ক্যাটাগরি

ইস্পাত কারখানায় যেমন আছেন মারিউপোলের প্রতিরোধ যোদ্ধারা

অবরুদ্ধ কারখানাটি থেকে বিবিসিকে
এসব কথা জানিয়েছেন শেষ প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একজন ইউক্রেইনের উগ্র-ডানপন্থি আজভ ব্যাটেলিয়নের
ডেপুটি কমান্ডার ক্যাপ্টেন সেভিয়েতোস্লাভ পালামার।

এই নব্য-নাৎসী আজভ ব্যাটেলিয়নকে
পরে ইউক্রেইনের ন্যাশনাল গার্ডের অন্তুর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। তাদের যোদ্ধাদের পাশাপাশি
ইস্পাত কারখানাটিতে ইউক্রেইনের মেরিন ব্রিগেড, বর্ডার গার্ডস ও পুলিশ কর্মকর্তারাও
প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন।

তারা সবাই মিলে একের পর এক ধেয়ে
আসা রুশ হামলার ঢেউ প্রতিহত করেছেন বলে দাবি ক্যাপ্টেন পালামারের।

“আমি সবসময়ই বলে আসছি আমরা যতদিন
এখানে আছি, মারিউপোল ইউক্রেইনের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে,” বলেছেন তিনি।

আজভস্তাইল লৌহ ও ইস্পাত শিল্প
কারাখানাটি ১১ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এখনে অনেক বড় বড় ভবন, ভূগর্ভস্থ বাংকার
ও টানেল রয়েছে। টানেল ও ওয়ার্কশপের এ গোলকধাঁধায় স্থল অভিযান চালানো বিশ্বের যেকোনো
বাহিনীর জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ।

এ পরিস্থিতিতে এখানে আক্রমণ চালানোর
একটি পরিকল্পনা বাতিল করে রশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার সেনাদের চারদিক থেকে
কারখানাটিকে অবরোধ করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন যেন ‘একটি মাছিও বের হতে না পারে’। 

কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার ধারাবাহিক
বোমাবর্ষণ ও রাস্তায় রাস্তায় তীব্র লড়াইয়ের ফলে মারিউপোলের অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে
পরিণত হয়েছে। আজভ সাগরের তীরবর্তী এ বন্দরনগরীটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া রাশিয়ার প্রধান একটি
লক্ষ্য। ইউক্রেইনের এ বাণিজ্য কেন্দ্রটি রাশিয়ার হাতে গেলে দনবাস অঞ্চলে তাদের কৌলশগত
অবস্থান অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

রুশরা ইস্পাত কারখানাটিতে যুদ্ধজাহাজ
থেকে গোলাবর্ষণ করেছে এবং ‘বাংকার ধ্বংসকারী’ বোমা ফেলেছে বলে জানিয়েছেন পালামার।

তবে তার এসব বক্তব্যের কোনোটি
বিবিসি যাচাই করতে পারেনি। অবশ্য এর আগে একই কারখানায় থাকা ইউক্রেইনীয় এক মেরিন কমান্ডারও
এ ধরনের কথা জানিয়েছিলেন। রুশরা তাদের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি এবং তাদের রসদ ফুরিয়ে
যাচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন ওই কমান্ডার।

“আজভস্তাইলের সব ভবন ও এলাকাগুলো
কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা ভারী বোমা, বাংকার ধ্বংসকারী বোমা ফেলেছে, যেগুলোতে ব্যাপক
ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাংকারে আমাদের মধ্যে অনেকে মারা গেছে, অনেকে আহত হয়ে পড়ে আছে। কিছু
বেসামরিক ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে আটকা পড়ে আছে,” বলেছেন পালামার। 

মারিউপোলে এখনও কতোজন ইউক্রেইনীয়
প্রতিরোধ যোদ্ধা আছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “শুধু আক্রমণ প্রতিহত করার মতো পর্যাপ্ত
সেনা আছে।”    

তিনি জানান, বেসামরিকরা আলাদা
জায়গায় যোদ্ধাদের থেকে দূরে আছে। ভবনগুলোর বেসমেন্টে তারা ৮০ থেকে ১০০ জন করে আশ্রয়
নিয়ে আছে।

