ক্যাটাগরি

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে উড়িয়ে চারে আর্সেনাল

এমিরেটস স্টেডিয়ামে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৩-১ গোলে জিতে পয়েন্ট টেবিলে চার নম্বরে উঠেছে আর্সেনাল।

নুনো তাভারেস ও বুকায়ো সাকার গোলে স্বাগতিকরা এগিয়ে যাওয়ার পর প্রথমার্ধেই ব্যবধান কমান রোনালদো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে পেনাল্টি থেকে সমতা টানার সুযোগ হাতছাড়া করেন ফের্নান্দেস। পরে চমৎকার গোলে ব্যবধান আরও বাড়ান গ্রানিত জাকা।

পরপর দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারল ইউনাইটেড। গত রাউন্ডে লিভারপুলের মাঠে ৪-০ গোলে হেরেছিল প্রিমিয়ার লিগের সফলতম দলটি।

লিগে শীর্ষ চারে থাকার পথ আরও কঠিন হয়ে গেল ইউনাইটেডের। আর আশা উজ্জ্বল হলো আর্সেনালের।

৩৩ ম্যাচে ১৯ জয় ও ৩ ড্রয়ে মিকেল আর্তেতার দলের পয়েন্ট হলো ৬০।

আর্সেনালের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে নেমে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পার। ৩৪ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

শীর্ষ চারের লড়াইয়ে আরেক দল চেলসির অবস্থান সবচেয়ে শক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে দলটির পারফরম্যান্স ভালো না হলেও পয়েন্ট টেবিলে তিন নম্বরে আছে তারা, ৩১ ম্যাচে ৬২ পয়েন্ট নিয়ে।

আর্সেনালের শুরুটা হয় দারুণ। তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় তারা। ডান দিক থেকে আসা ক্রস ডি-বক্সে ক্লিয়ার করার চেষ্টায় বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি ইউনাইটেডের রাফায়েল ভারানে ও আলেক্স তেলেস। বল পেয়ে সাকার নেওয়া শট দাভিদ দে হেয়া ঝাঁপিয়ে ঠেকালেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। কাছ থেকে ফাঁকা জালে বল পাঠান তাভারেস।

ছেলে হারানোর পর এই ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফেরেন রোনালদো। পর্তুগিজ তারকার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানাতে ম্যাচের সপ্তম মিনিটে দাঁড়িয়ে হাততালি দেয় এমিরেটস স্টেডিয়ামের দর্শকরা। গত সপ্তাহে অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচেও দেখা গিয়েছিল একইরকম দৃশ্য।

দশম মিনিটে গোলরক্ষক অ্যারন র‌্যামসডেলের ভুলে বিপদে পড়তে বসেছিল আর্সেনাল। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের পায়ে বল তুলে দেন তিনি। সেখান থেকে বল পেয়ে ফের্নান্দেসের নেওয়া শট একজনের পায়ে লেগে বাইরে দিয়ে যায়।

২৫তম মিনিটে সমতায় ফিরতে পারত ইউনাইটেড, কিন্তু অনেকটা দূর থেকে দিয়োগো দালোতের শট ক্রসবারে লাগে। একটু পর ওয়ান-অন-ওয়ানে এডি এনকেটিয়ার শট ফিরিয়ে দেন দে হেয়া।

ঘটনাবহুল এক গোলে ৩২তম মিনিটে স্কোরলাইন ২-০ করে ফেলে আর্সেনাল। ডি-বক্সের বাইরে মার্টিন ওডেগোরকে পাস দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন সাকা। তেলেসের চ্যালেঞ্জে তিনি পড়ে যাওয়ার সময় ফিরতি পাস তার পায়ে লেগে বল পেয়ে জালে পাঠান এনকেটিয়া।

তবে ভিএআরের সাহায্যে দীর্ঘক্ষণ সময় নিয়ে তেলেসের ফাউলের জন্য পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সফল স্পট-কিকে ব্যবধান বাড়ান ইংলিশ উইঙ্গার সাকা।

দুই মিনিট পরই ব্যবধান কমান রোনালদো। বাঁ দিক থেকে নেমানিয়া মাতিচ ক্রস বাড়ান ডি-বক্সে। ছয় গজ বক্সের মুখে সঙ্গে লেগে থাকা দুই খেলোয়াড়ের সামনে থেকে শটে প্রিমিয়ার লিগে নিজের শততম গোলটি করেন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে ১০০ গোল করলেন রোনালদো। আগের তিন জন হলেন- ওয়েইন রুনি (১৮৩), রায়ান গিগস (১০৯) ও পল স্কোলস (১০৭)। সব মিলিয়ে ৩৩তম ও পর্তুগালের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি।

ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে রোনালদোর প্রথম গোলটি ছিল ২০০৩ সালের ১ নভেম্বর, পোর্টসমাউথের বিপক্ষে। প্রিমিয়ার লিগে কোনো খেলোয়াড়ের প্রথম ও শততম গোলের মাঝে সবচেয়ে বড় ব্যবধান এটিই (১৮ বছর ১৭৩ দিন)। আগের রেকর্ড ছিল গিগসের (১৭ বছর ৯১ দিন)।

একই সঙ্গে প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে শত গোলের মাইলফলক ছুঁলেন রোনালদো (৩৭ বছর ৭৭ দিন)। এখানে ছাড়িয়ে গেলেন পিটার ক্রাউচকে (৩৬ বছর ২ দিন)।

বিরতির আগে দূর থেকে তেলেসের শট ফিরিয়ে ব্যবধান ধরে রাখেন র‌্যামসডেল। ৫৫তম মিনিটে ডি-বক্সে মাতিচের হেড আর্সেনালের তাভারেসের হাতে লাগলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু স্পট-কিকে বল পোস্টে মারেন ফের্নান্দেস।

একটু পর রোনালদো জালে বল পাঠালেও কিঞ্চিৎ ব্যবধানে অফসাইডে ছিলেন তিনি। ৬৩তম মিনিটে তার পাসে কাছ থেকে দালোতের শট র‌্যামসডেলের হাত ছুঁয়ে পোস্টে লাগে।

৭০তম মিনিটে দর্শনীয় এক গোলে স্কোরলান ৩-১ করেন জাকা। ২৫ গজ দূর থেকে সুইজারল্যান্ডের এই মিডফিল্ডারের বাঁ পায়ের বুলেট গতির শট চোখের পলকে জালে জড়ায়। কোনো সুযোগই পাননি দে হেয়া। বাকি সময়ে আর পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনো দলই।

পুরো ম্যাচে গোলের জন্য দুই দলই শট নেয় ১৪টি করে। আর্সেনালের ৭টি ও ইউনাইটেডের ৫টি ছিল লক্ষ্যে।