রোববার
দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তালা সরকারি কলেজের একটি কক্ষে নির্যাতন করা
হয় বলে এই শিক্ষার্থী ও তার স্বজনদের অভিযোগ।
২০
বছর বয়সী এই ছাত্র তালা সদরের জাতপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং চলতি বছর জাতপুর
টেকনিক্যাল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সব বিষয়ে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ
হয়েছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য খুলনায় একটি কোচিং সেন্টারে প্রস্তুতি
নিচ্ছেন।
তাকে
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নেওয়া হয়েছে।
এই
ঘটনায় এই শিক্ষার্থীর বাবা তালা থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলায়
আসামিরা হলেন তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ ইদ্রিসের ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের
সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব (২৫), হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের গণেশ চক্রবর্তীর ছেলে
উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী (৩২), তালার বাসিন্দা
ছাত্রলীগকর্মী জে আর সুমন (২৫), তালার মহান্দি গ্রামের ছাত্রলীগকর্মী জয় (২৪) ও তালা সদরের নজির শেখের ছেলে
ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ হাসান উৎস (২৪)।
মামলায়
ওই কলেজছাত্রের বাবার অভিযোগ, রোববার দুপুর ১টার দিকে তার ছেলের পূর্ব পরিচিত
নাহিদ হাসান উৎস মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায় তালা সরকারি কলেজের সামনে। সেখান থেকে তার
ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় কলেজের মধ্যে একটি কক্ষে।
“সেখানে
নিয়ে মারপিট ও মাথা ন্যাড়া করে দেয়; উলঙ্গ করে ভিডিও ধারণ করে। তারপর আমার স্ত্রীর
কাছে ফোন করে ছেলেকে ফিরে পেতে দুই লাখ টাকা নিয়ে কলেজের সামনে যাওয়ার কথা বলে। ফোনের
ওই প্রান্ত থেকে মারধরের কারণে ছেলের চিৎকার শোনাচ্ছিল তারা।”
সন্ধ্যার
দিকে তাদের স্বজনরা ছেলেকে উদ্ধার করে তালা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে
বাড়ি আনা হয়।
রাতে
থানায় গেলে সেখানেই তাকে মামলা না করতে ওই ছেলেরা হুমকি দিয়েছে বলে এই শিক্ষার্থীর
বাবার অভিযোগ।

কী
কারণে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“আমি ধারণা করছি আমার ছেলের নতুন মোটরসাইকেলটি তারা নিয়ে নিতে চেয়েছিল। সে কারণেই
এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।”
ওই কলেজছাত্র
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাহিদ হাসান উৎস আমার পূর্ব পরিচিত। তালা
বাজারে যাতায়াত সুবাদে পরিচয়। আমাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আকষ্মিক মারপিট শুরু করে
আকিবসহ অন্যরা। কলেজের পশ্চিম পাশে একটি রুমের মধ্যে নিয়ে টানা ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে
নির্যাতন চালায়। হাতে, পায়ে নির্মমভাবে মারপিট করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এরপর
বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। তারপর বাড়িতে ফোন দিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
করে তারা। এরা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।”
তিনি আরও
বলেন, “যে রুমের মধ্যে আমাকে আটকে রেখেছিল সেটা সম্ভবত কলেজের ছাত্রবাস কক্ষ। সেটি
কলেজের মধ্যেই অবস্থিত। ওই রুমের মধ্যে মারপিট করার জন্য বেল্ট, লাঠিসোটা এখনও
রয়েছে। ওখানে নিয়ে টর্চার করে বলে মনে হয়েছে। সেখান থেকে আমার চাচাতো ভাইয়েরা
আমাকে উদ্ধার করেছে।”
তালা
সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ হুমায়ূন কবীর বলেন, “এ ধরণের কোনো
খবর আমি জানি না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজে টর্চার সেল করেছে – এটিও আমার জানা
নেই।”
সাতক্ষীরা
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক বলেন, “ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী এমন
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি এখনও
কেউ জানায়নি। খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে,
তালা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার কথা ভেবে সোমবার বেলা ১২টার
দিকে তাকে বাড়িতে নেওয়া হয়েছে বলে তার বাবা জানান।
তিার
অভিযোগ, হাসপাতালে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার ছেলেকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।
তিনি
বলেন, “আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গত রাতে থানাতেও আমাকে মামলা না করার
জন্য হুমকি দিয়েছিল।”
তালা
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম বলেন, “এ ঘটনায় ‘অভিযুক্তরা’ পলাতক রয়েছে।
মামলার বাদী ‘নির্যাতিত’ শিক্ষার্থীর বাবা এজাহারের সঙ্গে ভোটার আইডি কার্ড জমা না
দেওয়ায় মামলাটি রেকর্ড করা এখনও সম্ভব হয়নি। হুমকি-ধামকি দিচ্ছে এমন ঘটনা আমার
জানা নেই।”
সাতক্ষীরা
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি আমাকে আগে কেউ
জানায়নি। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে জেলা
ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হবে। যেহেতু এ ঘটনায় মামলা হয়েছে সেহেতু ঘটনাটি
যেন সুষ্ঠু তদন্ত হয় এবং দোষীরা যেন শাস্তি পায়। কোনো নিরাপরাধ নেতাকর্মী যেন
হয়রানির শিকার না হয়।”
সাতক্ষীরা
পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের
বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”