ক্যাটাগরি

রিলস-এ টিকটক ভিডিও ঠেকাতে মরিয়া ইনস্টাগ্রাম

‘যার কৃতিত্ব প্রাপ্য তিনিই যেন পান, সেটি নিশ্চিত করতেই’ নতুন পরিবর্তনগুলো আনার দাবি করেছেন মোসেরি।

তিনটি পরিবর্তন এনেছে ইনস্টাগ্রাম। প্রথমত, সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ‘প্রোডাক্ট ট্যাগ’, চাইলেই নিজের পোস্টে একটি পণ্য ট্যাগ করে দিতে পারবেন ব্যবহারকারী। এ ছাড়াও ব্যবহারকারী নিজেকে ‘ফটোগ্রাফার’ বা ‘র‌্যাপার’সহ বিভিন্ন শ্রেণীভূক্ত করতে পারবেন। ব্যবহারকারীকে যতোবার কোনো পোস্টে ট্যাগ করা হবে, ব্যবহারকারী চাইলে ততোবারই পর্দায় চলে আসবে ওই ক্যাটেগরি।

সর্বশেষ, র‌্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে আগে অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা হয়নি এমন নতুন কনটেন্টে বাড়তি সমর্থন দেবে ইনস্টাগ্রাম।

নতুন ফিচারগুলো ব্যাখ্যা করে এক ভিডিওতে মোসেরি বলেছেন, “অন্য কারও কাছ থেকে পাওয়া কনটেন্টে আবার শেয়ার করে যতোটা কৃত্তিত্ব পাবেন তার চেয়ে বেশি কৃতিত্ব পাওয়া উচিত আপনি যদি একদম শুরু থেকে নতুন কিছু তৈরি করেন। আর আমরা অরিজিনাল কনটেন্টকে আরও বেশি মূল্যায়নের চেষ্টা আরও বাড়াবো, বিশেষ করে কনটেন্টে রিপোস্টিংয়ের বেলায়।”

সামাজিক মাধ্যমগুলোর জন্য ‘অরিজিনাল’ বা আনকোড়া নতুন কনটেন্টের ওপর গুরুত্ব দেওয়া নতুন কিছু নয়। তবে, মোসেরির নতুন কনটেন্টে ওপর বাড়তি জোর দেওয়ার বিষয়টিকে আলাদা করে চিহ্নিত করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ। সাইটটির মতে, ইনস্টাগ্রামের ‘রিলস’ ফিচারে নির্মাতাদের পুরনো টিকটক ভিডিও পোস্ট করার প্রবণতা মোকাবেলা করতেই সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো এনেছে ইনস্টাগ্রাম।

ভবিষ্যতে ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নয়, নির্মাতা কেন্দ্রীক প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই সামনে এগিয়ে যাবে– এমন লক্ষ্যের বিষয়ে আগেই পরিষ্কার করে জানিয়েছে মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। অনলাইন মার্টেসপ্লেস প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করেছে উভয় প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও কনটেন্টে নির্মাতাদের ভক্তসংখ্যা বাড়ানোর জন্য নানা সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছে উভয় প্ল্যাটফর্ম।

ভার্জ বলছে, দিন শেষে মেটার আশা হচ্ছে, কনটেন্ট নির্মাতারা টিকটকার বা ইউটিউবার হওয়া ছেড়ে ফেইসবুকার বা ইনস্টাগ্রামার হবেন।

মেটা তথা ইনস্টাগ্রামের সাম্প্রতিক চেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছে ‘রিলস’ ফিচারটি। ফিচারটিকে ইতোমধ্যেই মেটার সবগুলো প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা কনটেন্ট ফরম্যাট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন মেটা প্রধান মার্ক জাকারবার্গ।

তবে রিলসে যারা নজর রাখেন, তাদের কাছে ফিচারটিকে টিকটকের ক্লোন বা নকল মনে হতেই পারে। অনেক ক্ষেত্রেই টিকটকের পুরনো ভিডিও রিলসে পোস্ট করে দেওয়া হচ্ছে টিকটকের লোগোসহ। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশল হিসেবেই ইনস্টাগ্রাম কনটেন্ট র‌্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছে ভার্জ। সম্ভবত র‌্যাংকিংয়ের তলানিতে থাকবে টিকটকের পুরনো কনটেন্টগুলো।

তবে, ইনস্টাগ্রাম কোন কনটেন্টকে ‘অরিজিনাল’ হিসেবে বিবেচনা করবে, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। মোসেরি বলছেন, কাজটি বেশ কঠিন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন কনটেন্ট নির্ধারণের কৌশল পাল্টাবেন তারা।

অন্যদিকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে একাধিক নির্মাতার কনটেন্ট একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে ভিডিও বানান এমন ব্যক্তিরা যেন ধোপে টিকতে না পারেন সেদিকেও জোর দিয়েছেন মোসেরি। এমন ‘কনটেন্ট চোর’দের ব্যাপারে খেপে আছেন নির্মাতারাও।

অন্যদের কনটেন্ট জুড়ে নিয়ে ভিডিও বানায় এমন ব্যক্তিদের বেশি দাম দেওয়া যাবে না বলে ভিডিওতে মন্তব্য করেছেন মোসেরি। “এটা যেহেতু নির্মাতাদের জন্য নেতিবাচক, ভবিষ্যৎ বিবেচনায় ইনস্টাগ্রামের জন্যেও ভালো হবে না এটি।”

ভার্জ জানিয়েছে, ফেইসবুক আর ইনস্টাগ্রামের বর্তমান কনটেন্টে সিংহভাগই অন্য প্ল্যাটফর্ম থেকে চুরি বা নকল করা। মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হলেও নতুন মিম আর ট্রেন্ডগুলো আসছে টিকটক, টুইটারসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে।

কনটেন্ট নির্মাতাদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সাফল্য পেতে চাইলে এই দৃশ্যপট পাল্টে দিতে হবে মেটাকে। তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে র‌্যাংকিং ব্যবস্থাকে। কয়েক কোটি ব্যবহারকারী কোন কনটেন্ট দেখবেন সেটি নির্ধারণ করে দেবে র‌্যাংকিং ব্যবস্থা।