আইপিএলে শুক্রবার রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে দিল্লির লড়াইয়ের শেষ ওভারে ওই ঘটনা ঘটে। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ছয় ছক্কা প্রয়োজন ছিল দিল্লির। ওবেড ম্যাককয়ের করা ওভারের প্রথম তিন বলেই ছক্কা মেরে খেলা দারুণ জমিয়ে দেন রভম্যান পাওয়েল।
গোল বাধে তৃতীয় ছক্কার ডেলিভারিটি নিয়ে। ফুল টস বলটি ‘নো ছিল বলে আম্পায়ারদের কাছে দাবি করেন উইকেটে পাওয়েলের সঙ্গী কুলদিপ যাদব। একই দাবি নিয়ে যোগ দেন পাওয়েল। তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে সিদ্ধান্ত পাঠাতে বলেন তারা। কিন্তু মাঠের আম্পায়াররা তাতে কান দেননি।
এতে উত্তেজনা ছড়ায় মাঠের বাইরেও। ডাগআউটে পান্তকে দেখা যায় ক্ষিপ্ত। এক পর্যায়ে দিল্লি অধিনায়ক হাত ইশারায় বারবার দুই ব্যাটসম্যানকে মাঠ ছেড়ে আসতে বলেন। দুই ব্যাটসম্যান মাঠ ছাড়তে উদ্যত হয়ে আবার থমকে যান। তারা বুঝে উঠতে পারছিলেন না করণীয়।
এক পর্যায়ে দিল্লির সহকারী কোচ প্রাভিন আমরে মাঠে ঢুকে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলেন। এই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রাজস্থানের জস বাটলারকে দেখা যায় দিল্লির ডাগআউটের সামনে গিয়ে পান্তের সঙ্গে কথা বলতে।
সব মিলিয়ে খেলা থমকে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। এত কিছুর পরও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল দুই আম্পায়ার তৃতীয় আম্পায়ারে শরণাপন্ন হননি। টিভি রিপ্লে দেখে অবশ্য পরিষ্কার বোঝা যায়নি, তবে ‘নো বল’ দাবির পক্ষেই জোর বেশি বলে মনে হয়েছে।
এরপর আবার শুরু হয় খেলা। ম্যাককয় ততক্ষণে নিজেকে সামলে নেন। চতুর্থ বলে আসেনি রান, পঞ্চম বলে মেলে কেবল দুই রান। শেষ বলে আউট হন পাওয়েল।
ম্যাচ শেষের পরপর টিভিতে প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের হতাশার কথা সরাসরিই বলেন পান্ত।
“শেষ দিকে আমাদের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল পাওয়েল। আমার মনে হয়, এই ‘নো’ বল আমাদের জন্য মূল্যবান হতে পারত। ‘নো’ হয়েছে কিনা, তা চেক করে দেখা যেত (তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে)। তবে সেটা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। অবশ্যই আমি হতাশ, তবে বেশি কিছু করার নেই।”
“মাঠে সবাই দেখেছে যা হয়েছে। আমার মতে, তৃতীয় আম্পায়ারের নিজ থেকে হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল এবং ‘নো’ বলের সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত ছিল। তবে আমি নিজে তো আর আইন বদলাতে পারি না।”
সহকারী কোচ প্রাভিন আমরেকে মাঠে পাঠানোর ঘটনায় অনুশোচনা আছে কিনা, এই প্রশ্নে নিজের ভুল স্বীকার করেন পান্ত। তবে যুক্তিও তুলে ধরেন পক্ষে।
“অবশ্যই কাজটি ঠিক হয়নি। তবে মাঠে যা হয়েছে, সেটিও ঠিক ছিল না। মুহূর্তের উত্তেজনায় হয়ে গেছে, কিছু করার নেই। আমার মনে হয়, ভুলটা দুই পক্ষেরই ছিল, শুধু আমাদের নয়। কারণ, টুর্নামেন্টজুড়ে ভালো কিছু আম্পায়ারিং আমরা দেখেছি। আমার মনে হয়, আমরা আরও ভালো করতে পারতাম।”
পান্ত নিজের পক্ষে যুক্তি দেখালেও কাউকে খুব একটা পাশে পাচ্ছেন না। টিভি ধারাভাষ্যে পমি এমবাংওয়া, কেভিন পিটারসেনরা তখনই প্রবল সমালোচনা করেন পান্তের। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল হলেও মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো গুরুতর কিছুর জায়গা ক্রিকেটে নেই বলেই অভিমত জানান তারা।
কোচ রিকি পন্টিং ডাগআউটে থাকলে এমন কিছু হতে দিতেন না বলেই বিশ্বাস পিটারসেনের। পরিবারের একজন কোভিড পজিটিভ হওয়ায় দিল্লি কোচ আছেন আইসোলেশনে।
সহকারী কোচদের একজন, শেন ওয়াটসনকে ওই সময়ই দেখা গেছে পান্তকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনেও সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার বললেন, তাদের অধিনায়কের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় তাদের কাছে।
“শেষ ওভারে যা হয়েছে, তা খুবই হতাশার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা ম্যাচে অমন অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম, কারণ ম্যাচজুড়ে আমরা তখনও পর্যন্ত কাজগুলো ঠিকঠাক করতে পারিনি।”
“দিনশেষে, দিল্লি ক্যাপিটালসে একটা ব্যাপার হলো, যা হয়েছে, সেটির পক্ষে সমর্থন নেই আমাদের। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল হোক বা ঠিক, মেনে নিতেই হবে। কেউ একজন মাঠে ছুটে যাচ্ছে, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। এটা অবশ্যই ভালো কিছু নয়।”
পান্তের কাণ্ডে তখন ম্যাচ বন্ধ থাকায় বরং মোমেন্টাম প্রতিপক্ষের দিকে চলে গিয়েছে বলেই মনে করেন ওয়াটসন।
“কোনো সংশয় নেই, এরকম লম্বা সময় খেলা বন্ধ থাকলে মোমেন্টাম বদলে যায়। ওই সময়টুকুকে ম্যাককয় (বোলার) নিজেকে আবার গুছিয়ে নিয়েছে। ওই বিরতি আসলে রাজস্থান রয়্যালসের পক্ষে কাজ করেছে। দুর্ভাগ্যজনক বিরতি ছিল ওটা।”
“দিনশেষে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে, তা যা-ই হোক না কেন। খেলা চালিয়ে যেতে হবে। ছেলেবেলা থেকেই আমাদেরকে শেখানো হয়েছে, আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এটিই আমাদের মনে রাখা উচিত ছিল।”