এতে দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দরের জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতা) এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে।
পর্ষদ সভায় সবুজ সংকেত পেলে শিগগির বন্দর চেয়ারম্যান এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন।
লন্ডনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ক গবেষণায় এখনকার চেয়ে আরও বড় আকারের জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভেড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার আরিফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সভায় এটি অনুমোদিত হলে বড় জাহাজ প্রবেশে করানোর বিষয়ে ঘোষণা আসবে।
বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বন্দরে বেশি ড্রাফটের জাহাজ আনার বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। একটি প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। যাচাই বাছাইয়ের পর এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে।
দীর্ঘ দিন থেকে বন্দরের জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানো নিয়ে আলোচনা চলছে। বড় ড্রাফটের জাহাজ ঢুকতে না পারা এ বন্দরের অন্যতম প্রধান বাধা। এজন্য ড্রেজিং করে নাব্য বাড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের এবং ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে কর্তৃপক্ষ বন্দরে প্রবেশকারী জাহাজের ড্রাফট ও দৈর্ঘ্য বাড়িয়েছিল। এর আগে আরও কম ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করতে পারত।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান ড্রাফট অনুযায়ী বন্দরে আসা একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজে করে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের সমতুল্য) কন্টেইনার পরিবহন হয়ে থাকে। ড্রাফট বাড়লে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজে করে ২৬০০ থেকে ২৮০০ টিইইউএস কন্টেইনার আনা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি
আগের চেয়ে একটু হলেও বড় আকারের জাহাজ বন্দরে ভিড়লে একসঙ্গে বেশি পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। আমদানি ও রপ্তানিকারকরা এর উপকার পাবেন। ফলে দেশের অর্থনীতিতেও এর কিছুটা সুফল মিলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমদানি-রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে বেশি ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করানোর বিষয়ে দাবি ছিল। লন্ডনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছর ধরে জরিপ চালিয়ে বন্দরে বেশি ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে বলে জানায়।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেশি ড্রাফট ও দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানোর বিষয়ে রোববার বন্দরের ১৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিস্তারিত জানানো হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার আরিফুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর চ্যানেল নিয়ে সামগ্রিক একটি জরিপ এবং গবেষণা কাজ করছে লন্ডনভিত্তিক ‘এইচ আর ওয়েলিং পোর্ট’। তাদের জরিপের প্রতিবেদনে বন্দরে বেশি ড্রাফট ও দৈর্ঘ্যের জাহাজ প্রবেশের বিষয়টিও ছিল।
বন্দর চ্যানেল হয়ে বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বন্দরে আমরা বিদ্যমান অবস্থায় যেভাবে ড্রেজিং বা তত্ত্বাবধানের মধ্য দিয়ে কাজ করি সে হিসেবে বড় জাহাজ আসা যাবে। তারা বলেছে ১০ মিটারের বেশি ড্রাফটের এবং ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ আসতে পারবে।“
জরিপকারী প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের তথ্য তুলে ধরবে এবং যারা বর্হিনোঙ্গর থেকে জাহাজ নিয়ে আসার কাজ করেন- সেসব পাইলট ও সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসা শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে তিনি জানান।
“এরপর চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সভায় এটি অনুমোদিত হলে বড় জাহাজ প্রবেশে করানোর বিষয়ে ঘোষণা আসবে,” যোগ করেন কমান্ডার আরিফুর।
চট্টগ্রাম বন্দরের মোট ১৯টি জেটি আছে। এর মধ্যে চালু থাকা ১৭টিতে জাহাজ ভেড়ে। আর কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) মোট সাতটি জেটিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং (ওঠানামা) হয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি
বন্দর কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য মতে, বিদ্যমান অবস্থায় সিসিটি, এনসিটিসহ মোট ১২টি জেটিতে নতুন করে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, বড় জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করলে বেশি পণ্য যেমন আসবে, তেমনি রপ্তানিতেও সুবিধা হবে। এতে করে অর্থ সাশ্রয় হবে অনেক, বাঁচবে সময়ও।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বেশি ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে ভেড়ার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি অবশ্যই আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য ভালো সংবাদ। এতদিন বেশি ড্রাফটের জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে অবস্থান করত।
“সেখানে কিছু কন্টেইনার লাইটার করে জাহাজের ড্রাফট কমিয়ে বন্দরে আনা হত। ড্রাফট বাড়ানোর ফলে সময়ও বাঁচবে অর্থও সাশ্রয় হবে, দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
এ উদ্যোগের পাশাপাশি বন্দরে জেটির সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন সুজন।
চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি
বন্দরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে আমদানি, রপ্তানি ও খালি মিলিয়ে মোট ৩২ লাখ এক হাজার ৫৪৮ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। গেল বছরে বন্দরের জেটিগুলোতে জাহাজ এসেছে চার হাজার ২০৯টি।
কন্টেইনারের বাইরে কার্গোতে পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন। কার্গো পণ্যের ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশের বেশি এবং জাহাজের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশের মতো।
দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। কার্গো ও কন্টেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে এ হার প্রায় ৯৮ শতাংশ।