‘জিনের উছিলায় গুপ্তধন’ পাইয়ে
দেওয়ার কথা বলে নতুন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন ৪২ বছর বয়সী এই ব্যক্তি; ভুক্তভোগীদের
কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
তান্ত্রিক সেজে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. ইব্রাহীম হোসেন।
র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের
কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, নগরীর হালিশহর থানার বৌ বাজার এলাকা থেকে মঙ্গলবার
ইব্রাহীম নামের ওই কথিত তান্ত্রিককে তারা গ্রেপ্তার করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
মেজর মেহেদী বলেন, “র্যাব সদস্যরা যখন ইব্রাহীমকে ধরতে যায়, তখন তাদের দুটি বোতল দেখিয়ে
‘জিনের ভয়’ দেখান ইব্রাহীম। তাকে ধরলে র্যাব ধ্বংস হয়ে যাবে বলে হুমকি দিচ্ছিলেন।”
র্যাব কর্মকর্তারা জানান,
এক যুবকের পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তারা ইব্রাহীমের খোঁজ পান। ফরহাদুল ইসলাম
নামের ওই যুবক মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্নভাবে চিকিৎসা করিয়ে ফল না পাওয়ায় বছর
খানেক আগে এক প্রতিবেশীর পরামর্শে তারা ইব্রাহীমের শরণাপন্ন হন।
এসব সামগ্রী দেখিয়ে ইব্রাহীম গুপ্তধনের গল্প শোনাতেন
মেজর মেহেদী বলেন, তখন থেকেই
পরিবারটির সাথে প্রতারণা শুরু করেন ইব্রাহীম। কয়েক দফায় পরিবারটির কাছ থেকে মোট পাঁচ
লাখ ৯০ হাজার টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।
“ফরহাদকে তার পরিবারের সদস্যরা
ইব্রাহীমের কাছে নেওয়ার পর সে বলে, ফরহাদের ভাগ্যে অনেক গুপ্তধন আছে। সেগুলো উদ্ধার
করতে কিছু সরঞ্জাম দরকার, সেজন্য খরচাপাতি লাগবে।
“ইব্রাহীমের কথা বিশ্বাস
করে তারা প্রথমে দুই লাখ টাকা দেন। এরপর সে টাকা নিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। ভুক্তভোগীরা
তাকে বারবার তাগদা দেওয়ায় ইব্রাহীম আরও টাকা দাবি করে। পরিবারটি তখন আরও দেড় লাখ টাকা
দেয়।”
মেজর মেহেদী জানান, ইব্রাহীম
ভুক্তভোগী পরিবারটির বাসাও চিনে নেন। দ্বিতীয় দফায় টাকা পেয়ে নগরীর এক কিলোমিটার এলাকায়
তাদের বাসার কাছে গিয়ে একটি মাঠে তিনটি পিতলের ঘটি, একটি তালা এবং একটি পুতুল মাটির
নিচে রেখে আসেন। পরে একদিন ওই পরিবারের লোকজনকে নিয়ে মাটি খুঁড়ে ‘গুপ্তধনের নমুনা’
হিসেবে সেগুলো বের করে দেখান।
এক সময় সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মী পরিচয়েও প্রতারণা করতেন ইব্রাহীম
“এর কয়েক দিনের মধ্যে পরিবারটি
ইব্রাহীমকে আরও দেড় লাখ টাকা দেয় কথিত গুপ্তধনের আশায়। এক পর্যায়ে তারা ইব্রাহীমের
প্রতারণা বুঝতে পেরে র্যাবে অভিযোগ দেয়। প্রমাণ পেয়ে তাকে আমরা গ্রেপ্তার করি।”
গ্রেপ্তারের সময় ইব্রাহীমের
কাছে বেশ কিছু নকল মুদ্রা, ধাতব মূর্তিসহ বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে, যেগুলো তিনি প্রাচীন
মুদ্রা, পূরার্কীতি এবং দামি বস্তু হিসেবে দেখিয়ে লোকজনকে ঠকিয়ে আসছিলেন। এভাবে তিনি
বহু মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে র্যাব কর্মকর্তা মেহেদীর ভাষ্য।
তিনি বলেন, ইব্রাহীম ‘প্রতারণার
মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে’ হালিশহর বৌ বাজার এলাকায় একটি দোতলা বাড়ি বানিয়েছেন। সেখানেই
পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন। ভবনের একটি কক্ষে বিভিন্ন জিনিসপত্র সাজিয়ে ‘আসন’ তৈরি করেছেন।
ওই আসনে বসে তিনি ‘তন্ত্র সাধনার ভান করতেন’ মানুষের সামনে।
ইব্রাহীমের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সামগ্রী
ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে প্রতারণার
মামলা করে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।