ক্যাটাগরি

যে উপায়ে রাশিয়া প্রমাণের চেষ্টা করছে, নিষেধাজ্ঞায় টিকে থাকা যায়

পুতিন তার দেশকে
দীর্ঘ পথ
পাড়ি দেওয়ার
জন্য প্রস্তুত
করছেন।

“রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক
চাপের নীতি
থেকে পিছু
হটার পরিকল্পনা
নেই সম্মিলিত
পশ্চিমের। তাই রাশিয়ার
অর্থনীতির প্রতিটি খাতের অভ্যন্তরীণ সুযোগের
ওপর ভিত্তি
করে দীর্ঘমেয়াদী
পরিকল্পনা নেওয়া দরকার,” সম্প্রতি বিমান
চলাচল নির্বাহীদের
রুশ প্রেসিডেন্ট
এমনটাই বলেছেন।

পুতিন যে স্বনির্ভর
হওয়ার নীতি
নেবেন, তা
আগে থেকেই
অনুমান করা
হচ্ছিল বলে জানিয়েছে সিএনএন।

২০১৪-তে ক্রাইমিয়া
দখলে নেওয়ার
পর থেকে
বাড়তে থাকা
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা
মোকাবেলায় মস্কো ‘ফোর্ট্রেস রাশিয়া’ নামে
পরিচিত এক
কৌশলের মাধ্যমে
প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

অবশ্য এরপরও ২৪
ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরুর প্রতিক্রিয়ায়
পশ্চিমা দেশগুলো
যেসব অর্থনৈতিক
নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে আর পাশাপাশি ভবিষ্যতে
নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে এই শঙ্কায়
যে বিপুল
সংখ্যক কোম্পানি
রাশিয়ার সঙ্গে
বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, তা
ক্রেমলিনকে বড় ধরনের ধাক্কাই দিয়েছে।

“পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক
পূর্বাভাস যারা দিচ্ছিলেন, তাদের একজনও
এমনটা ভাবেননি,”
রাশিয়ার ৬০
হাজার কোটি
ডলার রিজার্ভের
অর্ধেক জব্দের
দিকে ইঙ্গিত
করে মার্চে
বলেছিলেন রুশ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

রাশিয়া জানিয়েছে, তারা
তাদের বৈদেশিক
রিজার্ভের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আদালতে
চ্যালেঞ্জ করবে; জব্দ সম্পদের কারণে
তাদেরকে ঋণখেলাপি
গণ্য করা
হলে মামলা
করারও হুমকি
দিয়েছে তারা। 

রাশিয়ার এ নতুন
বাস্তবতায় টিকে থাকতে কোম্পানি, শিল্প
প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তারা যেসব উপায়ের
দ্বারস্থ হয়েছেন,
তার কয়েকটি
হলো:

১. লাডার নকশায় বদল

রাশিয়ার সোভিয়েত আমলের
নিজস্ব আইকনিক
গাড়ির ব্র্যান্ড
লাডা আমদানিকৃত
যন্ত্রাংশের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। লাডার নির্মাতা
প্রতিষ্ঠান আভতোভাজ ফরাসী গাড়িনির্মাতা রেনোর
মালিকানাধীন।

রেনো রাশিয়ার বাজার
ছেড়ে দিচ্ছে
এই সংবাদের
প্রতিক্রিয়ায় ২৪ মার্চ আভতোভাজ জানায়,
তারা বেশকিছু
মডেলের নকশায়
শিগগিরই বদল
আনছে, যাতে
তাদেরকে আমদানি
করা যন্ত্রাংশের
ওপর কম
নির্ভরশীল হতে হয়।

গাড়ির কোন কোন
মডেলে বদল
আসবে তা
না জানালেও
তারা বলেছে,
আসছে মাসগুলোতে
বদলে যাওয়া
নকশার গাড়িগুলো
ধীরে ধীরে
বাজারে আসবে।

নকশা বদলে আনা
গাড়িগুলোতে এখনকার গাড়ির তুলনায় অনেক
ফিচার বাদ
পড়বে বলেই
মনে করছেন
রাশিয়ার গাড়িশিল্প
জার্নাল অটো
বিজনেস রিভিউ’র প্রধান
সম্পাদক এভগেনি
এসকভ।

২. ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের ভিকন্তাকচে আকৃষ্ট করা

এই তো কিছুদিন
আগেও মাসিক
ব্যবহারকারীর ভিত্তিতে রাশিয়ায় সবচেয়ে শীর্ষ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
ছিল ইনস্টাগ্রাম। ফেইসবুকের রুশ ভার্সন
ভিকন্তাকচে ছিল দ্বিতীয়।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণ
এবং বিশেষ
করে গতমাসে
রুশ নিয়ন্ত্রক
কর্তৃপক্ষ ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে প্রবেশাধিকার
বন্ধ করে
দেওয়ার পর
থেকে ভিকন্তাকচে
কনটেন্ট ক্রিয়েটরদেরকে
তার প্ল্যাটফর্মে
নিয়ে আসতে
প্রলুব্ধ করার
কোনো পথই
বাকি রাখছে
না।

তারা এপ্রিলের শেষ
পর্যন্ত কনটেন্টের
আয় থেকে
লভ্যাংশ না
নেওয়ার ঘোষণা
দিয়েছে; ১
মার্চ থেকে
কোনো কনটেন্ট
ক্রিয়েটর যদি
অন্য প্ল্যাটফর্ম
থেকে ভিকন্তাকচে-তে আসেন
বা তার
পুরনো অ্যাকাউন্ট
সচল করেন
তাহলে বিনামূল্যে
প্রচারের সুযোগ
দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি
দিয়েছে তারা।

ভিকন্তাকচে-তে কীভাবে
ধাপে ধাপে
ব্যবসা চালু
করা যায়
সে বিষয়ক
নির্দেশনাও প্রকাশ করেছে রুশ এ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি।

তাদের এসব পদক্ষেপ
কাজেও লাগছে। মার্চে তাদের মাসিক
ব্যবহারকারী ১০ কোটি ছাপিয়ে রেকর্ডও
গড়েছে বলে
দেখাচ্ছে তাদেরই
তথ্য।

অন্যদিকে ব্র্যান্ড অ্যানালিটিকসের
তথ্য মতে,
২৪ ফেব্রুয়ারি
থেকে ৬
এপ্রিলের মধ্যেই
ইনস্টাগ্রাম তার প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় রুশ
ভাষাভাষী ব্যবহারকারীর
অর্ধেক হারিয়ে
ফেলেছে।

অবশ্য অনেক রুশ
এখনও ভিপিএন
দিয়ে ইনস্টাগ্রাম
চালাচ্ছেন, সেখানে তাদের ব্যবসাও চলছে।

৩. নিজস্ব ক্রেডিট কার্ড

ক্রিমিয়া দখলে নেওয়ার
পর রাশিয়ার
বেশ কয়েকটি
বড় ব্যাংক
নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে
এটা কাজেও
এসেছে। ‘মির’ নামে
পরিচিত রাশিয়ার
ন্যাশনাল পেমেন্ট
কার্ড সিস্টেম
ও ব্যাংক
কার্ড সিস্টেমের
বিকাশ ত্বরান্বিত
হয়েছে।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
তথ্য অনুযায়ী,
২০২১ সালে
১১ কোটি
৩০ লাখ
‘মির’ কার্ড
ইস্যু হয়েছে,
২০১৬ সালের
শেষেও এই
সংখ্যা ছিল
মাত্র ১৭
লাখ ৬০
হাজার। গত বছর
রাশিয়ায় কার্ডে
যত পেমেন্ট
হয়েছে তার
এক চতুর্থাংশই
মির কার্ডে
হয়েছে।

এর অর্থ হচ্ছে,
মার্চের শুরুর
দিকে ভিসা
ও মাস্টারকার্ড
যখন রাশিয়ায়
তাদের কার্যক্রম
ও লেনদেন
স্থগিত রাখার
ঘোষণা দিচ্ছে,
তখনই রাশিয়ার
হাতে বিকল্প
আছে।

তবে মির এখনও
পুরোপুরি বিকল্প
হয়ে উঠতে
পারেনি। এটি কেবল
রাশিয়ার ভেতর
ও অল্পকিছু
বাইরের দেশ,
মূলত পুরনো
সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোতে
কাজ করে।

বিশ্বজুড়ে পৌঁছাতে না
পারায় সুইফটের
বিকল্প তৈরির
চেষ্টাতেও রাশিয়া হোঁচট খেয়েছে। এসপিএফএস নামে
পরিচিত তাদের
নিজস্ব ভার্সনে
গত বছর
ব্যবহারকারী ছিল ৪০০, আর সুইফটের
১১ হাজার।

