ক্যাটাগরি

ঢাবির চারুকলার ছাত্র-শিক্ষক মিলে ‘যৌন হেনস্থা’র অভিযোগ

এ অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. আখতারুজ্জামান সিনবাদের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের মধ্যে একটির সঙ্গে চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী পুলক বাড়ৈ এবং সাবেক শিক্ষার্থী শুভ বাড়ৈ জড়িত বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের।

এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানসহ চারুকলা অনুষদের ডিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ যাচাই করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। এর অংশ হিসেবে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ কমিটি করার কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, “প্রাথমিক যাচাইয়ে ঘটনার সত্যতা মিললে এ অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠানো হবে।“

তবে এসব ঘটনা অস্বীকার করেন শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আখতারুজ্জামান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজকে (সোমবার) ডিন অফিস থেকে আমার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে।

“আমি বলব ঘটনাটা টোটালি মিথ্যা এবং বানোয়াট। এরকম কোনো কিছু আমার সঙ্গে ঘটেনি। হয়ত কেউ আমার শিক্ষকতা, আমার ক্যারিয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এধরনের কারসাজি করছে।”

অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষার্থী দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৪ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রার পরবর্তী মুহূর্তে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে সেখানকার বন্ধুদের সঙ্গে বুয়েটের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বসে ছিলেন।

“এমন সময় শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আখতারুজ্জামান সিনবাদ বুয়েট শিক্ষার্থীকে দেখে ক্রমাগত বখাটেদের মত শিস দিতে থাকে। একপর্যায়ে নিপীড়িত শিক্ষার্থী তার দিকে সরাসরি তাকালে তিনি লম্পটদের মত অশ্লীল মুখভঙ্গি ও চোখটিপে দিতে থাকেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করার চেষ্টা করেন।“

লিখিত অভিযোগে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, “পরবর্তীতে তিনি (আখতারুজ্জামান সিনবাদ) হুমকি ধামকি দিয়ে কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেন এবং নারী শিক্ষার্থীর সাথে থাকা বন্ধুকে হলে থাকে কি না- সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাপূর্বক দমনমূলক আচরণ করেন এবং তিনি যে শিক্ষক সেটা স্মরণ করিয়ে তার এহেন আচরনের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।“

শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ও চারুকলার অনুষদের ডিনের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ ১৩ জন শিক্ষার্থী সই করেছেন।

অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কখনই কাম্য নয় এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য অপ্রীতিকর। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বে ১৩ এপ্রিল রাতে জয়নুল শিশুকলা নিকেতন কক্ষে আখতারুজ্জামান সিনবাদ চারুকলা অনুষদের প্রথমবর্ষের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) তিন নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ‘বিকৃত ও অপ্রীতিকর আচরণ’ করেন বলে অভিযোগ উঠে। সেখানে ভাস্কর্য বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী পুলক বাড়ৈ এবং সাবেক শিক্ষার্থী শুভ বাড়ৈও ওই শিক্ষার্থীদের ‘যৌন হেনস্তা’ করেন বলে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারপার্সন সঞ্জয় চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা অনুষদ খতিয়ে দেখছে।”

ডিন অধ্যাপক নিসার বলেন, “আমরা অভিযোগ যাচাই করে দেখছি। আমাদের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি আছে, প্রিভেন্স কমিটি আছে- ওই কমিটির সদস্যদের নিয়ে আমরা একটা ফ্যাক্ট চেকিং কমিটি করেছি।

“যারা অভিযোগ উত্থাপন করেছিল- তিনদিন ধরে তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজনের ইন্টারভিউ নিয়েছি। আজকে ওই শিক্ষককে চিঠি ইস্যু করেছি। আমরা তার বক্তব্য চেয়েছি। উনি লিখিতভাবে এবিষয়ে তার বক্তব্য জানাবেন। আর অভিযুক্ত দুজন ছাত্রের মধ্যে একজন বাড়ি চলে গেছে। একজনের সঙ্গে জুমে কথা বলেছি। আরেকজন সাবেক স্টুডেন্ট, তারটাও জুমে নেওয়ার চেষ্টা করছি।”

প্রাথমিক যাচাইয়ে ঘটনার সত্যতা মিললে এ অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

ডিন বলেন, যারা অভিযোগ করেছে এবং যারা স্বাক্ষী ছিলেন প্রাথমিকভাবে আমরা তাদের বক্তব্য নিচ্ছি। আমরা ফ্যাক্ট খুঁজছি। খুঁজে যদি দেখি এটার ভিত্তি আছে, তখন আমরা তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

“এটা ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে প্রেরণ করব। ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে ভাইস চ্যান্সেলর প্রধান এবং সদস্য সচিব আমাদের প্রক্টর। আর সব ডিনরা ওটার সদস্য। সেখানে ওটার সিদ্ধান্ত হবে।“