওই সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।”

ঈদের আগে যখন বেচা-কেনার ব্যস্ত সময়, তখন এই সংঘাতের অবসান দ্রুত চাইছেন নিউ মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শাহিন।

অন্যদিকে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারাও মীমাংসার চেষ্টা করছেন।