তবে কিছু ভবন ধ্বংস হওয়ায় ও রুশ
বাহিনীর অনবরত গোলাবর্ষণের কারণে যোদ্ধারা তাদের কাছে যেতে না পারায় ইস্পাত কারখানাটিতে
ঠিক কতোজন বেসামরিক আছে তার মোট সংখ্যা পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।   

তিনি জানান, কিছু বাংকারের প্রবেশপথ
ভারী কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো সরাতে ভারী মেশিনপত্র
লাগবে।

“যেসব এলাকায় আমরা যেতে পারছি
সেখানে থাকা বেসামরিকদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা জানি, সেখানে ছোট শিশুরা আছে,
এমনকী তিন মাস বয়সী শিশুও আছে,” বলেছেন তিনি।

ইস্পাত কারখানাটি থেকে বেসামরিকদের
বের হওয়ার সুযোগ দিতে নিরাপদ প্যাসেজ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন পালামার। ওই বেসামরিকদের
নিরাপত্তার জিম্মাদার হতে তৃতীয় কোনো দেশকে বা আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠনকে রাখারও আহ্বান
জানিয়েছেন তিনি।

আজভস্তাইল কারখানায় আটকা পরে
থাকা বয়স্কদের এবং প্রায় ৫০০ জনের মতো আহতের জরুরিভিত্তিতে ওষুধ প্রয়োজন এবং তাদের
যে চিকিৎসা দরকার তারা তা পাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

পালামার বলেন, “৫২ দিন ধরে অবরুদ্ধ
ও ব্যাপক লড়াইয়ের পর আমাদের ওষুধ ফুরিয়ে আসছে। আমাদের বাংকারগুলোতে অনেক মৃতদেহও আছে
যেগুলোকে সম্মানের সঙ্গে কবর দেওয়া দরকার। ইউক্রেইনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোতে
তাদের কবর দিতে চাই আমরা।”    

যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিরোধ যোদ্ধারাও
এখান থেকে সরে যেতে চায়, কিন্তু আত্মসমর্পণের কোনো চিন্তা তাদেই নেই বলে জানিয়েছেন
তিনি। রাশিয়া যতই প্রতিশ্রুতি দেক, আত্মসমর্পণের পর সব ভুলে গিয়ে তাদের কঠিন নির্যাতন
করবে, সব প্রতিরোধ যোদ্ধারই এমন ধারণা বদ্ধমূল বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইস্পাত কারখানাটিতে থাকা ইউক্রেইনীয়
ন্যাশনাল গার্ডের
এক সার্জেন্ট
জানিয়েছেন, রাশিয়ার ট্যাঙ্ক, জঙ্গি বিমান
ও কামানের
বিরুদ্ধে তাদের
কাছে শুধু
মেশিনগান, পিস্তলের মতো হালকা অস্ত্র
আছে। তিনি ও
তার সঙ্গীরা
মাটির দুই
মিটার নিচে
ছোট একটি
ক্রংক্রিটের বাংকারে লুকিয়ে আছেন।

বিশ্লেষকদের ধারণা, পুতিনের
নির্দেশের পর কারাখানাটি লক্ষ্য করে
রুশ বাহিনীর
অবিরাম গোলাবর্ষণ
যদি বন্ধও
হয় তারপরও
‘একটি মাছি
যেন সেখান
থেকে বের
হতে না
পারার’ তার নির্দেশনা কারাখানাটিতে অবরুদ্ধ
হয়ে পড়া
ইউক্রেইনীয় সেনাদের জন্য ‘মৃত্যুদণ্ডের’ ঘোষণা
হয়ে উঠতে
পারে।

আরও খবর:


পুতিনের জয় দাবি সত্ত্বেও অবস্থানে অটল মারিওপোলের যোদ্ধারা
 

যুদ্ধে ইউক্রেইনের অবকাঠামোগত ক্ষতি ৬ হাজার কোটি ডলার: বিশ্ব ব্যাংক
 

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা: যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় ধরাচ্ছেন বিচ্ছিন্ন পুতিন
 

মারিউপোলে পুতিনের জয় দাবি