রোববার ঢাকার ইস্কাটনের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) ‘বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক: বর্ধিত সহযোগিতা ও অগ্রসর অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিশেষ অতিথি হয়ে অংশ নেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে র্যাবের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন বক্তব্যে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও অনুষ্ঠানে ছিলেন।
পিটার হাস কথা বলার আগে অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে র্যাবের কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য দেন আল-মামুন।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ফাইল ছবি
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, “আমরা সফলভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদ মোকাবেলা করেছি, মাদক নির্মূলে, মানব পাচার ও অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করেছি।
“আমরা মূলত সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করি, যে দুটি যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারমূলক কাজের অংশ। মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখা এবং এলিট ফোর্সের সাবলীল কার্যক্রমে স্বার্থে আমরা পারস্পরিক সম্পর্কে নতুন উচ্চতায় নিতে চাই।”
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, “নিরাপদ ও সুরক্ষিত কমিউনিটি গড়তে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা চাই। তারা ইতোপূর্বে আমাদের সাথে কাজ করেছে এবং আমাদের ক্যাম্পাসে তাদের সাথে অনেক আলোচনাও হয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পরবর্তী সম্পৃক্ততাও চাই।”
র্যাব ও সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা ‘মুখে বললেই’ উঠবে না, ঢাকাকে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হবে: মোমেন
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ডিসেম্বর মাসে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার উপর ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে দ্বিপক্ষীয় যে কোনো আলোচনায় মুখ্য হয়ে উঠছে তা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ঢাকা। ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে টেলিফোনেও এ বিষয়ে আলাপ হয় মোমেনের।
এরপর চলতি মাসের শুরুতে ওয়াশিংটনে ব্লিংকেনের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে র্যাবের ভুমিকার কথা তুলে ধরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তবে নিষেধাজ্ঞা যে এখনই উঠছে না, সেটাও পরে বলেছিলেন তিনি।
রোববারের অনুষ্ঠানে মোমেনের উপস্থিতিতে র্যাব প্রধানের বক্তব্যের পর পিটার হাসের বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়, নিষেধাজ্ঞা উঠছে না। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দুই শর্তের কথা অবশ্য তিনি বলেছেন, তবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
পিটার হাস। ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, “সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও জবাবদিহি নিশ্চিত ছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি র্যাব চাই, যারা সন্ত্রাস প্রতিরোধে যেমন কঠোর থাকবে, তেমনি কঠোর থাকবে মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে।”
পিটার হাস স্পষ্ট করেন, র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা সহযোগিতা পেয়ে যাবে বাংলাদেশ।
“র্যাবের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মানে এই নয় যে, আমরা জোরদার আইন প্রয়োগ বিষয়ে আমাদের ইতোমধ্যে স্থাপিত শক্তিশালী নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে পারব না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাব।”
র্যাবের পরে গঠিত পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।