৪. সরকারি কাজে চাকরি 

ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের উপপ্রধান অর্থনীতিবিদ এলিনা
রিবাকভার মতে,
রাশিয়ায় এখনও
গণবেকারত্ব দেখা যায়নি। ক্রেমলিন যেসব সমস্যাকে
ভয় পায়,
তার একটি
হল এই
গণবেকারত্ব, কেননা এটি অসন্তোষ উসকে
দেওয়ার ক্ষমতা
রাখে।

সম্ভাব্য এই গণবেকারত্বকে
মাথায় রেখে
মস্কোর শহর
কর্তৃপক্ষ ইউক্রেইনে অভিযানের কারণে রাশিয়ায়
ব্যবসা স্থগিত
বা বন্ধ
ঘোষণা করা
পশ্চিমা কোম্পানিগুলোতে
কর্মরতদের পুনঃপ্রশিক্ষণ ও নিয়োগের জন্য
একটি কর্মসূচি
হাতে নিয়েছে।

এখন দুই লাখ
পর্যন্ত চাকরি
ঝুঁকিতে আছে
বলে মনে
করছেন মস্কোর
মেয়র সের্গেই
সোবিয়ানিন।

এর সমাধান হচ্ছে,
পশ্চিমাদের ছেড়ে যাওয়া কর্মীদের ‘দরকারি
কিছু করতে
দেওয়া’, নিজের
ব্লগে সম্প্রতি
এক পোস্টে
এমনটাই লিখেছেন
তিনি।

যেসব বিকল্পের কথা
তিনি লিখেছেন,
তার মধ্যে
আছে- পাসপোর্ট,
জন্ম নিবন্ধনের
মতো দাপ্তরিক
নথি প্রশাসনে
চাকরি, শহরের
পার্কগুলো বা যেসব অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র
বানানো হচ্ছে
সেগুলোতে কাজ
করা। এই ধরনের
চাকরি সৃষ্টি
ও শ্রমিকদের
পুনঃপ্রশিক্ষণের জন্য ৪ কোটি ১০
লাখ ডলার
পৃথক করে রাখাও
হয়েছে। 

আর বিভিন্ন বিদেশি
কোম্পানিতে যারা উচ্চপদে আসীন ছিলেন
তাদের বেশিরভাগই
শেষ পর্যন্ত
দেশ ছাড়বেন,
বলছেন রিবাকভা।

এরপর কী?

রাশিয়া এখন পর্যন্ত
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার
প্রাথমিক ধাক্কা
ভালোভাবেই সামলেছে, তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
ধসে পড়েনি। এর জন্য তারা
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কৃতিত্ব দিতে পারে;
নিষেধাজ্ঞার পরপরই তারা সুদের হার
২০ শতাংশ
পর্যন্ত বাড়িয়ে
ফেলে ও
পুঁজির ওপর
কঠোর নিয়ন্ত্রণ
আরোপ করে। পরে অবশ্য তারা
সুদের হার
কমিয়ে ১৭
শতাংশে নিয়ে
আসে।

তবে এর মানেই
এই নয়
যে, রাশিয়ার
বাজে সময়
পার হয়ে
গেছে। নিষেধাজ্ঞা ও
বিভিন্ন কোম্পানি
তাদের সঙ্গ
ত্যাগ করায়
চলতি বছর
দেশটির অর্থনীতি
সাড়ে ৮
শতাংশ সংকুচিত
হতে পারে
বলে মনে
করছে আন্তর্জাতিক
মুদ্রা তহবিল
(আইএমএফ)। ইউরোপ যদি
রাশিয়ার তেল
আমদানি বন্ধ
করে দেয়,
তাহলে এই
ক্ষতি আরও
বড় হতে
পারে।

রাশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতি এখন
১৭ দশমিক
৫০ শতাংশ,
যা রাশিয়ার
নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে খোদ
পুতিনও স্বীকার
করে নিয়েছেন।

তাদের জন্য আরেকটা
ঝুঁকি হচ্ছে,
আমদানি করা
পণ্যের ওপর
নির্ভরশীলতা; যেসব পণ্যের অনেকগুলোই এখন
নিষেধাজ্ঞার আওতায়।