বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে শুরু হয়ে চার ঘণ্টার বৈঠক শেষে সমঝোতা হওয়ার কথা জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে নিউ মার্কেটসহ ওই এলাকার সব বিপণি কেন্দ্রগুলো খুলবে। আর ছুটির মধ্যে ছাত্রদের হলে থাকার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
“বৈঠকের পর আর কোনো বিভেদ থাকবে না বলে আশা করছি। আজ সকাল থেকে নিউ মার্কেটসহ আশপাশের সব মার্কেট ও দোকানপাট খুলবে। কলেজ যেহেতু আজ থেকে সরকারিভাবে বন্ধ, সেহেতু ছা্ত্রদের হলে থাকার বিষয়টিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।”
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দোকানকর্মীদের রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষের পেছনে তৃতীয় পক্ষের উসকানি ছিল বলে দাবি করেছেন নেহাল। পুলিশ জানিয়েছে, এটি তদন্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঢাকা কলেজের পাশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সায়েন্স ল্যাবরেটরি) সভা কক্ষে এই বৈঠকে শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। কলেজের শিক্ষকরাও ছিলেন।
নেহাল আহমেদের নেতৃত্বে এই বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতাদের পাশাপাশি পুলিশের উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার একজনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন।
রোজার মধ্যে ভোররাতে সেহেরি খেয়েও বৈঠক চালিয়ে যান তারা। সাড়ে ৪টার দিকে সাংবাদিকদের সামনে এসে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান নেহাল আহমেদ।
তিনি বলেন, “সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে সব পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ছাত্রদের ১০ দাবি ছিল, তার বেশিরভাগ দাবিই পূরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“এর বাইরে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অভিযোগের কথাও সবাই শুনেছে। এর মাধ্যমে একটি সমাধানে চলে এসেছি আমরা।”
ব্যস্ত নিউ মার্কেট এলাকায় দিনভর সংঘাত, কার কী দায়?

খাবারের দোকানে কথা কাটাকাটির জেরে সোমবার রাতে সংঘাতের পর মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের সংঘর্ষে জড়ায় নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
এই সমস্যার শুরু হয়েছিল গত সোমবার রাতে নিউ মার্কেটের একটি খাবার দোকানে ঢাকা কলেজের কয়েক শিক্ষার্থী মারধরের শিকার হওয়ার পর।
দোকান মালিকরা জানান, দুই দোকানের কর্মীদের বচসা থেকে এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে নেয়।
তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভোররাতে নিউ মার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।
মঙ্গলবার দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধ শত ব্যক্তি আহত হয়, নিহত হন এক পথচারী। নাহিদ হাসান নামে ওই তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
বুধবার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর দোকান খোলার তোড়জোড় শুরু হলে শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দেয়। পরে বিকালে কলেজ ফটকের সামনে অনেকগুলো হাতবোমা ফাটার পর ওই এলাকার ১০টি বড়সহ আরও শতাধিক মার্কেটের কোনোটিই আর খোলেনি।
ঈদের আগে ভরা মৌসুমে মার্কেট বন্ধ থাকায় হতাশ ব্যবসায়ীরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছিল। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদেরও আলোচনায় বসিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বুধবার মধ্যরাতে সমঝোতা বৈঠকে যাওয়ার আগে ১০ দফা দাবি তুলে সংবাদ সম্মেলন করে কলেজ ও ছাত্রাবাস বন্ধের সিদ্ধান্ত অমান্য করেই ছাত্রাবাসে থাকা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেখানে ক্ষতিপূরণসহ নানা দাবির সঙ্গে ওই এলাকায় পদে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবিও ছিল।
সমঝোতা বৈঠকের আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ১০ দাবি

মাউশির মহাপরিচালক নেহাল বলেন, “ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের মধ্যে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল, তা মূলত তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনের কারণেই। যা আমরা আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে বিভিন্ন সিসি টিভির ফুটেজে দেখেছি। তদন্ত সাপেক্ষে এবিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
বৈঠকে অংশ নেওয়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আনাম বলেন, “এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। এবং যে তৃতীয় পক্ষের উসকানিতে এবং সরাসরি উপস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘বিতর্কিত’ ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা ইনকয়্যারি করব।”
শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকদের মধ্য থেকে কেউ বক্তব্য রাখেননি। যেহেতু বৈঠকে নেতৃত্বদাতা নেহাল আহমেদ ছিলেন শিক্ষা বিভাগেরই একজন। তিনি ঢাকা কলেজেরই সাবেক অধ্যক্ষ।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে তিনি আশা করছেন।
নেহাল আহমেদ জানান, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে একটি মনিটরিং সেল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ওই সেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, প্রশাসনের প্রতিনিধি থাকবেন। ছাত্র প্রতিনিধিও থাকবে সেখানে।
শিক্ষার্থীদের মতো দোকানকর্মীদেরও পরিচয়পত্র রাখা বাধ্যতামুলক করার উপর জোর দেওয়া হয় বৈঠকে।
নেহাল আহমেদ বলেন, পাশাপাশি ক্রেতাদের সঙ্গে সদাচরণ শেখাতে প্রয়োজনে দোকানকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।