বৃহস্পতিবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপিকে ‘নির্বাচনে আনার’ বিষয়টি কোন প্রেক্ষাপটে, কীভাবে এসেছিল তা তুলে ধরেন তিনি।
গত ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের। ওই বৈঠকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার উদ্যোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানানোর খবর আসে।
পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, নিজেদের ‘অপকর্ম’ থেকে রেহাই পেতে এবং বিএনপিকে ‘নির্বাচনে আনতে’ সরকার বিদেশিদের কাছে ‘ধর্ণা দিচ্ছে’।
বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে সরকার:ফখরুল
যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপান, পালাও এবং সিঙ্গাপুর সফর করে দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
আলোচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা সব দলকে চাই, সব দল মোটামুটি আসে। কিন্তু একটা বড় দল আছে, তারা পাবলিকলি বলে ইলেকশন করবে না। কেউ যদি ইচ্ছা করে না করতে চায়..
“তারা পাবলিকরে ভয় পায়। কারণ তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসেনি। ক্যান্টনমেন্টে তাদের জন্ম, তারা ওই ধরনের জিনিস আশা করে। তো, এদের আমরা আনতে পারি নাই।”
সংলাপের কিছু অংশ তুলে ধরে মোমেন বলেন, এরপর ব্লিংকেন জানতে চান, “কেন আনতে পারেন না?”
“বললাম, আপনি চাইলে নিয়ে আসেন। দেখেন আপনি পারেন কি না? কারণ আমাদেরও সুযোগ সমান। বাকি সব পার্টি আসে। ওরা যদি না আসে আমি কী করব?
“বললেন, না আসলেতো ‘ইউ ক্যানট ডু এনিথিং’।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন “এটা কথার মধ্যে যে, আমরা বলেছি যে, ওরা আসে না। আমরা সব রকমের প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু আইনের মাধ্যমে ইলেকশনে আসতে হবে। জনগণের কাছে যাইতেই হবে।
“যখন বলছে যে, ‘কেন আসে না?’ বলেছি, আপনারা পারলে নিয়ে আসেন, দেখেন। এটা ছিল এই রকম। এর মানে এই নয়, আমরা প্রস্তাব আকারে দিয়েছি।
“আপনারা পারলে আনেন। আমরাতো সবাইরে আনতে চাই। ওরা আসে, দলের নাম করে আসে না।”
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি নেতারা প্রার্থী থাকলেও দলের ‘গোপন রাখে’ জানিয়ে এ প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
“ইউনিয়ন কাউন্সিলে ওদের অনেক জিতেছে, কিন্তু দলের নাম বলে না। নিজেদের… আমার শহরের মেয়র, তিনি হলেন তাদের দলের। আমি হলাম এমপি, আওয়ামী লীগের। তাদের এমন অনক আছে।”
“আপনার অ্যাম্বাসেডর ছিল শহরে, যেদিন নির্বাচন হয়েছে। কোথাও কারচুপি হয় নাই। হ্যাঁ, কোথাও কোথাও, এত বড় দেশ, কোথাও কোথাও হতে পারে। কিন্তু যেখানে কারচুপি হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন বাদ দিয়ে দিচ্ছে।”
নতুন নির্বাচন কমিশন সবার গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে গঠন করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের শক্ত ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আছে।
“নতুন করে সবার গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে তাদের নেওয়া হয়েছে, অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে। তোমার দেশে যে সরকার থাকে, সেই সরকারই নির্বাচন করে। তোমার দেশের সেই নিয়মেই হবে।
“এটাতো দুনিয়ার কোনো ব্যত্যয় না। এভাবে হয়ে থাকে। এটা নিয়ে আমাদের ভালো আলোচনা হয়েছে। আমি মনে করি আমরা একই অবস্থানে আছি।”
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ‘পুরো তথ্য নির্ভর নয়’।
তিনি বলেন, “সেখানে কিছু কিছু ওপিনিয়ন এসেছে, তারা আমাদের ধর্মের উপরে একটা আঘাত দিতে চায়। ওগুলা আমরা আগে রিজেক্ট করেছি।”
মানবাধিকার প্রতিবেদনের জন্য তথ্য প্রাপ্তির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে মোমেন বলেন, “ওরাতো আপনাদের পত্রিকা থেকে, মিডিয়া থেকে কিছু তথ্য পায়। আর কিছু এনজিও-টেনজিওরা ওদেরকে বলে।
“এনজিওরা সব সময় ‘বাংলাদেশ খারাপ’ এটা বলে। আর একদল আছে, যারা বিদেশে অ্যাসাইলাম চায়, এজন্য খারাপ চিত্র দিলে খুব খুশি হয়।
“আমাদের অনেক বাঙালিরাই আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে চাকরি করেন, তারা প্রাথমিক খসড়াটা তৈরি করেন, ওনারা শুধু খুঁজতে থাকেন, কোথায় দোষ।
“এটা বাংলাদেশিদের ক্যারাকটারই এই রকম, শুধু দোষ খুঁজে বের করে। দেখেন, দুনিয়ার সব দেশে অসুবিধা হয়, দোষটা কেবল বাংলাদেশিদের দেয়। অন্য জায়গায় দোষারোপ আর করে না।”