সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়া নিহতের ঘটনায় বুধবার রাতে একটি হত্যা মামলা হয়।
নিউ মার্কেট থানার ওসি শ ম কাইয়ুম জানান, নিহত নাহিদের চাচা মো. সাইদ যে হত্যা মামলাটি করেছেন, তা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
“শুক্রবার ডকেটসহ সবকিছু গোয়েন্দা পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে।”
আর দোকান কর্মচারী মোরসালিন নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ মামলাতেও অজ্ঞাত পরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিউ মার্কেট জোনের পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শাহেনশাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মামলাটিও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
বাকি দুই মামলার তদন্ত নিউ মার্কেট থানা পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন ওসি কাইয়ুম।
তবে এ পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ সিসি ক্যামেরা ও অন্যান্য ভিডিও বিশ্লেষণ করছে।“
নিউ মার্কেটের চার নম্বর ফটকের ভেতরের সিসি ক্যামেরা ভিডিওতে ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থী চিহ্নিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পুলিশ সব কিছু নিয়ে কাজ করছে, হেলমেট পরা কারা ছিল আর বাইরে থেকে কে কে ওই এলাকায় গেছে, সেসব দেখা হচ্ছে।”
হত্যা মামলার বাইরে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে একটি মামলা করেছেন নিউ মার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান। একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাওপোড়াও, পুলিশের কাজের বাধা দেওয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছেন।
পরিদর্শক ইয়ামিন কবিরের মামলায় নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেনসহ ২৪ জনের নাম রয়েছে।
খাবারের দোকানে কথা কাটাকাটির জেরে সোমবার রাতে সংঘাতের পর মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের সংঘর্ষে জড়ায় নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামের যে দুই দোকানের কর্মচারীদের দ্বন্দ্ব থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সেই দোকান দুইটি সিটি করপোরেশন থেকে মকবুলের নামে বরাদ্দ হওয়া। তবে কোনো দোকানই নিজে চালান না। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন দোকান দুটি। রফিকুল ও শহিদুল আবার পরস্পরের আত্মীয়।
মামলায় যে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
ওসি বলেন, “যাদের নাম এসেছে, তাদেরকে উসকানিদাতা হিসেবে অভিযোগে আনা হয়েছে। তবে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের কিনা তা মামলায় উল্লেখ নেই।”
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, দুটি দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে শক্তি প্রদর্শনের জন্যই কি এই ঘটনা, নাকি এর পেছনে ইন্ধন আছে রাজনৈতিক কিছুর তা নিয়েও তারা কাজ করছেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দোকানকর্মীদের রক্তক্ষয়ী ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল গত সোমবার রাতে নিউ মার্কেটের একটি খাবারের দোকানে ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র মারধরের শিকার হওয়ার পর।
দোকান মালিকরা জানান, দুই দোকানের কর্মীদের বচসা থেকে এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে আনে।
তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মধ্যরাতে নিউ মার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।
মঙ্গলবার দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে নাহিদ মিয়া নামের ১৮ বছর বয়সী এক তরুণকে রাস্তার ওপর কোপানো হয়।
এলিফ্যান্ট রোডের ডাটা টেক কম্পিউটার নামের একটি দোকানের ডেলিভারি অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে কাজ করতেন নাহিদ। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাহিদের মাথার বাম পাশে পাশাপাশি চারটি কাটা জখম ছিল, জখমগুলো দুই থেকে সাড়ে তিন ইঞ্চি লম্বা। চার জখমে ২৩টি সেলাই দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।
পিঠের বাম পাশে পাশাপাশি তিনটি কাটা জখম। যার প্রত্যেকটি পাঁচ ইঞ্চি করে লম্বা। বাঁ পায়ের গোড়ালির নিচে কাটা জখমেও পাঁচটি সেলাই লেগেছিল, এছাড়া উভয় পায়ের বিভিন্ন জায়গায় নীল-ফোলা কালা জখম ছিল। নাক, মুখের ছোলা জখম ছিল।
মঙ্গলবার সংঘর্ষের মধ্যে ইটের আঘাতে আহত দোকান কর্মচারী মোরসালিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যান।