ক্যাটাগরি

শেরপুরে অবৈধ ইটভাটার ধোঁয়ায় ধানের ক্ষতি

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের সুলতানপুরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ‘জিহান জিগজ্যাগ’ নামের দুটি (৫ ও ৬ নম্বর) ইটভাটা।

এই ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণেই গত ছয় বছর ধরে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে পরিবেশ ও কৃষি অধিদপ্তরে স্থানীয় কৃষকরা মৌখিক অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

গত রোববার শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার মো. লুৎফর রহমান ওই এলাকার মাঠ পরিদর্শন করেন। ‘অবৈধ ভাটার ধোঁয়ায়’ সৃষ্ট গ্যাসে ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

সুলতানপুর গ্রামের কৃষক মনসুর বলেন, “কয়েক দিন পরই ফসল কেটে ঘরে তোলার স্বপ্ন ছিল। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

ওই গ্রামের কৃষক কালাম বলেন, “ধার দেনা করে আর দিনরাত পরিশ্রম করে বোরো আবাদ করেছি। ধানের শীষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকই ছিল। কিন্তু ধান পরিপক্ক হওয়ার মূহূর্তে অধিকাংশ চিটা হয়ে যাচ্ছে।”

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহিত কুমার দে বলেন, “ওই এলাকার ৮০ একরের মতো জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।  যদি প্রকৃতপক্ষেই এই ইটের ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণেই তা হয়ে থাকে তাহলে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাব।”

ইটভাটা দুটির পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই বলে জানান শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক আল মাহমুদ।

তিনি বলেন, “আবাসিক এলাকায় এবং এক কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও হাসপাতাল আর কৃষি জমি থাকলে কোনোভাবেই ই আমরা ইটভাটার লাইসেন্স বা পরিবেশ ছাড়পত্র দিতে পারি না।

“জিহান জিগজ্যাগ ৫ এবং ৬ নম্বর ইট ভাটা দুটি অবৈধ। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তাদেরকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পরামর্শ করে শিগগিরই অবৈধ ইটভাটার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সদর বাজিতখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান খুররম বলেন, “এই ইটভাটার কারণে এলাকাবাসী ‘দূর্বিষহ জীবন যাপন’ করছে। আমরা ধারণা করছি, ১২০ থেকে ১২৫ জন কৃষকের ক্ষেতের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধোঁয়া যতদূর পর্যন্ত গেছে সেখানেই ফসলের ক্ষতি হয়েছে।”

জিহান জিগজ্যাগ ইটভাটার ম্যানেজার মো. মোশারফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “আমাদের ইটভাটার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। তা মিথ্যা ও সম্পূর্ণ বানোয়াট। বিগত পাঁচ বছর থেকে দেখে আসছি এবং পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এসেও দেখে গেছেন, জিগজ্যাগ ইটভাটার জন্য পরিবেশ ও ফসলের কোন ক্ষতি হয় না।”

জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ ইটভাটাগুলো অবৈধ জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে  বলেন, “আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে এক কোটি টাকার মতো জরিমানা আদায় করা হয়েছে।”

সুলতানপুর ও কারারপাড় গ্রামের ধানের ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, “কৃষি বিভাগের গবেষকদের পরীক্ষা করার পর ইটভাটার কারণেই ক্ষতি হয়েছে, তা প্রমাণিত হলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের যথাথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”