বৃহস্পতিবার সকালে শেরেবাংলা নগরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই
কথাগুলো উনি (রাষ্ট্রদূত) সঠিক বলেননি। আমাদের যিনি বক্তব্য রেখেছিলেন, সেই
মিটিংয়ের পরে, তিনি (আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী) কখনোই এ কথা বলেননি, জার্মান
রাষ্ট্রদূতকে কোট করে তিনি কোনো কথা বলেননি। আপনারা সেখানে ছিলেন, আপনারা সবই জানেন।
“তিনি (আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী) সামগ্রিকভাবে ইনজেনারেল যে কথাটা
বলেছেন, সেটাই উনি (রাষ্ট্রদূত) মিস কোট করেছেন।”
বুধবার ডিক্যাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমি
যে উদ্ধৃতি পড়েছি তা বাস্তবতার সাথে মেলে না। যেখানে বলা হয়েছে, ‘আমি দেশে মানবাধিকার
পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি’। এমন শব্দ চয়ন সত্য নয়। এই
উদ্ধৃতি নিয়ে আমি অসন্তুষ্ট।”
গত ১৭ মার্চ গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা
ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন
রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার।
বৈঠক শেষে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ
চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাদের আলোচনায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী
নির্বাচন ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় উঠেছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত কী
বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র
সম্বন্ধে বিশ্বব্যাপী সবাই অবগত আছে। এখানে নতুন করে বলার কিছু নেই। এগুলো নিয়ে
বিশ্বব্যাপী আলোচনাও হচ্ছে এটা তো আপনারা জানেন।
“এসব ব্যাপারে উনারা কনসার্ন। বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে
আলোচনা হচ্ছে, উনারা তো তার একটা অংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, আমেরিকা বলেছে,
ব্রিটেন বলেছে, সবাই বলছে।”
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক
সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ নবগঠিত কমিটির নেতাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার শেরেবাংলা
নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন মির্জা ফখরুল।
পরে কবরের সামনে নতুন ছাত্র নেতৃত্ব মুঠোবদ্ধ হাত উঁচিয়ে গণতন্ত্র
পুনরূদ্ধার ও দলের চেয়ারপারসনের খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে শপথ বাক্যপাঠ করেন।
বৈঠক নিয়ে বিএনপির বক্তব্যে অসন্তুষ্ট জার্মান রাষ্ট্রদূত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল
কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, আজিজুল বারী হেলাল,
আমিনুল হক, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আকরামুল হাসান, ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী সভাপতি
ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৭ এপ্রিল শ্রাবন ও জুয়েলের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি
অনুমোদন দেওয়া হয়।
জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ছাত্রদলের
নতুন নেতৃত্ব, তারা অতি অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে সারাদেশে
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে অতীত ঐতিহ্য অনুযায়ী একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করবে।
“গণতন্ত্র পুনরূদ্ধার আন্দোলন ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার
মুক্তি আন্দোলনে তারা তাদের ভূমিকা যথাসাধ্য অক্ষুণ্ন রাখবে এবং সামনের দিকে
দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবে।”
‘দেশে কোনো সরকার নেই’
ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকার সংঘর্ষের প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বলেন,
“এই সংঘর্ষের ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, আসলে দেশে কোনো সরকার নেই। এই
সরকার একটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ সরকারে পরিণত হয়েছে এবং তারা এই রাষ্ট্রকেও ব্যর্থ
রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
“তাদের চোখের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সংঘর্ষ হয়েছে দুটি পক্ষের
মধ্যে। সেটাকে তারা (সরকার) বন্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “তাদের
কর্মকর্তারা যে বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিচ্ছে যে, তারা কোনো পক্ষেই ছিলেন না,
নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন… নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে তারা এই সংঘর্ষকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়ায়
সহযোগিতা করেছে এবং আমরা সবাই জানি যে, এই ধরনের ঘটনাগুলোতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাই
সম্পূর্ণভাবে দায়ী। ওই ঘটনায় যে দুইজন মারা গেছেন- এই মৃত্যুর জন্য, এই হত্যার
জন্য- তারাই দায়ী।”