প্রচলিত ধারণায় সকালবেলা খালি পেটে লেবু
পানি পান করা স্বাস্থ্যকর একটি অভ্যাস। তবে এর বিপরীত দিকও আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউরোলজিস্ট’ জাস্টিন
হুম্যান ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “অনেকেই বলেন তারা সকালে
খালি পেটে লেবু পানি পান করে উপকার পাচ্ছেন। এই পানীয় শরীরকে চাঙা করে এবং তৃষ্ণা মেটায়।
তবে লেবু পানির ক্ষতিকর দিকও আছে, আর তা হল আপনার
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউরোলজি আনবাউন্ড’য়ের
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা ‘ইউরোলজিস্ট’ শেনেল এন. উইলসন বলেন, “অনেক
মানুষ বিশ্বাস করেন বৃক্কে পাথর, ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই)’, ‘ইউরিনারি
ইনকন্টিনেন্স’ ইত্যাদির প্রাকৃতিক সমাধান লেবু পানি। কারণ এমন পরামর্শই তারা পান অনেক
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে। কিন্তু বাস্তবে লেবু পানিতে থাকা চিনি, কৃত্রিম রং
ও ‘ফ্লেইবার’ মূত্রথলিতে অস্বস্তি তৈরি করে। তাই লেবু পানির পরিবর্তে ‘লেমোনেইড’ পান
করাও হবে বোকামি।”
তিনি আরও বলেন, “তবে লেবু পানি বৃক্কের
পাথর, মূত্রনালী প্রদাহ সারিয়ে তুলবে এমনটাও ভেবে নেওয়া বাড়াবাড়ি হবে। বৃক্কে থাকা
পাথরকে গলাতে পারবে না লেবু পানি। শরীর থেকে মুত্রের সঙ্গে তা বের করে দিতেও কোনো সাহা্য
করবে না। ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন’ ও ‘ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স’ থেকে সুরক্ষিত রাখতেও
লেবু পানির কোনো ভূমিকা নেই। যতটুকু উপকার আপনি পাচ্ছেন বলে মনে করেন তার জন্য মূলত
দায়ী পানি।”
লেবু পানি পান করতে গিয়ে যে বাড়তি পানি
পান করা হচ্ছে সেটাই সকল উপকারিতার মুলমন্ত্র। আর ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা মূত্রনালীতে
প্রদাহ যদি হয়ে থাকে তবে ওষুধ খেতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, লেবু পানি পান করে কোনো লাভ হবে না।
ডা. উইলসন বলেন, “দীর্ঘমেয়াদে বৃক্কে
পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সক্ষম লেবু পানি পান করার অভ্যাস। কারণ ‘ক্যালসিয়াম অক্সালেট’
জমে যাওয়া প্রতিরোধ করে লেবু। পাশাপাশি ‘ইউরিনারি সিট্রেইট’ ও ‘ইউরিন পিএইচ’য়ের মাত্রা
বাড়ায় লেবু পানি। আর এগুলোই ক্যালসিয়াম অক্সালেট জমতে বাধা দেয়।”
ড. হুম্যানের তার সঙ্গে একমত হয়ে বলেন,
“বৃক্কে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তাকে লেবু পানি পান করার পরামর্শ দিতে দেখেছি আমি
অনেকবার। কারণ একটাই, তা পাথর তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণার
প্রয়োজন আছে। লেবুতে থাকা অম্ল পাকস্থলীর অম্লতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। পাকস্থলীর
অম্লতা বয়সের সঙ্গে কমতে থাকে। সেক্ষেত্রে লেবু পানি পান করা উপকারী হবে। তবে এসব উপকারিতাও
হবে সামান্য, এটা মাথায় রাখতে হবে।”
ক্ষতিকর দিক
ড. হুম্যান বলেন, “লেবুর অম্লতা পেটে
গোলমাল বাঁধাতে পারে। খাদ্যনালী থেকে পায়ূপথ পর্যন্ত বিস্তৃত অন্ত্র ও মূত্রথলিতে অস্বস্তি
সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে লেবু পানি পান করা বাদ দিতে হবে, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে
পানি পান করার দিকে মনযোগ বাড়াতে হবে।”
“লেবু পানির কারণে মূত্রথলিতে একধরনের
শিহরণ তৈরি হয় যাকে জলবিয়োগের বেগ মনে হতে পারে। যাদের ‘ইরিটেটিভ ব্লাডার সিম্পটম’
আছে তাদের ‘টকজাতীয় খাবার যেমন- লেবু, কমলা, আঙুর, টমেটো ইত্যাদি খেতে মানা করা হয়।
পানিতে লেবুর রস গোলালে এই প্রভাব কিছুটা কমতে পারে, তবে তা যথেষ্ট নয়। সাধারণ পানিই
আপনাকে পর্যাপ্ত উপকার দেবে।”
ডা. উইলসন বলেন, “যাদের ‘নকচুরিয়া’ আছে
অর্থাৎ রাতে যাদের বারবার জলবিয়োগের বেগ দেখা
দেয় তাদের ঝামেলা আরও বাড়াবে লেবু পানি।”
প্রাকৃতিকভাবে লেবু ‘ডাই-ইউরেটিক’ অর্থাৎ প্রস্রাবের মাত্রা বাড়ায়। যারা ‘নকচুরিয়া’তে
ভুগছেন তাদের রাতের ঘুমানো আগে লেবু পানি তো বাদ দিতে হবেই, এমনকি দুই ঘণ্টা কোনো তরলই
পান করা যাবে না। এই বিষয়গুলো ছাড়া লেবু পানির কোনো ক্ষতিকর দিক নেই।”
যেভাবে পান করা উচিত
বাড়তি কোনো আয়োজনের প্রয়োজন নেই। কুসুম
গরম পানিতে শুধু লেবুর রস মিশিয়ে পান করা ভালো। গরমের সময় পানিতে লেবুর রস গুলিয়ে বোতলে
করে ফ্রিজারে রেখে দেওয়া যেতে। যা সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে গ্রহণ করা উপকারী হবে।
আসল বিষয় হল
ড. উইলসন বলেন, “লেবু পানি পান করে অনেকেই
উপকার পাচ্ছেন বলে মনে করেন। তবে সেই উপকারিতাগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কেউ
যদি উপকার পান তবে তাকে আমি মানা করতে পারি না। তবে যেহেতু উপকারিতাগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে
প্রমাণিত নয় তাই একজন চিকিৎসক হিসেবে এই বিষয়ে আমি পরামর্শ দিতে
পারি না।”
আরও পড়ুন