ক্যাটাগরি

ম্যাক্রোঁ না ল্য পেন? রায় দিচ্ছে ফ্রান্স

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের
দ্বিতীয় পর্বের এ ভোটের আগে হওয়া জনমত জরিপগুলোতে ম্যাক্রোঁকে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর
তুলনায় সামান্য এগিয়ে থাকতে দেখা গেলেও ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ ঘটিয়ে ল্য পেনের জয়ও অসম্ভব নয়।

তবে বেশিরভাগ বিশ্লেষকই
মনে করছেন, নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে আপ্রাণ চেষ্টা এবং দল ন্যাশনাল র‌্যালি পার্টির
অনেক নীতির ব্যাপারে সুর বদলালেও ল্য পেন অনেক ফরাসীরই মন জয় করতে পারেননি।

তবে ভোটদানে অনেকের অনীহা
এবং সিদ্ধান্তহীন বিপুল সংখ্যক ভোটার থাকায় ল্য পেন রানঅফের দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই টিকে
আছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

জনমত জরিপগুলোতে কোনো প্রার্থীর
প্রতিই বিপুল সংখ্যক ভোটারের সমর্থন দেখা যায়নি। যে কারণে, এ ভোটের ফল অনেকাংশেই নির্ভর
করছে ভোটারদের সেই অংশের ওপর, যারা ম্যাক্রোঁর ৫ বছরের সফলতা-ব্যর্থতা বিবেচনা করে
তার বদলে ডানপন্থি কারও ওপর আস্থা রাখবেন কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ল্য পেন জিতলে ফ্রান্সের
রাজনীতিতে সেই ওলট-পালট দেখার সম্ভাবনা থাকবে, যেমনটা হয়েছিল ব্রেক্সিট নিয়ে যুক্তরাজ্যে
হওয়া গণভোট ও যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালে হওয়া নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট
হওয়ার পর।

রোববার স্থানীয় সময় সকাল
৮টা থেকে শুরু হওয়া এই ভোট শেষ হবে রাত ৮ টায়।

“দুজনেরই ভয়াবহ সব দুর্বলতা আছে। প্রতি দুই ভোটারের
মধ্যে একজনেরও বেশি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে উদ্ধত মনে করে, আর অর্ধেকের কাছেই মরিন ল্য
পেন ভীতিকর,” বলেছেন জরিপসংস্থা এলাবের বার্নার্ড সানানে।

পাঁচ বছর আগে এই ধরনেরই
এক নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা ৪৪ বছর ম্যাক্রোঁ সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, জনসমক্ষে মুসলিম
নারীদের মাথায় স্কার্ফ পরার বিরোধী ল্য পেন ক্ষমতায় বসলে ফ্রান্সে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে
পারে।

অন্যদিকে ৫৩ বছর বয়সী ল্য
পেন তার প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

“রোববারের প্রশ্ন খুবই সোজা, ম্যাক্রোঁ না ফ্রান্স,” বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের এক শহরে করা সমাবেশে বলেন ল্য পেন।

তার বক্তব্য ধ্বনিত হচ্ছে
অনেক ভোটারের কণ্ঠেও।

“তিনি জনগণের নিকটে আছেন। তিনি সত্যি সত্যিই জনগণকে
ক্রয়ক্ষমতা দিতে পারেন, হাসাতে পারেন এবং তাদেরকে অক্সিজেন দিতে পারেন,” সমাবেশের পর এমনটাই বলেন ৪৩ বছর বয়সী কারারক্ষী এরিকা হারবিন।

এই ভাষ্যের সঙ্গে দ্বিমত
আছে গিসলেইন ম্যাডেলির মতো ভোটারদের একাংশের।

প্রথম দফার ভোটে ম্যাডেলির
পছন্দের প্রার্থী ছিলেন কট্টর বামপন্থি জা লুক মিনশঁ; ল্য পেন প্রেসিডেন্ট হলে ‘তিনি যে কী করেন’, সে চিন্তাতেই ডানপন্থি এই প্রার্থীকে ভোট দেবেন
না বলে জানান এ হেয়ারড্রেসার।

“তার জয়কে বিপর্যয়কর মনে হচ্ছে, কারণ তিনি বর্ণবাদী।
আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, আমার জন্য, সন্তানদের জন্য,” বলেছেন
৩৬ বছর বয়সী এ নারী।

ল্য পেন তার বিরুদ্ধে ওঠা
বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলছেন, তার অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে
ফরাসী নাগরিকদের জন্য সামাজিক গৃহায়ন, চাকরি। বিদেশিদের যেসব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে
সেগুলো বাতিল করে তিনি ধর্ম, জাতীয়তা নির্বিশেষে ফ্রান্সের সব নাগরিকের অত্যাধুনিক
সুবিধা নিশ্চিত করতে চান।

দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি
লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ল্য পেন শেষ পর্যন্ত পেরে উঠবেন না বলেই মনে করছেন জরিপসংস্থা
হ্যারিস ইন্টারঅ্যাকটিভের জঁ-ডেনিয়েল লেভে।

ল্য পেনের জয়ী হতে হলে,
ভোটারদের বড় অংশের চাহিদায় বড় ধরনের পরিবর্তন লাগবে, বলেছেন তিনি।

ম্যাক্রোঁ জয়ী হলেও দ্বিতীয়
মেয়াদে তার জন্য অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ব্যবসাবান্ধব নানান সংস্কার, অবসরের
বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫-তে নিয়ে যাওয়াসহ তার বেশকিছু নীতি তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়বে
বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

আবার ল্য পেন জিতলে তিনি
ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনেক নীতিই বদলে ফেলতে পারেন, যা তাৎক্ষণিক বিক্ষোভের
জন্ম দিতে পারে। তার এসব পদক্ষেপ ইউরোপ এবং বাইরেও ঝড় তুলতে পারে।

তবে যে-ই জিতুক, তাকে প্রথম
যে বড় চ্যালেঞ্জে উৎরাতে হবে, তা হল জুনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভালো করা। সেটা না
হলে, তাদের কর্মসূচিগুলোর বাস্তবায়ন ঝুলে যেতে পারে।