রোববার থেকে লালদিঘী
এলাকাকে ঘিরে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এ মেলা। এর আগেই অবশ্য বিক্রেতারা দোকানের জায়গা
বুঝে নিয়েছেন, সাজানোর কাজও গুছিয়ে নিয়েছেন অনেকেই।
আর ঐতিহ্যবাহী খেলার
আসর বসবে সোমবার; জায়গা বদলে যা হবে এবার লালদিঘীর পাশে বালু দিয়ে বানানো মঞ্চে।
এবার মেলার সময়সীমাও
কমে হয়েছে তিন দিন।
লালদিঘী এলাকা ঘুরে
দেখা গেছে, মেলা শুরুর দু’দিন আগে থেকেই পসরা নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে শুরু
করেছেন বিক্রেতারা। তবে অন্যবারের তুলনায় তাদের সংখ্যা কম হওয়ায় এবার পণ্যের সমাহার
কম।
আয়োজকরা আশায় আছেন,
শনিবার রাতে বা রোববার সকালে আরও বিক্রেতা আসবেন মেলায় অংশ নিতে।
মেলার আয়োজক ‘আবদুল
জব্বারের স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটি’র আহ্বায়ক জহর লাল হাজারীর কথাতেও
আগের চেয়ে কম সংখ্যক দোকানিদের আসার তথ্য মিলল।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রতিবারের তুলনায় এবার এখন পর্যন্ত বিক্রেতা এসেছে কম। মাটির তৈজসপত্র,
খেলনা আর বাঁশ-বেতের পণ্য নিয়ে বিক্রেতারা এসেছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে।
“কিন্তু এখনও মুড়ি
মুড়কি, গাছের চারা, ফুল ঝাড়ু এসব পণ্য নিয়ে বিক্রেতারা আসেননি। আশা করি রাতে অনেকে
আসবে। কেউ কেউ যোগাযোগ করে জানিয়েছে তারা পথে আছেন।”
সেই ১৯০৯ সাল থেকে
লালদীঘির মাঠের আশেপাশের এলাকায় বসে ঐতিহ্যবাহী এই বৈশাখী মেলা। এবার লালদীঘি মাঠে
সংস্কার কাজ চলমান থাকায় মাঠ মেলেনি। প্রথমে তাই বলী খেলার সঙ্গে মেলাও স্থগিতের ঘোষণা
দিয়েছিল আয়োজক কমিটি।
পরে সিটি মেয়র এম রেজাউল
করিম চৌধুরীর উদ্যোগে খেলা ও মেলা আয়োজনের ব্যবস্থা হয়। পৃষ্ঠপোষকতা করছে চট্টগ্রাম
সিটি করপোরেশন।
নগরীতে কেনাকাটার হাজারো
অনুষজ্ঞ যোগ হলেও এ মেলার জন্য বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকে। মেলা
থেকে কেনেন নানা রকম গৃহস্থালী সামগ্রী। এ কারণে মেয়র এগিয়ে আসলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ
নিম্নমুখী থাকায় মেলা আর বন্ধ রাখা হয়নি।
মেলায় দোকান সাজিয়ে শনিবার বসেও গেছেন বেশ কয়েকজন; স্বল্পসংখ্যক ক্রেতার আনাগোনাও পড়েছে চোখে। ছবি: সুমন বাবু
কী থাকে মেলায়
মেলায় মেলে মাটির তৈরি
তৈজসপত্র, খেলনা, ফুলদানি ও পুতুল, বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র, হাতপাখা, মাছ
ধরার পলো, ডালা, কুলো, গাছের চারা, মুড়ি মুড়কি, পাটি আর নানা রকম দেশি ফল।
শনিবার বিকালে লালদীঘির
পাড়, সিনেমা প্যালেস ও কে দি রোড এলাকায় পসরা সাজাতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। তবে অন্যান্য
বছর মেলা বসত আন্দরকিল্লা মোড় থেকে বকশির বিট ধরে লালদীঘি পার্ক ও মাঠ ঘিরে সিনেমা
প্যালেস হয়ে শহীদ মিনার এলাকা ও বোস ব্রাদার্স পর্যন্ত।
মেলায় সাধারণত মুড়ি
মুড়কি নিয়ে আসেন নগরীর বাকলিয়া ও বলুয়ার দিঘীর পাড়ের ব্যবসায়ীরা। গাছের চারা নিয়ে আসে
হাটহাজারী, বাঁশখালী ও সাতকানিয়ার নার্সারি মালিকরা।
মাটির তৈজসপত্র আনেন
টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও শরীয়তপুরের শিল্পীরা। ফুলঝাড়ু আসে তিন পার্বত্য জেলা থেকে। কুমিল্লা
ও যশোর থেকে আসেন বিভিন্ন আসবাব বিক্রেতারা।
টাঙ্গাইল থেকে মাটির
ফুলদানি ও শো পিস নিয়ে আসা ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“এবার মেলা হবে শুধু তিন দিন। আগে হতো পাঁচ দিন। সেটা এক সপ্তাহও চলতো।
