এক প্রতিবেদনে বিবিসি লিখেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হুইস্কি পান করা হয় ভারতে। আর বিশ্বে সবচেয়ে নামকরা হুইস্কি উৎপাদিত হয় স্কটল্যান্ডে। তাই ভারত স্কচ হুইস্কির বড় বাজার হতে পারে।
বর্তমানে ভারতে আমদানি করা মদের ওপর ১৫০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। ফলে বিক্রি হওয়া হুইস্কির বেশিরভাগই উৎপাদিত হয় ভারতের সীমানার ভেতরে। স্কচ ভারতের বাজারে মাত্র ২ শতাংশ জায়গা নিতে পেরেছে।
এখন ভারত ওই শুল্ক বাধা তুলে নিলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রপ্তানি ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছানো সম্ভব বলে স্কচ হুইস্কি অ্যাসোশিয়েশনের ভাষ্য।
শুধু হুইস্কি নয়, অনেক পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রেই ভারত নিজেদের উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষায় শুল্ক, কোটা ও বিনিয়োগে বিধিনিষেধ দেয়।
যেমন বিদেশি গাড়ি আমদানিতে শতভাগ শুল্ক আরোপ করা আছে। ফলে ভারতে বিশাল বাজারে ব্রিটিশ গাড়ি সেভাবে ঢুকতে পারছে না। বরং বেলজিয়ামের বাজারে যুক্তরাজ্যের গাড়ি রপ্তানির পরিমাণ ভারতের বাজারের চেয়ে বেশি।
বিবিসি লিখেছে, ব্রিটিশরা ওই পরিস্থিতি বদলানোর আশা দেখছে। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন এবং আগামী সপ্তাহে এ আলোচনার তৃতীয় পর্যায় শুরু হবে।
স্কটল্যান্ডে ২০২১ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডানে)। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী অ্যান-মারি বলেছেন, এমন একটি চুক্তি একটি ‘সোনালী সম্ভাবনা’ বয়ে আনবে। হয়ত ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারত-ইউকে বাণিজ্য বেড়ে দ্বিগুণ হবে, যার পরিমাণ হতে পারে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি পাউন্ড।
বিবিসি লিখেছে, অস্ট্রেলিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে, তাই যুক্তরাজ্যও বেশ আশাবাদী।
তবে কিছু পেতে হলে বিনিময়ে কিছু দিতেও হয়। যুক্তরাজ্যের যেমন ভারতের উৎপাদন ও সেবা খাতে প্রবেশের আগ্রহ রয়েছে, তেমনি ভারত চায়, তাদের উৎপাদিত ওষুধ যুক্তরাজ্যের বাজারে সহজে প্রবেশ করুক। সেইসঙ্গে ভারতীয়দের জন্য ভিসার সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিও দিল্লির ফর্দের ওপরের দিকেই থাকছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ধারণা করা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠতে যাচ্ছে ভারত। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে মধ্যবিত্তের প্রসার বাড়বে, সেইসঙ্গে বাড়বে তাদের ক্রয়ক্ষমতা। তাই অনেক দেশের জন্যই ভারত খুবই কাঙ্ক্ষিত একটি বাজার। যুক্তরাজ্য চাইছে আগেভাগেই সেই বাজারের বড় অংশ দখলে নিতে। তবে হিসাব-নিকাশ খুব সহজ নয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিজের দেশের শিল্পখাত ও কর্মীদের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। তিনি চাইলেও অভ্যন্তরীণ মদের বাজারে নিয়োজিত লাখ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থানের বিষয়টি উপেক্ষা করতে পারবেন না, তাই বিদেশি মদের শুল্ক তুলে নেওয়াও হয়ত তার জন্য সহজ হবে না।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের কাছে অভিবাসনের বিষয়টি স্পর্শকাতর। বিশেষ করে ২০১৬ সালে ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনে এটি একটি বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তাই ভারতের ভিসার সংখ্যা বাড়ানোর দাবি প্রধানমন্ত্রী জনসনের পক্ষে পূরণ করা খুব সহজ হবে না।
বাণিজ্য আলোচনার শুরুর পর্যায়গুলো সাধারণত সহজেই পার হওয়া যায়। জটিল বিষয়গুলো রয়ে যায় শেষের অংশে সমঝোতার জন্য। তাই যুক্তরাজ্য-ভারত বাণিজ্য চুক্তির সত্যিকারের বাধাগুলো হয়ত স্পষ্ট হতে আরও কিছু সময় লাগবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুই পক্ষ ছাড় দিতে রাজি হলে এ বছরের শেষ নাগাদ হয়ত একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তবে বড়দিনের আগেই একটি পূর্ণ চুক্তি সইয়ের লক্ষ্যকে ‘উচ্চাভিলাসী’ বলছেন তারা।