গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মো. রাশেদ হোসেন প্রান্ত (২৭) এবং তার স্ত্রী মৌসুমী খাতুন (২৩)।
তাদের ১৩টি ফেইসবুক আইডি ও তিনটি হোয়াটসঅ্যাপ আইডি ব্যবহারের তথ্য মিলেছে। তিনটি মোবাইল ফোন, চারটি মোবাইল সিমও জব্দ করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে।
বৃহস্পতিবার রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
এরপর দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এই দম্পতির প্রতারণার বিস্তারিত তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার।
জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান ইডব্লিউ ভিলা মেপিকার চিফ লিগ্যাল অফিসার আবু সাঈদ সম্প্রতি একটি ফেইসবুক পেইজ পর্যালোচনা করে দেখতে পান সেখানে তাদের প্রতিষ্ঠানের ডা. তাসনিম খানের পদবী ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে চিকিৎসার নামে ভুয়া প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিজের প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় আবু সাঈদ শেরে বাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন।
সেই মামলার সূত্র ধরে এই দম্পতির সন্ধান মেলে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা হাফিজ।
তিনি বলেন, যৌন সমস্যায় আক্রান্তরা সাধারণত প্রকাশ্যে চিকিৎসকদের কাছে পরামর্শ নিতে সঙ্কোচ বোধ করেন, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতারণার জাল ছড়ানো হয়েছিল।
“এ ধরনের রোগীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারক চক্রের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করে। গ্রেপ্তাররা দেশের খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় চিকিৎসকদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ফেইসবুকে ভুয়া পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দিত। তারা কখনও চিকিৎসক, কখনও চিকিৎসকের সহকারী পরিচয় দিয়ে কণ্ঠ পরিবর্তন করে রোগীদের সঙ্গে কথা বলার পর রোগীদের কাছ থেকে টেলিমেডিসিন সেবার বিনিময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন।”
এক্ষেত্রে সরাসরি সাক্ষাতে পরামর্শ ফি ২ হাজার টাকা এবং টেলিমেডিসিনে ফি ১ হাজার টাকা প্রচার করে চক্রটি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী পেত বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা হাফিজ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা মোবাইল ফোন, ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রেসক্রিপশন দেয় ও ওষুধ বিক্রি করে।
“করোনাভাইরাস মহামারী চলাকালে মানুষ যখন গৃহবন্দি, তখন গ্রেপ্তার রাশেদ হোসেন প্রান্ত তার স্ত্রী মৌসুমী খাতুনকে নিয়ে ফেইসবুকে জনপ্রিয় ডাক্তার তাসনিম খান, ডা. হুমাইরা হিমি, ডা. মার্জিয়া সুষমা, ডা. আরশিয়া আহি, ডা. সানজিদা ইসলাম, ডা. নাফিসা তাসনীম ও ডা. আলভি রহমানদের নাম পদবী ব্যবহার করে ভুয়া ফেইসবুক আইডি খুলে যৌন, চর্মসহ একাধিক রোগের বিষয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করে ফেসবুক মেসেঞ্জার ও একাধিক হোয়াটসআপ নম্বরের মাধ্যমে অসুস্থ মানুষের সেবার নামে ভুয়া প্রেসক্রিপশন দিয়ে বিকাশ, নগদ, রকেটের মাধ্যমে কৌশলে রোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।”
এছাড়া বিভিন্ন নারীর ছবি সংগ্রহ করে সেগুলো সম্পাদনা করে ‘আপত্তিকর’ ছবি তৈরির পর মেসেঞ্জার ও একাধিক হোয়াটসআপ নম্বরে পাঠিয়ে কৌশলে রোগীসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে তারা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানায় গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
প্রতারকদের এড়ানোর পরামর্শ দিয়ে হাফিজ বলেন, “টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার আগে কোনো সন্দেহ মনে হলে আমাদেরকে জানাতে পারেন। অথবা অনলাইনে সেবা নেওয়ার চাইতে সরাসরি গিয়ে অথবা পরিচিত চিকিৎসদের পরামর্শ নেওয়া ভালো।”
ভুয়া এসব চিকিৎসকদের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরও বেশি নজরদারি দেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।