“শুরু থেকে মেলা হবে
কিনা তা ঠিক ছিল না। তাই অনেকের প্রস্তুতি নেই। বেশি মালপত্র নিয়ে আসলে বিক্রি হবে
কি না বুঝতে না পেরে কম নিয়ে এসেছি। বিক্রি না হলে ঈদের আগে এসব নিয়ে ফিরতে অনেক গাড়ি
ভাড়া চলে যাবে।”
কবি ও সাংবাদিক কামরুল
হাসান বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জব্বারের বলী খেলা ও মেলা এখন দেশের
ঐতিহ্য। সারাদেশের বিক্রেতারা মেলায় অংশ নিতে আসেন। শুরুতে হুট করে মেলা হবে না ঘোষণা
দেওয়াটা বিবেচনা প্রসুত হয়নি।
“পরে খেলা ও মেলা হবে
ঘোষণা দেওয়ার পর কিছু মহল থেকে রমজান মাস এবং যানজট হবে এমন অজুহাত দেওয়া শুরু হয়।
অথচ আগেও রমজানে আগেও মেলা হয়েছে। এ মেলার জন্য পুরো চট্টগ্রামের মানুষ বছরব্যাপী অপেক্ষায়
থাকে।”
বাংলাদেশের মেলা পার্বনের
মত লোকজ সংস্কৃতি বন্ধের পায়তারা দীর্ঘদিন থেকে চলছে দাবি করে তিনি বলেন, “এসব অপচেষ্টার
কারণে কুপমুণ্ডকতা বেড়ে গেছে। মানবিক সমাজ করতে হলে এমন সার্বজনীন উৎসব বেশি করে আয়োজন
করতে হবে। এবং যারা এগুলো বন্ধ করতে চায় তাদের প্রতিহত করতে হবে।“
মেলা শুরুর একদিন আগে শনিবার বিভিন্ন গৃহস্থালী ও লোকজ পণ্যের পসরা সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দূর থেকে আসা দোকানিরা। ছবি: সুমন বাবু
যানবাহন চলাচলের নির্দেশনা
এদিকে মেলা ঘিরে আশেপাশের
এলাকায় ২৪ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম
নগর পুলিশ (সিএমপি)।
শনিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
সিএমপি জানায়, আন্দরকিল্লা মোড় হতে বক্সিরহাট-লালদিঘীগামী রাস্তা, জেলা পরিষদ মার্কেট
হতে টেরিবাজার-আন্দরকিল্লামুখী রাস্তা, সিনেমা প্যালেস থেকে কে সি দে রোড হয়ে সোনালী
ব্যাংক পর্যন্ত, জহুর হকার্স মার্কেট থেকে বাটা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ থাকবে।
এছাড়া টেরিবাজার ফুলের
দোকান থেকে টেরিবাজারমুখী এবং আমানত শাহ মাজার রোডের মুখ হতে টেরিবাজারমুখী রাস্তাও
বন্ধ থাকবে।
পাশাপাশি টেরিবাজার,
খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চাক্তাইমুখী সব ধরণের পণ্যবাহী যানবাহন রাজাখালী দিয়ে প্রবেশ
করে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে বের হবে।
যানবাহনের চালক ও নগরবাসীকে
মেলা এলাকা এড়িয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে সিএমপি।
মেলার আয়োজক কমিটির
সভাপতি জহর লাল বলেন, “সিএমপি সব ধরনের সহযোগিতা করছে। মেলায় যারা দোকান দিয়ে বসবেন
তাদের কাছে কেউ চাঁদা দাবি করলে সাথে সাথে আমাদের জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে
জিরো টলারেন্স থাকবে।”
দুই বছর বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে চট্টগ্রামের লালদিঘী ঘিরে বৈশাখী মেলা আবারও বসছে। ছবি: সুমন বাবু
বলী খেলা সোমবার ৩টায়
সোমবার বিকেল তিনটায়
লালদীঘি মাঠের পাশে চার রাস্তার মোড় ঘেঁষে অস্থায়ী মঞ্চ করে হবে বলী খেলা।
স্থানীয় বদর পাতি এলাকার
বাসিন্দা আবদুল জব্বার সওদাগর চট্টগ্রামের যুবকদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ
করতে লালদীঘি মাঠে কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন ১৯০৯ সালে। সেই থেকে প্রতি বছর এই
আয়োজন হয়ে আসছে।
এবারের খেলায় ১০০ জন
বলী অংশ নেবেন। প্রথম স্থান অধিকারী পাবেন ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার ও ট্রফি।