রাত জাগলে টুকটাক খাওয়ার জন্য মন আনচান
করে। তবে ঠিকমতো খেয়ে সময় মতো শুয়ে পড়ার পর গভীর রাতে যদি খিদা নিয়ে ঘুম ভাঙে তবে এর
ব্যাখ্যা হয়ত অন্যরকম হতে পারে।
বিশেষ করে পরপর বেশ কয়েক রাত এরকম হলে
বুঝতে হবে দেহ চাইছে অন্য কিছু। আর সেই অন্য কিছুর ব্যাখ্যাই দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।
শরীর আরও খাবার চায়
“যদি খিদা নিয়ে ঘুম ভাঙে তবে বুঝতে হবে
সারাদিনে হয়ত পর্যাপ্ত খাওয়া হয়নি,” বলেন ওয়াশিংটনে অবস্থিত ব্রেভস্পেস নিউট্রিশনের
প্রতিষ্ঠাতা ও পুষ্টিবিদ ক্যাথরিন মেটজেলার।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে
তিনি আরও বলেন, “নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস বা খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ আনার ফলে সঠিক সময়ে
খাবার খেতে ভুলে গেলে এরকম হতে পারে।”
খাওয়ার নিয়ন্ত্রণ মানে এই নয় না খেয়ে
থাকা। বরং যখন শরীর চাইবে তখনই খাবার দিতে হবে। ফলে দেহ পাবে শক্তি, দুর্বলতা অনুভব
হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
মেটজেলার বলেন, “আর এই ক্ষেত্রে জোর দিতে
হবে পর্যাপ্ত প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি অর্থাৎ ‘কমপ্লেক্স কার্ব’ ধরনের খাবারের দিকে। সেই সঙ্গে থাকবে
বিভিন্ন রকম সবজি।”
তিনি আরও বলেন, “ঘুমানোর সময় দেহের ঘ্রেলিন
হরমোনের মাত্রা কমে আসে। এই হরমোন খিদার অনুভূতি দেয়। আর লেপটিন হরমোনের মাত্রা বাড়ে,
যা দেয় পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি। ফলে সারারাত নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম হয়। সারাদিন কম খাওয়া
হলে রাতের এই হরমোনের মাত্রা বিপরীত ক্রিয়া হলেই খিদার অনুভূতিতে ঘুম ভেঙে যেতে পারে।”
রক্তে শর্করার স্বল্পতা
“কম খাওয়া হলে স্বাভাবিকভাবেই গ্লুকোজ
বা রক্তে শর্করার মাত্রা কম হবে। এর ফলে আক্ষরিক অর্থেই ভালো ঘুম হবে না। খিদার অনুভূতি
দেখে দেবে। ফলে শরীর ঘুম থেকে জেগে উঠবে,” ব্যাখ্যা করেন মেটজালার।
তিনি আরও বলেন, “এই সমস্যা ডায়াবেটিসে
আক্রান্তদের মাঝে বেশি দেখা গেলেও স্বাভাবিক মানুষের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
মেটজেলারের পরামর্শ হল, “ঘুমানোর আগে
হালকা নাস্তা করা এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। হতে পারে সেটা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার,
পূর্ণশষ্যের রুটি, দই বা পনির।
তবে সারাদিন পর্যাপ্ত খাওয়ার ব্যাপারেই
জোর দেন এই পুষ্টিবিদ।
সন্ধ্যায় ব্যায়ামের পর পর্যাপ্ত না খাওয়া
অনেকেই সন্ধ্যা-রাতে শরীরচর্চা করেন।
কেউ বা করেন খেলাধুলা।
“অধিক খাটনির ব্যায়ামের পর পর্যাপ্ত খাবার
না খেলেও রাতে বেলা খিদার চোটে ঘুম ভেঙে যেতে পারে,” বলেন যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ
মিশেল রিকার।
ব্যায়ামের পর কার্ব ও প্রোটিন ধরনের খাবার
খাওয়ার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।
তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যকর কার্বোহা্ইড্রেইট
শরীরের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে খিদার অনুভূতি কম হয়। আর প্রোটিন শুধু পেশি গড়তেই
সহায়তা করে না, পাশাপাশি পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতিও দেয়।”
স্বাস্থ্যকর কার্ব বলতে তিনি শুঁটি, সবজি
ও পূর্ণশষ্যের তৈরি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।
মানসিক চাপ থেকে অন্ত্রের মাইক্রোবায়ামের বিশৃঙ্খলা
রিকার বলেন, “ঘুমচক্র নিয়ন্ত্রণ করে মেলাটনিন
হরমোন। আর এই হরমোন দেহে, অভ্যস্ত ঘুমের সময়ে এবং অন্ধকারে নিঃসরণ হয়। যদি পর্যাপ্ত
পরিমা্ণে হরমোন না নিঃসরণ হয় তাদের ঘুমের সমস্যা হবে।”
আরও সমস্যা হয়, যখন এর ফলে ঘ্রেলিনে মাত্রা
বাড়ে। আর সেখান থেকে অন্ত্রের মাইক্রোবায়ামে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে এক ধরনের মানসিক
চাপেরও তৈরি হয়।
রিকার পরামর্শ দেন, “অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়াদের
সুস্থ রাখতে মানসিক চাপ কমাতে হবে। খেতে হবে দই-জাতীয় খাবার। পাশাপাশি মিষ্টি-ধরনের
খাবার, ভাজাপোড়া খাবার ছাড়তে হবে। বিশেষ করে ঘুমানোর আগে।”
ভিটামিন ডি’র অপর্যাপ্ততা
সূর্যালোক আর খাবার হল ভিটামিন ডি’র উৎস। যদি এই ভিটামিনের অভাব থাকে তবে ঘুমচক্রে
ব্যাঘাত ঘটে।
ব্যাখ্যা করে রিকার বলেন, “কারণ লেপটিন
হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে ভিটামিন ডি। যা খিদার অনুভূতিতে প্রভাব রাখে।”
তাই ভিটামিন ডি’র অভাব পূরণ করতে সকালে
সূর্যালোকে থাকার পাশাপাশি সামুদ্রিক খাবার, মাশরুম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ দুগ্ধজাত খাবার
খাওয়ার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।
আরও পড়ুন