তিনি বলেছেন, “ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে একজনের প্রাণ গেছে, কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন।
“পু্লিশের যে কর্মকর্তারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে বলেছেন যে, স্ট্র্যাটেজিক কারণে আমরা (পুলিশ) নিষ্ক্রিয় ছিলাম। কিন্তু কোন স্ট্র্যাটেজিক কারণে আপনারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন?”
বুধবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন ফখরুল। বিএনপির উদ্যোগে দলের ‘গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার’ নেতাকর্মীদের পরিবারকে ঈদ সহযোগিতা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “পুলিশের সেই স্ট্র্যাটেজিক কারণ হচ্ছে, দেশের মানুষ তারা নিহত হবে, এই স্ট্র্যাটেজিক কারণে যে, একটা সমস্যা তৈরি হবে এবং সেই সমস্যা নিয়ে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদেরকে প্রভাবিত করবে?”
তিনি প্রশ্ন করেন, “কোন স্ট্র্যাটেজিক কারণ থাকে, যখন বিএনপির ছোট-খাটো কর্মসূচি থাকে, তা প্রতিরোধ করার জন্য শত শত হাজার হাজার পুলিশ মুহূর্তের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়? কোন স্ট্র্যাটেজিক কারণে গুলি করে বিএনপির মিছিলগুলো স্তব্ধ করে? কোনো স্ট্র্যাটেজিক কারণে মানুষ হত্যা করে বিরোধী দলের যে বৈধ আন্দোলন, সেটাতে ব্যাহত করে দেয়?”
সরকার ‘ব্যর্থ’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “এই ব্যর্থ সরকার এখন রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করেছে।… কোথাও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই।”
সোমবার রাত থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার দিনভর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের দোকানকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নিউ মার্কেটের ৪ নম্বর গেইটের কাছে দুই দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে ঝামেলার জেরে ওই সংঘর্ষ শুরু হয়। পরদিন মঙ্গলবার কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নিউমার্কেট এলাকা।
সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “পুলিশকে জবাবদিহি করতে হয় না, অন্যান্য ডিপার্টমেন্টগুলো আছে সেখানে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না, চুরি করে, দুর্নীতি করে সেখানে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না।
“এই যে এতোগুলো দুর্নীতির খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হল, আমরা বললাম তারপরেও সেগুলোর বিষয়ে কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে নাই দুদক।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার প্রসঙ্গে মহাসচিব বলেন, “১৫ বছর আগে দুদকের একটা মামলা গতকাল (মঙ্গলবার) রিভাইব করা হয়েছে। খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একটি মামলা একইভাবে রিভাইব করা হয়েছে। এখন পুরোপুরি ডাইভারশন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যখন তাদের দুর্নীতির বিষয়গুলো প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
“আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, কয়েকদিন আগে বেরিয়েছে, কুষ্টিয়ার স্কুল শিক্ষিকা, শত কোটি টাকার উপরে তার সম্পদ। তার স্বামী এখন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং তার হাজার কোটি টাকার উপরে সম্পদ। তিনি একজন অত্যন্ত প্রভাবশাল আওয়ামী লীগ নেতা…। প্রত্যেকটি জেলা, প্রত্যেকটি উপজেলায় এমনকি ইউনিয়নের পর্যন্ত দুর্নীতি করছে ওরা।”
দেশে ‘একদলীয় ব্যবস্থা’ চলছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে ছদ্মবেশী একদলীয় ব্যবস্থা চলছে। এখন তাদের লক্ষ্য আগামী যে নির্বাচন আছে, সেই নির্বাচনকে কী করে আগের মত তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবে, আবার তারা ক্ষমতায় আসবে সেটাই তারা করছে।
“আজকে এটা প্রমাণিত সত্য, দেশে গণতন্ত্র নাই। আজকে প্রমাণিত সত্য দেশে অবৈধ সরকার জবরদখল করে ক্ষমতায় বসে আছে, আজকে প্রমাণিত সত্য তারা গুম করে, খুন করে, নির্যাতন করে মানুষকে কারাগারে পাঠিয়ে তাদেরকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে পাঁচ নেতাকর্মীর পরিবারকে ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপির মহাসচিব। অন্যদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুর রহমান রুমন, নিহত ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুর স্ত্রী সুমি আখতার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
বিএনপির মীর হেলাল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নাজমুল আহসান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আব্দুল বারী ড্যানি, তাইফুল ইসলাম টিপু উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।