শুক্রবার সকালে পার্কের বেষ্টনীতে তার মৃত্যুর পর চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয় বলে পার্কটির ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম জানান।
পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন বলেন, সম্ভবত ভোর ৫টার দিকে নদীর মৃত্যু হয়। তবে বিষয়টি পার্কের কর্মীদের নজরে আসে সকাল সাড়ে ৬টায়।
“নদী তার কক্ষে শোয়া অবস্থায় ছিল। শোয়ার ধরন নিয়ে কর্মীদের মনে সন্দেহ দেখা দেয়। তারা ভেতরে ঢুকে তাকে মৃত দেখতে পায়।”
ময়নাতদন্ত শেষে সিংহীকে পার্কের এক জায়গায় গর্ত করে পুঁতে রাখা হয়।
সার্জন হাতেম বলেন, পার্কের বেষ্টনীর ভেতরে আলাদা একটি কক্ষে ছিল নিহত সিংহীর পুরুষ সঙ্গী সম্রাট। খাঁচার ভেতরে নদীর যখন ময়নাতদন্ত করা হচ্ছিল তখন সম্রাট একা দিক-বেদিক ঘুরছিল। আর মাঝেমধ্যে নদীর খাঁচার সামনে আসছিল। তবে সম্রাট সুস্থ রয়েছে এবং নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করছে।
পার্কের কর্মীরা জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সিংহ সম্রাট আক্রমণ করে নদীকে। এরপর থেকে নদীর শরীর দুর্বল হয়। ওজন কমে যায়। চোখ দিয়ে পানি পড়া আর মুখের নিচে গলায় সম্রাটের কামড়ের ক্ষতচিহ্ন বেড়ে যায়। নদীর উন্নত চিকিৎসার জন্য একাধিকবার মেডিকেল বোর্ড বসানো হয়। সিরাম ও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ‘ভাইরাল ইনফেকশন’ মেলে, যার লক্ষণ ভাল ছিল না।
চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা সিংহীকে অবশ করেন। তার চেতনা ফিরে আসতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। এরপর নমুনা সংগ্রহ করার জন্য পুনরায় অবশ করা যায়নি। কারণ তার শরীর দুর্বল ছিল। ২৭ মার্চ থেকে নদী খাবারখাওয়া বন্ধ করে দেয়।
২০০১ সালে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলহাজারায় দুই হাজার ২৫০ একর আয়তন বনে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। এর আগে ১৯৮০ সালে এটি ছিল হরিণ প্রজননকেন্দ্র।
ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পার্কে দুটি সিংহ ও একটি সিংহী আছে। জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, জলহস্তী, ময়ূর, অজগর, কুমির, হাতি, বাঘ, ভালুক, সিংহ, হরিণ, লামচিতা, শকুন, কচ্ছপ, রাজধনেশ, কাকধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙিলা বক, সারস, কাস্তেচরা, মথুরা, নিশিবক, কানিবক, বনগরুসহ ৫২ প্রজাতির ৩৪১টি প্রাণী আছে। এগুলো আবদ্ধ অবস্থায় আছে। উন্মুক্তভাবে আছে ১২৩ প্রজাতির এক হাজার ৬৫টি প্রাণী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গুইসাপ, সজারু, বাগডাশ, মার্বেল ক্যাট, গোল্ডেন ক্যাট, ফিশিং ক্যাট, খ্যাঁকশিয়াল ও বনরুই ইত্যাদি।