ক্যাটাগরি

মোসাদ্দেকের আবাহনীর কাছে মাশরাফি-সাকিবদের হার

মাশরাফির কথায় মোটামুটি পরিষ্কার লিগের চিত্র। শিরোপার লড়াইয়ে থাকা দুই দল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব দুই মাঠে হেরে গেছে একই দিনে।

জয়টা বেশি জরুরি ছিল রূপগঞ্জেরই। পয়েন্টে তারা পিছিয়ে। কিন্তু মাশরাফি, সাকিব আল হাসানের দল ৮১ রানে হেরে গেছে আবাহনী লিমিটেডের কাছে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে আবাহনী ৫০ ওভারে তোলে ২৭৯ রান। রূপগঞ্জ গুটিয়ে যায় স্রেফ ১৯৮ রানে।

সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আবাহনীর জয়ের নায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অলরাউন্ডার এ দিন অবশ্য বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। আউট হয়ে যান ২৮ রান করে। তবে বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়ে আবাহনী অধিনায়কই ম্যান অব দা ম্যাচ।

শিরোপা লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়া আবাহনীর একাদশে এ দিন ছিলেন না লিটন কুমার দাস। আগের ম্যাচে ৩৯ বলে ৬১ করা মুনিম শাহরিয়ারও ছিলেন বাইরে। শুরুর দিকে একটি সেঞ্চুরির পর তেমন ভালো করতে না পারা শামীম হোসেনও পাননি সুযোগ।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দলের ইনিংস শুরু করেন মাহমুদুল হাসান জয় ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ। প্রথম ৫ ওভারে খানিকটা সাবধানী ব্যাটিংয়ে ২১ রান তোলেন দুজন। ষষ্ঠ ওভারে মাশরাফির লেংথ বল পুল করে ছক্কা মারেন নাঈম। পরের বলটি ছিল অফ কাটার, বুঝতে না পেরে আবার উড়িয়ে মেরে মিড অনে ধরা পড়েন নাঈম (২৫ বলে ২২)।

পরের ওভারেই আল আমিন হোসেন ফেরান মাহমুদুল হাসান জয়কে (৬)। বেশ বাইরের বলে স্ল্যাশ করেন জয়, পয়েন্টে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন সাব্বির রহমান।

তবে ৩০ রানে ২ উইকেট হারালেও আবাহনীকে চাপে পড়তে দেননি নাজমুল হোসেন শান্ত ও আফিফ হোসেন। দুজনের ব্যাটিংয়ে ছিল যেন তারুণ্যের দুরন্ত প্রকাশ। রূপগঞ্জের অভিজ্ঞ বোলারদের পাত্তা না দিয়ে দুজন ছুটে যান দারুণ ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে।

২৩ ওভারে ১২৬ রানের জুটি ভাঙে আফিফের বিদায়ে। মুক্তার আলির স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে আফিফ বল টেনে আনেন স্টাম্পে। তার ইনিংস থামে ৭২ বলে ৬২ রানে।

শান্ত এরপর মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে গড়েন আরেকটি কার্যকর জুটি। এই জুটিতেই ফিফটি হয়ে যায় অনায়াসেই। ৪০ ওভারে আবাহনীর রান ছিল ৩ উইকেটে ২০৬।

শান্তর সামনে যখন সেঞ্চুরির হাতছানি, তা মিলিয়ে যায় তার ভুলেই। সাকিবকে স্লগ করার চেষ্টায় বল তুলে দেন ওপরে। সাকিব নিজেই নেন ক্যাচ। দুর্দান্ত ইনিংসটি শেষ হয় ১০১ বলে ৮৬ রান করে।

সাকিব পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন থিতু হয়ে যাওয়া মোসাদ্দেক হোসেনকেও। একাদশে ফেরার ম্যাচে তৌহিদ হৃদয় উইকেটে গিয়ে প্রথম বলেই সাকিবকে ছক্কা মারেন স্লগ সুইপে। পরে ছক্কায় ওড়ান তিনি মাশরাফিকেও। তবে সাকিব একটু পরই শোধ তোলেন হৃদয়কে ফিরিয়ে (১৬ বলে ২৪)।

