ক্যাটাগরি

কোন আইনে রত্নাকে ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হল, প্রশ্ন পুলিশকে

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রশ্ন তুলেছে তারা। এই সংগঠনগুলোর নেতাদের মধ্যে আইনজীবীও ছিলেন।

কলাবাগান থানা ভবনের জন্য তেঁতুল তলা মাঠটি বন্দোবস্ত দেওয়া হলে স্থানীয়দের নিয়ে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর কর্মী সৈয়দা রত্না।

রোববার সকালে পুলিশ পাহারায় মাঠটিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু হলে সেখানে গিয়ে ফেইসবুক লাইভ শুরু করেছিলেন তিনি।

তখন পুলিশ রত্না ও তার ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়, ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ১৩ ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, “গতকাল (রোববার) দিনভর প্রতিবাদের মুখে মাঝ রাতে থানা কর্তৃপক্ষ সৈয়দা রত্মা ও তার ছেলেকে ছেড়ে দিলেও মাঠ রক্ষায় তিনি আর আন্দোলন করবেন না বলে বেআইনি মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।

“আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সৈয়দা রত্মা ও তার নাবালক পুত্রকে কোনো রকম আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, কোনো আইনসিদ্ধ অভিযোগ ছাড়াই দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টার বেশি সময় আটক রাখা দেশের সংবিধান ও আইনের ন্যক্কারজনক লঙ্ঘন ও বেআইনি।”

কলাবাগান থানা পুলিশের এই আচরণ নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক চর্চার অধিকার ও মানবাধিকারের পরিপন্থি বলে বলে দাবি করেন তিনি।

ইকবাল বলেন, “এরকম অবৈধ আটক ও মুচলেকা গ্রহণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা এবং এজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”

সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে রোববার ১৩ ঘণ্টা কলাবাগান থানায় আটক রাখার পর ছাড়া হয়।

সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে রোববার ১৩ ঘণ্টা কলাবাগান থানায় আটক রাখার পর ছাড়া হয়।

সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “কোনো অভিযোগ ছাড়া সম্পূর্ণ বেআইনি মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে ছাড়া হয়েছে। এরকম মুচলেকা নিয়ে ছাড়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই। এটা শুধু ইচ্ছাকৃত নয়, পরিকল্পিতও। এটা করা হয়েছে শুধু এলাকার মানুষজনকে ভয় দেখানোর জন্য।”

পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা কেউ নিরাপদ বোধ করছি না। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে ওদের..। পকেটের মধ্যে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেওয়া, যখন-তখন তুলে নিয়ে যাওয়া …”

সংবাদ সম্মেলনে অধিকারকর্মী খুশি কবির, বাপার সহসভাপতি স্থপতি মো্বাশ্বের হোসেন ছিলেন।

এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজনে বাপা, বেলা ছাড়াও ছিল এলএলআরডি, ব্লাস্ট, আসক, গ্রীন ভয়েজ, আমরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠি, হিউম্যান রাইটস সোসাই।

পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন সোমবার তেঁতুল তলা মাঠে গিয়েও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সেখানে স্থানীয়রাও ছিলেন, যারা সেখানে শিশুদের খেলার স্থান হিসেবে মাঠটি রক্ষা করার দাবি জানান।

সোমবার রত্না ও তার ছেলেকে আটকের কারণ ব্যাখ্যা করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউ মার্কেট জোনের সরকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেছিলেন, “ওই জায়গাটি সকল নিয়ম মেনে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে (কলাবাগান থানা ভবনের জন্য)। সৈয়দা রত্না সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাকে আপাতত আটক করা হয়েছে।”

সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “আমি ঘটনার যতটুকু জেনেছি, তারা (রত্না ও তার ছেলে) লাইভ ভিডিওতে এসে অনেক কিছু প্রচার করছিল। যেগুলো নাকি একটু অসঙ্গতিপূর্ণ।

“সে জন্য বারবার নিবৃত করার পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন থামাতে পারেনি, তখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়েছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

