ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন সোমবার এই রায় ঘোষণা
করেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামিদের ৪ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন তিনি।
ঢাকার ক্রীড়াক্লাবগুলোতে
ক্যাসিনো বন্ধে অভিযানের মধ্যে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় দুই ভাই
এনু ও রুপনকে। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন
থানায় ১২টি মামলা হয় তখন। তার মধ্যে এই প্রথম কোনো মামলার রায় হল।
দণ্ডিত বাকি আসামিরা হলেন-
মেরাজুল হক ভূঁইয়া শিপলু, রশিদুল হক ভূঁইয়া, সহিদুল হক ভূঁইয়া, জয় গোপাল সরকার, পাভেল
রহমান, তুহিন মুন্সি, আবুল কালাম, নবীর হোসেন শিকদার ও সাইফুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে শিপলু, রশিদুল,
সহিদুল ও পাভেল মামলার শুরু থেকে পলাতক। এনু-রুপনসহ কারাগারে থাকা ৬ আসামিকে রায়ের
সময় আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা তুহিনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের
সময় ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতা এনু ও
রুপন ভাই, তাদের এক কর্মচারী এবং তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব।
সেই অভিযানে সিন্দুক
ভর্তি নগদ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা, আট কেজি সোনা এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়,
যেগুলো জুয়ার টাকায় গড়া সম্পদ বলে ওই সময় র্যাব জানিয়েছিল।
এর মধ্যে এনুর কর্মচারী
আবুল কালাম আজাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় দুই কোটি টাকা। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা
জিয়াউল হাসান ২৫ নভেম্বর ওয়ারী থানায় এ মামলা করেন।
ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার গেণ্ডারিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার পুরান ঢাকার লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১১৯/১ হোল্ডিংয়ে মমতাজ ভিলায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি সিন্দুক থেকে ২৬ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে র্যাব।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, এনু
ও রুপন দীর্ঘদিন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক
হয়েছেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পরিচালিত হলে তারা তাদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য কিছু
অর্থ গোপন করার জন্য কালামের কাছে রেখেছিলেন। কালাম তা নিজের কাছে রাখেন, যা মানিলন্ডারিং
প্রতিরোধ আইনের অপরাধ।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২০
সালের ২১ জুলাই ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ
ছাদেক আলী।
গত বছরের ৫ জানুয়ারি আসামিদের
বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারক। মামলার বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষে ২০ জন সাক্ষীর
মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
গত ৬ এপ্রিল এ মামলার
রায় ঘোষণার তারিখ রাখা হলেও বিচারক ছুটিতে থাকায় তা পিছিয়ে ২৫ এপ্রিল নতুন দিন রাখা
হয়েছিল।
ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের
শেয়ারহোল্ডার এনু গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং তার ভাই রুপন ভূঁইয়া
থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর দল থেকে তাদের বহিষ্কার
করা হয়।
ক্যাসিনোবিরোধী সেই অভিযানে
যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কয়েকজন নেতার জুয়ার কারবারের খবর প্রকাশ্যে আসে।
এরপর ক্যাসিনোর মাধ্যমে
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ওই সময় ক্যাসিনো ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের
মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০টির বেশি মামলা করেছিল সংস্থাটি।
পুরনো খবর
এনু-রুপনের অর্থপাচার মামলার রায় সোমবার
এনু-রুপনের আরেক বাড়িতে পাঁচ সিন্দুকে ২৬ কোটি টাকা
‘ভুয়া পাসপোর্টে পালানোর চেষ্টায়’ ছিলেন এনু ও রুপন
ক্যাসিনোকাণ্ডে পলাতক এনু ও রুপন গ্রেপ্তার
সিন্দুকে জুয়ার টাকা: তিন থানায় ৭ মামলা