এই হত্যা মামলায় পাঁচ
আসামি গ্রেপ্তারের পর বুধবার দুপুরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় র্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত
সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
১৩
এপ্রিল বিকালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব হাজিপুর গ্রামে বাড়ির পাশে একদল হামলকারীর
গুলিতে চার বছরের শিশু তাসকিয়া আক্তার জান্নাত
নিহত হয়। ওই সময় তাসকিয়া তার বাবা মো. আবু জাহেরের কোলে ছিল।
এই
ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে সুবর্ণচরের চরক্লার্ক এলাকা থেকে র্যাব পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এই গ্রেপ্তারদের বরাত
দিয়ে বুধবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার
খন্দকার আল মঈন জানান, শিশু তাসকিয়া আক্তার জান্নাত হত্যা মামলার আসামিরা ঘটনার ৪/৫
দিন আগে তাসকিয়ার বাবা মো. আবু জাহেরকে হত্যার পরিকল্পন করেন। এজন্য মামলার প্রধান
আসামি রিমন ও তার ৬/৭ জন সহযোগী মামলার ২ নম্বর আসামি মহিনের বাড়ির সামনে বসে পরিকল্পনা
চূড়ান্ত করেন। পরে মহিনের দেওয়া ২১ হাজার টাকা দিয়ে একটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনেন রিমন।
ওই অস্ত্রের গুলিতেই প্রাণ যায় তাসকিয়ার।
“এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে
সন্ত্রাসীদের কাছে মিনতি করেও তাদের মন গলাতে পারেননি আবু জাহের,” বলেন খন্দকার আল
মঈন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি
জানান, ১৩ এপ্রিল বিকালে তাসকিয়াকে নিয়ে আবু জাহের বাড়ির পাশে একটি দোকানে চকলেট ও
চিপস কিনতে যান। এ সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রিমন তার ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ নিয়ে সেখানে
যান।
“আবু জাহেরকে দেখে
রিমন গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের ছোড়া ইটে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাসকিয়া।
এ সময় তাসকিয়ার বাবা মেয়েকে না মারার জন্য সন্ত্রাসীদের কাছে মিনতি করেন।”
খন্দকার আল মঈন বলেন,
আহত অবস্থায় মেয়েকে কোলে নিয়ে জাহের বাড়ি ফেরার সময় রিমন তার হাতে থাকা অগ্নেয়াস্ত্র
থেকে তাসকিয়া ও তার বাবাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় বাপ মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
সেখান থেকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ঢাকায়
নেওয়ার পথে মারা যায় তাসকিয়া।
গ্রেপ্তার আসামিদের
বরাতে আল মঈন আরো বলেন, ঘটনার পর রিমন ও তার সহযোগীরা একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায়
আত্মগোপন করেন। রোজা ও ঈদ উপলক্ষে ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরাত দেখে দুইদিন পর
তারা নোয়াখালী ফিরে সুবর্ণচরের চরক্লার্কে আত্মগোপন
করেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে
১০টার দিকে গোপন সংবাদ পেয়ে র্যাব-১১ এর একটি দল চরক্লার্ক এলাকায় অভিযান পরিচালনা
করে। এ সময় রিমন ও তার সহযোগীরা র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। জবাবে র্যাবও
পাল্টা গুলি ছোড়ে। কিছুক্ষণ গোলাগুলির পর র্যাব চারদিক থেকে ঘেরাও করে পাঁচ আসামিকে
গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অধিকতর তদন্তের স্বার্থে মঙ্গলবার
বেগমগঞ্জ মডেল থানা থেকে মামলাটি ডিবিতে পাঠানো হয়েছে। ওইদিন দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল
পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি তাসকিয়ার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন।
সৌদি আরব প্রবাসী আবু
জাহের দুই মাস আগে মেয়েকে দেখতে দেশে ফেরেন। জন্মের পর তিনি মেয়েকে দেখেননি। তাই এবারই
প্রথম দেখে বাবার সঙ্গে সঙ্গে থাকত তাসকিয়া।
পুলিশ ও স্থানীয়রা
জানিয়েছে, এলাকায় মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুটি পক্ষ মুখোমুখি ছিল। এই বিরোধে
আবু জাহেরের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে এ নিয়ে সালিশ বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকায়
একটি পক্ষ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। ওই কারণেই তার উপর হামলা হয় এবং শিশু তাসকিয়া প্রাণ
হারায়।
ঘটনার পরদিন তাসকিয়ার
খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বাদশা, রিমনসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয়
আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে বেগমগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় মোট নয় আসামিকে
গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আরও পড়ুন:
বাবার কোলে শিশু গুলিতে নিহত: প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ৫
বাবার কোলে শিশুকে গুলি করে হত্যা: আরেক আসামি আটক