কলাবাগানের মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারী রত্নাকে ১৩ ঘণ্টা পর ছাড়ল পুলিশ
 

কলাবাগানে শিশুদের খেলার মাঠ তেঁতুল তলায় এখন পুলিশের স্থাপনা উঠানোর জন্য প্রাচীর নির্মাণ হচ্ছে।

কলাবাগানে শিশুদের খেলার মাঠ তেঁতুল তলায় এখন পুলিশের স্থাপনা উঠানোর জন্য প্রাচীর নির্মাণ হচ্ছে।

কলাবাগানে দরকার ‘৬টি মাঠ’

ঢাকায় শিশুদের খেলার স্থানের চরম সঙ্কটের মধ্যে কলাবাগানের মাঠটিতে কোনো ভবন না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।

রোববারের ঘটনা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে সোমবার এক বিবৃতিতে আইপিডি বলেছে, কলাবাগান এলাকায় জনসংখ্যা অনুপাতে আরও মাঠ প্রয়োজন।

“আদর্শগতভাবে নগর পরিকল্পনায় ২ থেকে ৩ হাজার মানুষের জন্য ন্যূনতম একটা খেলার মাঠ তৈরি করতে হয়, যার আয়তন ন্যূনতম এক একর (তিন বিঘা) হওয়ার কথা। আমাদের ঢাকা শহরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি পাড়া-মহল্লায় প্রতি ১২,৫০০ মানুষের জন্য দুই থেকে তিনটি খেলার মাঠ থাকা উচিৎ, যার মোট আয়তন হবার কথা তিন একর।

“অতি ঘন এলাকা কলাবাগানে আনুমানিক ৩০ হাজারের মতো মানুষের বসবাস। প্রতি ৫ হাজার মানুষের জন্য একটি খেলার মাঠ দেওয়া হলেও এই এলাকায় ৬টি খেলার মাঠ থাকবার কথা, আকার-আয়তনে যা ৬ থেকে ১০ একর হবার কথা। তেঁতুল তলা মাঠের আয়তন এক বিঘার মতো, ফলে এই স্থানটিও পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী শিশু-কিশোরদের খেলবার মতো পর্যাপ্ত নয়।”

কলাবাগানের এই তেঁতুল তলা মাঠ রক্ষায় সৈয়দা রত্নার নেতৃত্বে নানা কর্মসূচি পালন হচ্ছে। ফাইল ছবি

কলাবাগানের এই তেঁতুল তলা মাঠ রক্ষায় সৈয়দা রত্নার নেতৃত্বে নানা কর্মসূচি পালন হচ্ছে। ফাইল ছবি

শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধূলার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “রাজধানী ঢাকা শহরে দিন দিন শিশু-কিশোরদের বিনোদন এবং খেলাধুলার স্থান সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। যে কয়েকটি হাতে গোনা খেলার মাঠ অবশিষ্ট আছে, সেগুলোর অধিকাংশই দখল কিংবা নানাবিধ কারণে খেলার মাঠ হিসেবে আর ব্যবহার করবার সুযোগ নেই। তেঁতুল তলা মাঠটি কলাবাগানের শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা করবার অন্যতম স্থান, অনেকের জন্যই একমাত্র স্থানও বটে।”

তেঁতুল তলা মাঠে থানা না করে অন্য কোনো বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করবার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছে আইপিডি।

বিবৃতিতে বলা হয়, “এই খেলার মাঠ রক্ষার আন্দোলন নিয়ে স্থানীয় জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান রাষ্ট্রের জন্য যেমন কল্যাণকর নয়, তেমনি কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও রাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলবার পক্ষে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।

“আইপিডি মনে করে, কলাবাগানের তেঁতুল তলা মাঠটির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতার নিরসনপূর্বক এলাকার শিশু-কিশোরদের খেলবার জন্য ভূমি অধিগ্রহণের করবার মাধ্যমে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় খেলার মাঠ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। একইসাথে বর্তমানে মাঠের চারপাশে দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।”

মাঠ না থানা, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী