সোমবার রাজধানীর প্রধান সড়কের সঙ্গে লাগায়ো সড়কগুলো গাড়ির দীর্ঘ সারিতে অচল হয়ে ছিল দিনের বড় অংশজুড়ে। এতে দৈনন্দিন কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। মৃদু তাপপ্রবাহে ভ্যাপসা গরমে অসুস্থবোধ করার কথাও বলেছেন অনেকেই।
এদিন ঢাকায় প্রবেশের পথগুলো থেকে শুরু করে নগরীর প্রধান সব সড়কে দিনের প্রথমভাগে শুরু হওয়া যানজট সময় যত বেড়েছে, ততই তা প্রকট হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতেই ঠাঁয় বসে থাকতে হয়েছে রাস্তায় বের হওয়া নাগরিকদের।
রাজধানীর মালিবাগ, রামপুরা, কাকরাইল, মগবাজার, মহাখালী, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট, মীরপুর রোড, মীরপুর, আগারগাঁও, কাফরুল, ধানমণ্ডি, সায়েন্স ল্যারেটরি, তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডাসহ উত্তরার দিকেও দীর্ঘ যানজেটর চিত্র দেখা গেছে।
দিনের বড় অংশজুড়েই মহাখালী ও মগবাজার ফ্লাইওভারের উপরে ও নিচে গাড়িগুলো বিভিন্ন সময়ে থেমে ছিল অথবা থেমে থেমে চলতে দেখা গেছে। বিকালের দিকে হাতিরঝিলের গুলশানের সড়কের জট মধুবাগ ব্রিজ ছাড়িয়ে যেতে দেখা গেছে।
ফাইল ছবি
দুই বছর পর স্কুল খোলা আর রোজার শুরু থেকেই রাজধানীতে এমন যানজট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে অফিস যাওয়া আসার সময় সকাল ও বিকালে দীর্ঘ জটে পেরেশানি বাড়ছে নগরবাসীর। ২০ এপ্রিলের পর স্কুল ছুটি হলেও জট থেকে নিস্তার মেলেনি।
ঈদের কেনাকাটায় নগরবাসীর সঙ্গে রাজধানীর আশেপাশের এলাকা থেকে আসা মানুষের সংখ্যা যুক্ত হয়ে যানজট যেন আরও বেড়েছে।
আর সোমবার তা আরও প্রকট হয় বাংলাদেশ সফররত ডেনিশ রাজকুমারীর রাজধানীতে কয়েক দফার চলাচল। এর সঙ্গে উত্তরা ও মিরপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভে অনেক রাস্তায় গাড়ির সারি লম্বা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সফররত ডেনিশ ক্রাউন প্রিন্সেস ম্যারি এলিজাবেথ ঢাকায় অবস্থানকালে পাঁচবার মুভমেন্ট করেছেন। এ পরিস্থিতিতে তার নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিভিন্ন সড়কে যানচলাচল বিঘ্নিত হয়।
“আবার উত্তরায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের রাস্তায় অবস্থানের কারণে যানচলাচলে দারুণ বিঘ্ন ঘটে। এসব পরিস্থিতি উত্তরণের অতিরিক্ত পুলিশ রাস্তায় নামিয়ে যানজট নিরসনে চেষ্টা চালিয়েছে।“
সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে সিএনজিতে মহাখালীর তিতুমীর কলেজে আসতে সময় লেগেছে আড়াই ঘন্টা। চালক রহমাতুল্লাহ বলেন, “রোজার মাসের শুরু থেকে যানজট ঢাকায় আছেই। তবে আজকের যানজট অন্যসব দিনের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আমি যাত্রী নিয়ে সকাল ১১টায় উঠেছি, গন্তব্যে পৌঁছেছি দেড়টায়। যে ভাড়ায় যাত্রী এনেছি পুরোটাই আমার লসের খাতায়।”
সিএনজির মালিককে আজকে ভাড়ার টাকা দেওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। হতাশ কণ্ঠে বললেন, “এভাবে যানজট হলে কীভাবে কামাই করব, জানি না।”
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবাসের চালক হামিদ জানান, গুলশানে থেকে প্রতিদিনই তার কাকরাইলে যেতে সাধারণত সময় লাগে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট। আজকে (সোমবার) সময় লেগেছে দুই ঘণ্টার উপরে।
ফাইল ছবি
হামিদ জানান, পুলিশের সার্জেন্টের কাছে শুনলাম যে, ভিআইপি মুভমেন্ট আছে বলে দীর্ঘক্ষণ এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত সড়কটি অনেকটা সময় বন্ধ রাখায় এই যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
যানজটে দুর্ভোগে পড়েছেন সব বাহনের যাত্রীরাই। গাড়ির নড়াচড়া না থাকায় অনেকে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা রিকশা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছেন। গন্তব্যে পৌঁছাতে এর বিকল্প ছিল না বলেই মন্তব্য তাদের।
বেইলি রোড়ের বাসিন্দা ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, ‘‘বাচ্চাদের নিয়ে পল্টনে চায়না মার্কেটে এসে বিপাকে পড়েছি। রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরব, রওনা হয়ে দেখি রিকশা চলে না, কাকরাইলের কাছে থেমে আছে তো আছেই। পরে নেমে পায়ে হেঁটে বাসায় গেছি। অসহ্য গরমে এ যানজটে আমার দুই ছেলেই অসুস্থ হয়ে গেছে।”
মহাখালীর কাছে বাস থেকে নেমে হেঁটে আসার সময় সোহরাব হোসেন বলেন, “মগবাজার ফ্লাইওভারে মিনিবাসে ছিলাম। প্রখর রোদের মধ্যে আর বাসে বসে থাকতে পারছিলাম না। সেজন্য হেঁটেই মহাখালীতে এসেছি। যাব বনানীতে। যতই হাঁটছি, দেখছি আমার মত অনেকেই হাঁটছেন। এভাবে তো গাড়িতে বসে থাকা যায় না।”
আরেকজন যাত্রী জানান, বেলা দুইটার পরে আগারগাঁও থেকে যাত্রা করে বাড্ডা যেতেই ঘণ্টা পার হয়ে যায় তার। মহাখালী ও গুলশান এলাকায় সব ধরনের যান আটকে ছিল।
তিনটার পরের এ যানজট ইফতারের আগ পর্যন্ত ছিল। গরমে গাড়িতে থাকাও কষ্টকর হওয়ায় অনেকে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করে গন্তব্যের দিকে।
মগবাজার থেকে মহাখালী আসতেই দুই ঘণ্টার মত সময় লেগেছে তারিকুলের। গাজীপুরগামী একটি বাসে উঠেছিলেন তিনি। এফডিসি ক্রসিংয়ের কাছে গাড়ি একদম স্থবির হয়ে গেলে নেমে যান তিনি। স্বগোক্তির সুরে বলছিলেন, “গাড়ির নড়াচড়া নেই। এক অস্থির অবস্থা। রোজার এসময়ে অস্বস্তির গরমে কাহিল হয়ে পড়েছিলাম।”
দুর্বিষহ এ যানজটে ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে রাজধানীতে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ। টানা তিন দিন ধরে অসহনীয় গরম অনুভূত হচ্ছে সর্বত্র।
ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় রাজশাহী, পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাজশাহী, ঈশ্বরদী ও চুয়াডাঙ্গায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিরাজমান এ তাপপ্রবাহ আরও দুয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:
বাড়ছে ছোট গাড়ি, বাড়াচ্ছে যানজট
দু’একদিনেই যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে, আশা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
সকালে-বিকালে নগরজুড়ে ‘গাড়ি যেন নড়েই না’