আহত ওই ব্যক্তির অস্ত্রোপচারটি আদতে করেছেন ইউক্রেইনের চিকিৎসক ওলেকসান্দার।তিনি এর আগে কখনওই এমন জটিল অস্ত্রোপচার করেননি। তবে সপ্তাহখানেক আগে ইউক্রেইনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসক ডেভিড নটকে এরকম একটি অস্ত্রোপচার করতে দেখেছিলেন তিনি।
সেকথা স্মরণ করেই অস্ত্রোপচারের সময় ওলেকসান্দার তার স্মার্টফোনে আহত ব্যক্তির ক্ষতস্থানের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক নটের কাছে। যুদ্ধাহতদের কীভাবে চিকিৎসা করতে হয় ইউক্রেইনের চিকিৎসকদেরকে সে প্রশিক্ষণ দিয়ে কিছুদিন আগেই লন্ডনে ফিরে গেছেন নট।
ওলেকসান্দারকে সাহায্য করতে অভিজ্ঞ এই ব্রিটিশ চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন এবং কীভাবে তা করতে হবে সেটিও একটি ভিডিওতে বলে দেন। নটের নির্দেশনা মেনে ধাপে ধাপে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক ওলেকসান্দার।
তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় তার অনেক নার্ভাস লাগছিল এবং ধীরে ধীরে তিনি কাজটি করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সফলভাবে অস্ত্রোপচার শেষ হয়েছে। এজন্য নটকে ধন্যবাদ।
প্রফেসর নটের জন্ম যুক্তরাজ্যের পশ্চিম ওয়েলসের একটি শহরে। লন্ডনের সেন্ট ম্যারিস হাসপাতালের এই চিকিৎসক এর আগে আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ মিশনে তিনি ইউক্রেইনে ছিলেন।
যুদ্ধাহত ইউক্রেইনীয়দের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে নট উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিম ইউক্রেইনের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করার পর লন্ডনে ফিরে গেছেন।
বিবিসি জানায়, ইউক্রেইন থেকে ফেরার পর প্রথম দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড নট বলেছেন, যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে গোলায় ঘায়েল কারাটা সবচেয়ে খারাপ পন্থা। কারণ, এর আঘাত ভয়ানক ক্ষতি ডেকে আনে। এটি শরীরের নরম কোষ, হাড়, বাহু, হাত ও পায়ের পাতা মারাত্মকভাবে জখম করে।
এ ধরনের বিস্ফোরণের শিকার হলে তা স্থায়ী ক্ষতি করে। এমনকী অঙ্গহানিও ঘটতে পারে। বারোট্রমা, থার্মোবারিক বা ভ্যাকুয়াম বোমার মতো অস্ত্রের আঘাতে মস্তিষ্ক, ফুসফুসে রক্তপাত হওয়াসহ কানের পর্দাও ফাটতে পারে।
ভিডিও কলে অস্ত্রোপচারে সহায়তা করা অবশ্য চিকিৎসক নটের কাছে নতুন নয়। সিরিয়ায় যুদ্ধ চলাকালেও তিনি লন্ডনে তার কার্যালয় থেকে স্কাইপের মাধ্যমে আলেপ্পোতে অস্ত্রোপচারে সহায়তা করেছিলেন।
নট বলেন, ইউক্রেইনে ১১৫টি হাসপাতালে রাশিয়া গোলা ছুড়েছে। হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়াটাও যুদ্ধের এক বাস্তব হাতিয়ার, যদিও এ এক জঘণ্য কাজ।
ইউক্রেইনে থাকাকালে নট যুদ্ধাহতদের অস্ত্রোপচারের সময় যতটা সম্ভব অনেক বেশি চিকিৎসককে অপারেশন থিয়েটারে রাখতেন। চামড়ার গ্রাফটিং, বেরিয়ে যাওয়া হাড় ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চিকিৎসা কীভাবে করতে হবে তা তিনি হাতেকলমে দেখিয়ে দিতেন।
ইউক্রেইন ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও ডেভিড নট ফাউন্ডেশন ও মানবিক ত্রাণবিষয়ক গ্রুপ ইউওএসএসএম ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাহতদের চিকিৎসায় কাজ করছে। জটিল অস্ত্রোপচারগুলোতে দূর থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করছেন নট।
ইউক্রেইনের চিকিৎসক ওলেকসান্দার বলেন, “বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে এমন একজন চিকিৎসকের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যখন বলেন সব ঠিক হয়ে যাবে, তখন আমরা স্বস্তি পাই।”