সাকিবের এই তিন উইকেটে একটু কমে আসে রানের গতি। তবে সাইফ উদ্দিন ২৭ বলে ৩০ করে আবাহনীকে নিয়ে যান ২৮০ রানের কাছে।

মিরপুরের উইকেটে এ দিন বল দারুণভাবে ব্যাটে এসেছে। বাউন্সও ছিল সমান। ওই রান তাই তাড়া করার মতোই ছিল। রূপগঞ্জের শুরুটা হয় বেশ ভালো।

লিগের শুরু থেকে ওপেনিং নিয়ে ধুঁকতে থাকা দল রকিবুল হাসানের সঙ্গে এ দিন ওপেন করায় সাব্বির রহমানকে। ৯ ওভারে দুজন তোলেন ৪৭ রান।

তবে শুরুটা ভালো করেই ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ দুজনই। বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামকে সুইপ খেলার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন রকিবুল (২৭)। দলের পথ হারানোর শুরু সেখান থেকেই।

সাকিব আল হাসান তিনে নেমে তানজিম হাসান সাকিবের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান ১ রানে। তবে সুযোগটি তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। মোসাদ্দেক বোলিংয়ে এসেই নিতে থাকেন একের পর এক উইকেট।

মোসাদ্দেকের প্রথম বলেই আলতো করে তুলে মেরে লং অনে ধরা পড়েন সাকিব (৩)। আবাহনী অধিনায়ক পরে এক ওভারেই ফেরান নাঈম ইসলাম ও ইরফান শুক্করকে। এর ফাঁকে শহিদুল ইসলামের স্লোয়ারে কাভারে ক্যাচ দেন সাব্বির (৩৮)।

বিনা উইকেটে ৪৭ থেকে রূপগঞ্জের রান হয়ে যায়ন ৫ উইকেটে ৭৯।

এরপর শেষ আশা হয়ে ছিলেন কেবল চিরাগ জানি। এবারের লিগে দুর্দান্ত খেলা ভারতীয় অলরাউন্ডার ৪৮ রান করে বোল্ড হন তানভিরের বলে। শেষের দিকে তানবীর হায়দার ও মুক্তার আলি চেষ্টা করেন লড়াইয়ে। ২২ বলে ২২ করে মুক্তার ফেরেন মোসাদ্দেকের বলে সীমানায় ধরা পড়ে। তানভির অপরাজিত থাকেন ৩৬ রান করে।

রূপগঞ্জ তবু ছুঁতে পারেনি ২০০ রানও। গুটিয়ে যায় তারা ৪৯ বল আগেই।

দিনের অন্য এক ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের কাছে উড়ে যায় শীর্ষে থাকা শেখ জামাল। লিগের সমীকরণ তাই থেকে যায় আগের মতোই। শেখ জামাল ও রূপগঞ্জের পয়েন্টের ব্যবধান ৪।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আবাহনী : ৫০ ওভারে ২৭৯/৭ (জয় ৬, নাঈম ২২, শান্ত ৮৬, আফিফ ৬২, মোসাদ্দেক ২৮, হৃদয় ২৪, সাইফ ৩০*, জাকের ১৩, শহিদুল ১*; আল আমিন ৭-১-৩৭-১, মাশরাফি ৮-০-৫৬-১, সঞ্জিত ৬-০-৩২-০, নাঈম ৬-০-৩৩-০, চিরাগ ৭-০-৩৪-০, সাকিব ১০-০-৫৩-৩, মুক্তার ৬-০-৩৪-১)

রূপগঞ্জ:  ৪১.৫ ওভারে ১৯৮ (রকিবুল ২৭, সাব্বির ৩৮, সাকিব ৩, নাঈম ৭, চিরাগ ৪৮, ইরফান ১, মাশরাফি ৯, তানবীর ৩৬*. মুক্তার ২২, সঞ্জিত ২, আল আমিন ০; সাইফ উদ্দিন ৬.৫-১-২৫-১, তানভির ১০-০-৩৫-৩, তানজিম ৭-০-৫৪-১, মোসাদ্দেক ১০-১-৪০-৪, শহিদুল ৬-০-৩৩-১, আফিফ ২-০-১০-০)।

ফল: আবাহনী লিমিটেড ৮১ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন।