ক্যাটাগরি

দীর্ঘ ১৬ মাস কোভিড সংক্রমিত থাকার নজির

বৃহস্পতিবার বিবিসির একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, নাম প্রকাশ না করা ওই রোগীর অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতা ছিল এবং ২০২১ সালে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

লন্ডনের চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমণের এমন স্থায়ীত্ব এখনও পর্যন্ত বিরল।

বেশিরভাগ মানুষই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে স্বাভাবিকভাবে সেরে উঠেন, তবে এই রোগীর ক্ষেত্রে প্রশ্ন হয়ে উঠেছিল অতিদুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড এবং এর ঝুঁকি নিয়ে আমাদের জানা-শোনার পরিধি বাড়াতে এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের ওপর গবেষণা হওয়া দরকার।

বিবিসি জানায়, ওই রোগী ২০২০ সালের শুরুতে প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন। ওইসময় তার সঙ্গে আরও অনেকেরই উপসর্গ ছিল এবং পিসিআর পরীক্ষায় তাদের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হয়।

পরের ৭২ সপ্তাহ ধরে নিয়মমাফিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সেবা নিতে তারা অনেক বার হাসপাতালে আসা-যাওয়া করেছেন। পরীক্ষায় প্রত্যেকবারই তাদের প্রায় ৫০ জনের পজিটিভ ফল এসেছে, তার মানে তখনও তাদের কোভিড ছিল।

কিং’স কলেজ লন্ডন এবং গাই’স অ্যান্ড সেইন্ট থমাস’ এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষাগারে বিস্তারিত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এটা বার বার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নয়; এটা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাস নিরোধক ওষুধ দেওয়ার পরও রোগী তার দেহ থেকে সংক্রমণ ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। তবে এটা ‘দীর্ঘ কোভিড’ থেকে আলাদা, যেখানে সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরও উপসর্গ থেকে যায়।

এই নজিরগুলো পর্তুগালের লিসবনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘ইউরোপিয়ান কংগ্রেস অব ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ’ নামে একটি মেডিকেল কনফারেন্সে উপস্থাপন করবেন লন্ডনের চিকিৎসক ড. লুক ব্ল্যাগডন স্নেল।

বিবিসিকে তিনি বলেন, “গলা থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষায় প্রতিবারই পজিটিভ এসেছে। ওই রোগীর একবারও নেগেটিভ আসেনি। জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে আমরা এটা বলতে পারি যে,এটা একবার সংক্রমণের পর একটানা ছিল।

ছবি: রয়টার্স

ছবি: রয়টার্স

“কারণ, ভাইরাসের জিন বিন্যাস করে আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে সেটা রোগীর দেহে স্থায়ীভাবে একই দেখা গেছে।”

গবেষকেরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ বিরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা হয়তো করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের জন্ম দিতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে তেমন কিছুই ঘটেনি বা গবেষণায় তারা অন্য কোনো ধরনও পাননি।

ড. স্নেল বলেন, “মানুষ যখন দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমিত থাকছে তখনও ভাইরাসটি মানবদেহে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা হয়তো করোনাভাইরাসের নতুন করে রুপান্তরিত হওয়ার সুযোগকে বাড়িয়ে দিতে পারে।”

“আমরা যাদের নিয়ে গবেষণা করেছি, তাদের মধ্যে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে রুপান্তর দেখেছি এবং সেসবের মধ্যে উদ্বেগের কিছু ধরনও ছিল।” 

তিনি অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, তারা যে নয়জন রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন তাদের কারো দেহেই করোনাভাইরাসের বিপদজনক নতুন কোনো ধরনের জন্ম হয়নি।

যাদের এমন র্দীঘস্থায়ী সংক্রমণ রয়েছে তারা অন্যের জন্য সংক্রামক নাও হতে পারেন বলে যোগ করেন এই চিকিৎসক।