ওই সংঘাতের মামলায় বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
ওই ঘটনার অনুসন্ধানে বিএনপি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
গত সপ্তাহে দুই দোকানের কর্মীদের বচসায় জড়িয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কয়েক কর্মী আহত হওয়ার পর দোকানকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল নিউ মার্কেট এলাকা। ওই সংঘর্ষে দুজন মারা যায়, আহত হয় অর্ধ শতাধিক।
ফখরুল বলেন, “গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উদঘাটিত হয়েছে যে, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী। ভিডিও ফুটেজ থেকে অন্তত তিনজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।”
চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব এই সংঘাতের নেপথ্যে প্রভাব রেখেছে দাবি করে তিনি বলেন, “শুধু এই ঘটনাই নয়, নিউ মার্কেটসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা গুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই শাসক গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় ব্যাপক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশের সহায়তায় সেখানে অপরাধ জগত গড়ে তুলেছে।
“গণমাধ্যমের রিপোর্টিংয়ে বেরিয়ে এসেছে যে, এই পুরো এলাকাটা ইনক্লুডিং টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, হোস্টেল সবগুলোই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। এটাও এসেছে যে, ছাত্রলীগের সুনির্দিষ্ট কমিটি না থাকার কারণে অনেকগুলো গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপগুলোর বিরোধের কারণে এসব ঘটনা প্রায়ই ঘটে।”
যে দুই দোকান থেকে সংঘাতের সূত্রপাত, তার মালিক নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন। পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
এর প্রতিপাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকারের সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে যখন জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে, তখন দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এই সংষর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপিকে জড়াচ্ছে। সরকার পূর্বের মতোই মামলার বেড়াজালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বন্দি করার চক্রান্ত করছে।”
তিনি বলেন, “হেলমেটধারী প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করে বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার ও প্রায় ২৪ জন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতার নাম উল্লেখ করে প্রায় ১২শ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
“বিএনপি মনে করে, এই অবৈধ সরকার পুনরায় পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপির নিরাপরাধ নেতা মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ নিজেদের ব্যর্থতা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আড়াল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।”
ব্যস্ত নিউ মার্কেট এলাকায় দিনভর সংঘাত, কার কী দায়?
নিউ মার্কেটে সংঘাত: যে দুই দোকান থেকে সূত্রপাত, তার মালিক মকবুল প্রধান আসামি
নিউ মার্কেটের প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানে বিএনপি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, “এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমরা জনসমক্ষে প্রকাশ করব।”
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাবেন কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কথা আমরা বলি না, কারণ বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে।”
ফখরুল বলেন, “নিউ মার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনা প্রমাণ করেছে দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেই ভয়াবহ হামলা, পাল্টা হামলা, মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হেলমেট পরিহিত সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে মানুষ মারছে অথচ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা জনগণের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিউ মার্কেটের ঘটনায় নিহত নাহিদ ও মুরসালিনের নিহত হওয়ায় শোক প্রকাশ করা হয় এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় আহত সাংবাদিকসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের আশু সুস্থতা কামনা করা হয়েছে।